ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামো প্রশ্নে ফের মতানৈক্য

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান থাকতে  পারবেন না ॥ ড. রীয়াজ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:২০, ২৩ জুলাই ২০২৫

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান থাকতে  পারবেন না ॥ ড. রীয়াজ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফের দেখা দিয়েছে মতানৈক্য। একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান থাকা বা না থাকা নিয়ে মতভেদ থাকলেও এ ব্যাপারে ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হতে হলে দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে আসতে হবে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো আপত্তি জানালেও কমিশন সিদ্ধান্তে বলেছে, এই সিদ্ধান্তে জাতীয় সনদে কোনো দল চাইলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারবে। 
এদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন কাঠামো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলেও একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৭তম দিনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল- প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একটি  সমন্বিত প্রস্তাব তৈরি এবং নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, দুর্নীতি দমন কমিশন ও ন্যায়পাল নিয়োগ সংক্রান্ত বিধিমালা। 
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া। সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদে দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না বলে একমত হয়েছে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ রাজনৈতিক দল ও জোট। কিছু দল এ বিষয়ে ভিন্নমত ব্যক্ত করেছে। ওই সকল দল জাতীয় সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারবেন। তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অনুরোধ যারা নোট অব ডিসেন্ট দিতে উৎসাহী, যদি আপনারা প্রয়োজন মনে করেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। কিন্তু আমরা অতীত যেভাবে নোট অব ডিসেন্টের কথা বলা আছে, সেভাবে জাতীয় সনদে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারবে। এটা সিদ্ধান্ত হিসেবে আপনাদের জানালাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কমিশন প্রস্তাবিত একই ব্যক্তি প্রধামমন্ত্রী, সংসদ প্রধান ও দলীয় প্রধান হতে পারবে না, এমন প্রস্তাবের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সমর্থন জানালেও বিরোধিতা করে বিএনপিসহ কয়েকটি দল। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একজন হতে পারলেও তাকে দলীয় প্রধানের পদ ছাড়তে হবে এমন প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানে বিএনপি, এলডিপি, লেবার পার্টি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং আম জনতার দল একই ব্যক্তিকে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা করার পক্ষে মত দেয়। তবে দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী করার বিপক্ষে মত দেন জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অন্য দলগুলো। সর্বশেষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব কমিশনের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন কাঠামোর নানা ইস্যুতে দীর্ঘ আলোচনা হলেও একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। সংলাপে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নেতৃত্বে বাছাই কমিটির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব করে কমিশন। কমিটির বিষয়ে দলগুলো একমতও ছিল। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে সংশোধিত প্রস্তাব দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কমিটির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ না করে গেলে সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর বিধান বলবৎ হবে। তবে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে বাদ রাখা হবে। অর্থাৎ কোনো ভাবেই রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে পারবেন না। 
১৩তম সংশোধনীতে বিচার বিভাগ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের কথা বলা আছে। এই ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াত একমত হয়েছে। তবে এনসিপিসহ অন্যান্য দল আপত্তি জানানোর পাশাপাশি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি দলের পাশাপাশি সংসদের অন্যান্য দল, এমনকি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সার্চ কমিটির সদস্য প্রস্তাবের ক্ষমতা প্রদানের বিধান রাখার সুপারিশ করেন। ফলে সিদ্ধান্ত ছাড়াই এই আলোচনা শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দল একমত। এর গঠন কাঠামো নিয়ে আলোচনায় আরও কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে ২০ জুলাই রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কমিশন একটি সংশোধিত ও সমন্বিত প্রস্তাব সকল দলের কাছে প্রেরণ করে। 
উক্ত প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দলসমূহকে মতামত দিতে বলা হয়। কমিশনের অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে বিএনপি। এছাড়া প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে (র‌্যাঙ্কড চয়েস পদ্ধতি) এখনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আগামী বৃহস্পতিবার পুনঃআলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংলাপ শেষে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন ও কারা এই সরকারের প্রধান হবেন সেই ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী একমত হয়ে যাওয়ার কারণে অন্য দলের নতুন প্রস্তাব পড়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে প্রস্তাব ছিল বিচার বিভাগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানে না রাখা। এখানে যুক্তি ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচার বিভাগ থেকে রাখা হলে তখন বিচার বিভাগ দলীয়করণের ঘটনা ঘটতে পারে। 
 

প্যানেল মজি

×