
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।
গোপালগঞ্জে এনসিপি’র পদযাত্রা ও সমাবেশ কেন্দ্রিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা গোপালগঞ্জের জন্য কেয়ার করেন। একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে কেন্দ্র প্রাণহানিসহ যে কয়েকটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, সেটা যাতে আর ভবিষ্যতে না হয় সেজন্য তিনি প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে নির্দেশ দিবেন। তাই তিনি ঘটনা সম্পর্কে জানার জন্য আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। আজকে আমরা এ বিষয়ে একটি প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের জন্য এসেছি। সরকার এ ঘটনার গভীরে যাবে এবং এটা থেকে আমাদের ভবিষ্যতে শিক্ষা গ্রহন দরকার। এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করার। যেটা হবে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন। মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ পরিদর্শনে এসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক প্রেস—ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, একজন বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন হবে এবং সেখানে শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই থাকবেন না, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। দু’এক দিনের মধ্যে কমিশন গঠন করা হবে। তারা পুরো বিষয়টি তদন্ত করবেন। এজন্য তাদেরকে তথ্য—উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সকলকে আহবান জানান।
প্রেস—ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার একটি দল—নিরপেক্ষ সরকার। এটা শহীদদের রক্তের ওপরে প্রতিষ্ঠিত একটি সরকার, ২০—৩০ হাজার আত্মত্যাগের সরকার। সুতরাং গোপালগঞ্জও আমাদের কাছে যা, আমাদের প্রত্যেকের নিজের জেলাও আমাদের কাছে তাই — মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সেই বার্তাটাই আপনাদেরকে দিয়েছেন। আমরা আপনাদেরকে আশ^স্ত করতে চাই, কোন নিরীহ, নিরাপরাধী, সাধারণ মানুষকে কোনও ধরণের হয়রানী করা হবে না। আর যারা অন্যায় করেছেন বা পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছেন বা আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের উপর হামলা করেছেন, তারা তো অবশ্যই আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবেন। এছাড়া ব্যবসা—বাণিজ্যসহ স্বাভাবিক জীবন—যাপন যাতে বাধাগ্রস্থ না হয় সেজন্য আমরা চেষ্টা করব।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি গণতন্ত্র চর্চা করার। আগে তো গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি, বিরোধী মত হলেই দমন করা হয়েছে, আয়না—ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, নানারকম শাস্তি দেয়া হয়েছে। এখন আমরা চাচ্ছি, সে পরিস্থিতিটা পরিবর্তন করতে। এমন একটি পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে চাই, যেখানে সবাই নির্ভয়ে তাদের মত প্রকাশ করতে পারবেন। তবে সে মতামত যেন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে হয়। এমন কিছু করবেন না যাতে নিজেদের জন্য নিজেদের দল বা মতাদর্শের জন্য ক্ষতি করে। আমরা আশাকরি এভাবে সহনশীলতার পরিবেশ গড়ে উঠবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের সামনে একটি জাতীয় নির্বাচন আছে। নির্বাচনটিকে আমরা এমন একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই যেখানে মানুষ নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে, পোলিং এজেন্টরা নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে থাকতে পারেন এবং ভোটারদের পরীক্ষা—নিরীক্ষা করতে পারেন এবং ভোট প্রকাশ্যে গণনা ও ঘোষণা হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহনশীলতা প্রয়োজন। নির্বাচনটা আমাদের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচন প্রক্রিয়াটা যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে আমাদের সমস্যাটা আরও বাড়বে। তাই আমরা সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সমাজের সুশীল সমাজ, সরকারি কর্মকর্তা, সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ সবার কাছে আমরা সহায়তা চাই। আমরা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবো যেখানে মানুষের জীবনযাত্রা কোন অবস্থাতেই ব্যাহত হবে না। একটি উৎসবমূখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে আমরা ক্ষমতা দিয়ে যেতে পারবো এই প্রত্যাশা করি। এ প্রত্যাশা পূরণে আপনাদের সবার সহযোগিতা কামনা করি।
প্রেস—ব্রিফিংয়ের শেষদিকে, রক্তক্ষয়ী ওই সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলিতে বহু নিরীহ মানুষকে হয়রানী করা হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষও গ্রেফতার আতংকে রয়েছেন — এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, কোন নিরীহ, নিরাপরাধী, সাধারণ মানুষকে কোনও ধরণের হয়রানী করা হবে না। মামলা হলেই সেটা চূড়ান্ত নয়। প্রতিটি মামলাই পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণ করা হবে। এখন অনেক আধুনিক পদ্ধতি রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা সে বিষয়গুলো অবশ্যই দেখবেন।
প্রেস—ব্রিফিং চলাকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি—সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মন্ত্রী—পরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লে. জেনারেল (অব:) আব্দুল হাফিজ, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দীন আহমেদ এবং জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান (যুগ্মসচিব) সহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে উপদেষ্টাবৃন্দ গোপালগঞ্জ সার্কিট—হাউস হয়ে প্রথমে জেলা কারাগার পরিদর্শনে যান এবং সংঘর্ষের দিনে কারাগারে হামলার বিষয়ে খোঁজ—খবর নেন। পরে সেখান থেকে সবাই হেঁটে আসেন সেদিনের (১৬ জুলাই) এনসিপি’র সমাবেশস্থল গোপালগঞ্জ পৌরপার্কে। সেখানে পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টাবৃন্দ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলার সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা করেন। পরে সাংবাদিকদেরকে প্রেস—ব্রিফিং দেয়া হয়।
মিরাজ খান