
ক্রিকেটে আরও একটি স্মরণীয় সাফল্য তুলে নিল টাইগাররা। শ্রীলঙ্কাকে হারানোর এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে এবার নিজেদের টি২০ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতল (২-০) বাংলাদেশ।
শ্বাসরুদ্ধকর দ্বিতীয় ম্যাচে লিটন দাসের দল তুলে নিল ৮ রানের নাটকীয় জয়। সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার শোককে শক্তিতে রূপ দিয়ে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় মেয়েরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে এক মিনিটের নীরবতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় খেলা। টস জিতে ফিল্ডিং নেন পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগা। ২০তম ওভারের শেষ বলে ১৩৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। স্রোতের বিপরীতে ১ চার ও ৫ ছক্কায় ৫৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন জাকের আলি অনিক। জবাবে ২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ১২৫ রানে অলআউট হয় সালমান আলি আগার পাকিস্তান। দেশটির বিপক্ষে ২০০৭ থেকে দীর্ঘ দেড় যুগে ষষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এসে প্রথম সাফল্যের স্বাদ পেল টাইগাররা। তৃতীয় ম্যাচ বৃহস্পতিবার।
শেরেবাংলার স্লো-উইকেটে ১৩৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে শুরু থেকেই চাপে পড়ে পাকিস্তান। পঞ্চম ওভারে ১৫ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন ৫ ব্যাটসম্যান! আন্তর্জাতিক টি২০তে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম রানে প্রতিপক্ষের ৫ উইকেট তুলে নেয়। পাকিস্তানও এই সংস্করণে এর আগে এত কম রানে ৫ উইকেট হারায়নি। পাকিস্তানের আগের রেকর্ড ১৬/৫, গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
বাংলাদেশের আগের রেকর্ড ২৪/৫। ২০২১ সালে পাপুয়া নিউগিনির প্রথম ৫ উইকেট বাংলাদেশ পেয়েছিল ২৪ রানে। ৩০ রানে ষষ্ঠ এবং ৪৭ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় সফরকারিরা।
শুরুর সাত ব্যাটারই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। এর পরও ম্যাচ জমিয়ে তোলেন ফাহিম আশরা। ৮ নম্বরে নেমে ৩২ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় করেন ৫১ রান। আব্বাস আফ্রিদি ১৩ বলে ১৯, আহমেদ দানিয়েল ১১ বলে ১৭। বাংলাদেশের হয়ে শরিফুল ইসলাম ৩, শেখ মেহেদি ও তানজিম সাকিব নেন দুটি করে উইকেট। এদিন দুটি পরিবর্তন এনে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ।
বাদ পড়েন বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন আহমেদ। তাদের জায়গায় ফেরেন আরেক বাঁহাতি ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। পাওয়ার প্লের মধ্যে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেনÑ নাঈম শেখ, পারভেজ হোসেন ইমন, লিটন দাস ও তাওহীদ হৃদয়। প্রথম ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৩ রান। দ্বিতীয় ওভারেই ধরাশায়ী নাঈম। বিদায় নেন ৭ বলে ৩ রান করে।
ফাহিম আশরাফের করা বল উইকেটরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। টাইমিং নড়বড়ে হওয়ায় উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ হারসিকেই ক্যাচ তুলে দেন। পঞ্চম ওভারে ফেরেন ৮ রান করা লিটন। সালমান মির্জাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে হাসান নেওয়াজের ক্যাচ হন অধিনায়ক। একই ওভারে খাতা খোলার আগেই রানআউট তাওহীদ হৃদয়।
টি২০তে এ নিয়ে তৃতীয়বার শূন্য রানে আউট হলেন তিনি। ষষ্ঠ ওভারে পারভেজ হোসেন ইমনও ফেরেন সাজঘরে। আগের ম্যাচে জয়ের নায়ক এদিন করেছেন ১৩ রান। অভিষিক্ত পেসার আহমেদ দানিয়ালের বলে ফাহিম আশরাফকে ক্যাচ দেন মিড অনে। পঞ্চম উইকেটে জাকের আলী অনিক ও শেখ মেহেদী ৪৯ বলে ৫৩ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ২৫ বলে ৩৩ রানে মেহেদি ফিরলে ভাঙে জুটি। ১৪তম ওভারে মোহাম্মদ নওয়াজকে দারুণ এক ছক্কা মেরেছিলেন, পরের বলে আবারও ছক্কা মারতে গিয়ে হাসান নওয়াজকে ক্যাচ তুলে দেন মেহেদি। ইনিংসে ছিল ২টি করে ছক্কা ও চার।
১৬ তম ওভারে আহমেদ দানিয়ালের বলে কাট করতে গিয়ে ইনসাইডএজ হয়ে বোল্ড হন শামীম হোসেন। ১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ৪ বলে ৭ রান করেন তানজিম হাসান সাকিব। মির্জার বলে সাকিবের ক্যাচ নিয়ে রেকর্ড গড়লেন ফখর জামান। পাকিস্তানের হয়ে টি২০তে সর্বোচ্চ ক্যাচ এখন ফখরের (৫৩টি), ছাড়িয়ে গেছেন বাবর আজমকে (৫২)। ৪ বলে ৮ রান করেন রিশাদ হোসেন। শেষ ওভারে ২টি ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে ১৩৩ রানে পৌঁছে দেন জাকের। আব্বাস আফ্রিদির শেষ বলে ক্যাচ আউট হলেও তুলে নিয়েছেন টি২০তে নিজের তৃতীয় ফিফটি। ৪৮ বলে করেন ৫৫ রান। ইনিংসে ৫টি ছক্কা ও ১টি চার। পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সালমান মির্জা, আব্বাস ও দানিয়াল নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ ১৩৩/১০ (২০ ওভার; নাঈম ৩, পারভেজ ১৩, লিটন ৮, হৃদয় ০, জাকের ৫৫, মেহেদি ৩৩, শামীম ১, তানজিম ৭, রিশাদ ৮, শরিফুল ১, মুস্তাফিজ ০*; সালমান মির্জা ২/১৭, আশরাফ ১/২০, দানিয়েল ২/২৩, নাওয়াজ ১/১৯, আফ্রিদি ২/৩৭) পাকিস্তান ১২৫/১০ (১৯.২ ওভার; ফখর ৮, আইয়্যুব ১, হারিস ০, সালমান ৯, হাসান নওয়াজ ০, মোহাম্মদ নওয়াজ ০, খুশদিল ১৩, ফাহিম ৫১, আব্বাস ১৯, দানিয়েল ১৭; মেহেদি ২/২৫, শরিফুল ৩/১৭, তানজিম ২/২৩) ম্যাচসেরা ॥ জাকের আলি (বাংলাদেশ)।
প্যানেল মজি