
চলতি বছরে প্রথমবারের মতো সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৮০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে লেনদেনের গতি বাড়ছে। এর মাধ্যমে গতবছরের ২ সেপ্টেম্বরের পর বাজারটিতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় রয়েছে বেশি সংখ্যাক প্রতিষ্ঠান। এরপরও এই বাজারটি মূল্যসূচক বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পরও মূল্যসূচক বাড়ার কারণ গ্রামীণফোন, সিটি ব্যাংকের মতো বড় মূলধনী কিছু কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মূল্যসূচকে বড় প্রভাব রাখে। ফলে দাম বাড়ার তালিকা বড় হলেও মূল্যসূচক বেড়েছে। এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৭৯ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
কিন্তু লেনদেনের শেষদিকে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। এতে বিক্রির চাপ বেড়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। অবশ্য এর মধ্যেও সূচকে সব থেকে বড় প্রভাব রাখা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় প্রায় দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠান থাকলেও সবকটি মূল্য সূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
ডিএসইতে দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২২৪টির। আর ৫৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৮৫টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১০৩টির দাম কমেছে এবং ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ১৬টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৬০টির দাম কমেছে এবং ৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পঁচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৬টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬১টির এবং ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৭টির দাম কমেছে এবং ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮৬০ কোটি ৭০ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭৭৫ কোটি ৯০ টাকা। এ হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৮৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গতবছরের ২ সেপ্টেম্বরের পর বা সাড়ে ৯ মাসের মধ্যে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হলো।
লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভ‚মিকা রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক। কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৩১ লাখ টাকার। ১৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সিটি ব্যাংক, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, ওরিয়ন ইনফিউশন, লাফার্জাহোলসিম বাংলাদেশ, শাইনপুকুর সিরামিক এবং প্রাইম ব্যাংক।
সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৯৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৫৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২১টির এবং ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
প্যানেল মজি