
ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞান ও গবেষণার জগতে বাংলাদেশের গর্ব হয়ে উঠেছেন রাজশাহীর তরুণ বিজ্ঞানী এস. দানিশ কাদির। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র দানিশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে বায়োমেডিকেল গবেষণায় কাজ করছেন এবং দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই দানিশ কাদিরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তার বাবা প্রফেসর আবু হানিফ শেখ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছোট। প্রাথমিক শিক্ষা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে এবং পরবর্তীতে রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন। জীবনের মোড় ঘোরানো এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালে—তখনই তিনি হারান মাকে। এই ব্যক্তিগত শোকই পরবর্তীতে তার গবেষণার পেছনে গভীর মানবিক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে অনন্য কৃতিত্বের সাথে পড়াশোনা শেষ করে ২০২১ সালে দানিশ উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি টেক্সাস রিও গ্র্যান্ডে ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজিতে মাস্টার্স করছেন। সেখানে গবেষণা সহকারী হিসেবে যুক্ত থেকে তিনি ক্যান্সার চিকিৎসা, জিন সম্পাদনা (CRISPR/CAS), বায়োইনফরমেটিক্স, এবং ন্যানোটেকনোলজির মাধ্যমে ওষুধ পরিবহণ প্রক্রিয়ার ওপর উল্লেখযোগ্য গবেষণা করছেন।
ইতোমধ্যে তার গবেষণা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ (AACR), ফেডারেশন অব ইউরোপিয়ান বায়োকেমিক্যাল সোসাইটিজ (FEBS), এবং রয়েল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রির মতো বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
একজন উদ্ভাবনী মনের অধিকারী দানিশ ন্যানো-MRI & 3D অর্গানোইড সেল কালচারে পেটেন্ট করেছেন এবং কানাডায় উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য কস্ট-ইফেক্টিভ ও সময়সাশ্রয়ী মডেল তৈরি করেছেন।
তবে শুধুমাত্র গবেষণা নয়, দানিশ কাদিরের ভবিষ্যত পরিকল্পনাও মানবসেবামূলক। মায়ের প্রতি ভালোবাসা আর দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি বাংলাদেশে একটি আধুনিক ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ার স্বপ্ন দেখেন, যেখানে গরিব মানুষ কম খরচে উন্নত চিকিৎসা পাবে। এরই মধ্যে বগুড়ায় নিজস্ব জমি নির্ধারণ করে রেখেছেন এই হাসপাতালের জন্য।
ল্যাবের বাইরেও তার সৃজনশীলতার ছাপ স্পষ্ট। তিনি দক্ষ ওয়েব ও গ্রাফিক ডিজাইনার, পাশাপাশি ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রতি রয়েছে গভীর অনুরাগ। একাধারে একজন গবেষক, শিল্পী, এবং মানবসেবী এই তরুণ আজকের প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল অনুকরণীয় আদর্শ।
রাকিব