
এক ছিনতাইকারী চাপাতির ভয় দেখিয়ে এক যুবকের কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছেনÑ এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের রাসেল স্কয়ারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে শুধু রাতে নয়, দিনের বেলাতেও নির্বিঘ্নে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে চাঞ্চল্য জাগানোর মতো ঘটনা দ্রুত জেনে যায় বিপুল সংখ্যক মানুষ। ঘটনা নেতিবাচক হলে শুরু হয় সরকারের সমালোচনা। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিমূলক চিত্র জনমনে শঙ্কা জাগায়। পাঠকদের নিশ্চয়ই কিছুকাল আগের ওই ঘটনা মনে আছে। সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক নারী। তাঁর পরনে ছিল শাড়ি, হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ এবং পাশেই ছিল একটি ট্রলি ব্যাগ। হঠাৎ সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার তাঁর সামনে আসে। চলন্ত অবস্থাতেই গাড়িটির সামনের অংশের বাঁ পাশের জানালা দিয়ে একজন ঝুঁকে বেরিয়ে ছোঁ মেরে টান দেয় ভ্যানিটি ব্যাগটি। সঙ্গে সঙ্গে ওই নারী মাটিতে পড়ে যান এবং ব্যাগসহ ওই নারীকে গাড়ির সঙ্গে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে ছিনতাইকারীরা। শিউরে ওঠার মতো এ ঘটনা প্রমাণ করে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা কতখানি।
ছিনতাইকারী কেউ পুলিশের হাতে ধরা পড়লে কিংবা গণধোলাইয়ের শিকার হলে তাদের মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসে অন্যরা। গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেলে তাদের ছাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট আইনজীবী আছেন, যারা বাকিতে তাদের মামলা পরিচালনা করেন। ছিনতাইকারীরা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আইনজীবীর বিল পরিশোধ করে।
ছিনতাই ঢাকার নিয়মিত ঘটনা। সভ্য সমাজে ছিনিয়ে নেওয়ার এমন পেশা চলতেই পারে না। অথচ বিষয়টি বেশ পেশাদার আকারই ধারণ করেছে ঢাকায়। খুব কম ব্যক্তিই আছেন যারা দীর্ঘদিনের ঢাকাবাসে একবারের জন্য হলেও নিজে ছিনতাইকারীর পাল্লায় পড়েননি, কিংবা ছিনতাই হতে দেখেননি। আমরা বারবার বলছি অভিনব পদ্ধতিতে ছিনতাই, সেটিও সময়ের ব্যবধানে ‘ডাল-ভাত’ হয়ে গেছে। নতুন নতুন অভিনবত্ব দিয়ে ছিনতাইকারীরা ঢাকাবাসীকে ‘বিস্ময়াভিভূত’ করে রাখছে। ঢাকার ছিনতাইকারীরা যথেষ্ট বেপরোয়া ও কৌশলী হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার একটি পৃথক বিশেষ টিম জরুরি হয়ে উঠেছে যারা বহুল ছিনতাইয়ের স্পটগুলোতে ঝটিকা অভিযান চালাবে। তাতে যদি নাগরিকদের কিছুটা স্বস্তি আসে। জনমনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, পুলিশ কী করছে? এলাকাভিত্তিক টহল কেন জোরদার করা হচ্ছে না? প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান। সেটাতেই যদি ব্যর্থতা দেখা দেয় তাহলে কর্তাব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা, শাস্তি প্রদানসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প কী?
প্যানেল/মো.