ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

২০ জন শিক্ষার্থীকে মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা করে চিরবিদায় নিলেন মাইলস্টোনের শিক্ষিকা মেহরিন

প্রকাশিত: ০০:১৮, ২২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০০:২২, ২২ জুলাই ২০২৫

২০ জন শিক্ষার্থীকে মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা করে চিরবিদায় নিলেন মাইলস্টোনের শিক্ষিকা মেহরিন

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শিক্ষিকা মেহরিন চৌধুরীর বীরত্ব ও আত্মত্যাগ এখন দেশের মানুষের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করছে। প্রাণপণ চেষ্টা করে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা করলেও, শেষরক্ষা হয়নি তাঁর নিজের।

সোমবার, ২১ জুলাই দুপুরে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত এবং শতাধিক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদের বেশিরভাগই ছুটে গেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

৪৬ বছর বয়সী মেহরিন চৌধুরী শতভাগ দগ্ধ অবস্থায় ওই ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে সাতটার দিকে তার মৃত্যু হয়। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি, তার মৃত্যুর খবর সামাজিক মাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। শোক ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকজুড়ে। শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা আর তাঁর সাহসিকতার গল্পে কালো হয়ে যায় ফেসবুকের দেয়াল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার পরপরই ক্লাসরুম থেকে শিক্ষার্থীদের দ্রুত সরিয়ে ফেলেন মেহরিন। তাদের নিরাপদে বের করে দিতে গিয়ে নিজে আর সময়মতো বের হতে পারেননি। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া এক সেনা সদস্য বলেন, “ম্যাডাম ভিতরে ঢুকে গিয়ে বাচ্চাগুলারে বের করে দিছেন, তারপর উনিই বের হতে পারেন নাই।”

মেহরিনের উদ্ধার করা শিক্ষার্থীদের একজন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছোয়া। তার বাবা সুমন বলেন, “আমরা জানি, ম্যাডাম না থাকলে আমাদের ছোয়া বাঁচত না।” ছোয়ার মামা জানান, “আমি খালি চুল পড়ে থাকতে দেখেছি, অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে দুজন আর্মি টেনে বাইরে নিয়ে আসে। অনেক খুঁজে পরে জানতে পারি, এক ম্যাডাম নাকি ছোয়াকে বের করতে সাহায্য করেছিল।”

উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বলেছে, “ম্যাডাম বারবার বলছিলেন, দৌড়াও, ভয় পেও না। আমি আছি।”

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষিকা মেহরিনের সাহসিকতায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাণ রক্ষা সম্ভব হয়েছে।

মানবিকতা, সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে রইলেন মেহরিন চৌধুরী। শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচিয়ে নিজে হারিয়ে গেলেন—একজন শিক্ষিকার এমন আত্মত্যাগ কোনোভাবেই ভোলার নয়।

আসিফ

×