
দৈনিক জনকণ্ঠ
বাংলাদেশের চিনি শিল্প দীর্ঘদিন ধরেই এক দুর্দশাগ্রস্ত অধ্যায় পার করছে। স্থানীয় উৎপাদন হ্রাস ও আন্তর্জাতিক বাজারে নির্ভরতার কারণে দেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে পরিশোধিত চিনি আমদানি করতে হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাস্টমস তথ্যমতে, ২০২৪ অর্থবছরে দেশে এক লাখ ৩৯ হাজার টন পরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে এজন্য ধারণা দিতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।আবার কখনোবা বিপুল পরিমান চিনি আমাদনির ফলে আর্থিকভাবে হিমসিম খেতে হয়। কিন্তু একটা প্রজেক্ট পাল্টে দিতে পারে চিনি/গুড় শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
রেললাইন শুধু ট্রেন চলার রাস্তা নয়, বরং হতে পারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব কৃষিনীতির একটি বড় উদাহরণ। যদি আমরা রেললাইনের দু’পাশে খেজুর গাছ লাগাই, তাহলে দেশে তৈরি হতে পারে প্রচুর খেজুর রস ও গুড়, যা হতে পারে অর্থ উপার্জনের নতুন একটি পথ।
শত শত কিলোমিটার বিস্তৃত এই রেললাইন কেবলই যাতায়াতের মাধ্যম নয়, বরং এটি হয়ে উঠতে পারে অর্থনীতি ও কৃষির নতুন দিগন্ত। যদি আমরা রেললাইনের দু’পাশে খেজুর গাছ রোপণের পরিকল্পনা করি, তবে এ দেশে সৃষ্টি হতে পারে গুড়ের পাহাড় এবং আয়ের নবদিগন্ত।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সাম্প্রতিক তথ্যমতে, দেশের রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩,৬০০ কিলোমিটার। এই রেলপথের দু’পাশে যদি পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ রোপণ করা হয়, তবে সেখানে প্রায় ১০,২৮,০০০টি গাছ রোপণ সম্ভব।এই হিসাব দাঁড়ায় গাছপিছু গড় ৭ মিটার দূরত্বে রোপণের ভিত্তিতে।
রেললাইনের প্রতি কিলোমিটারে প্রতি পাশে ১৪৩টি করে মোট ২৮৬টি গাছ রোপণ সম্ভব। সেই হিসেবে ৩,৬০০ কিমিতে ২৮৬ করে গাছ রোপণ করলে দাঁড়ায় এক বিশাল সংখ্যা ১০ লাখ ২৮ হাজারটি খেজুর গাছ।
প্রতিটি গাছ একেকটি শিল্পের সম্ভাবনা।খেজুর গাছ সাধারণত শীতকালে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রস দেয়। একটি পরিপক্ব গাছ থেকে গড়ে ৫০ লিটার রস সংগ্রহ করা যায়। সেই রস থেকেই তৈরি হয় বাংলার ঐতিহ্যবাহী পাটালি বা খেজুর গুড়।
মোট রস উৎপাদন:১০,২৮,০০০ × ৫০ লিটার = ৫১.৪ মিলিয়ন লিটার।মোট গুড় উৎপাদন (৮ কেজি/গাছ হিসেবে):১০,২৮,০০০ × ৮ = ৮২,২৪,০০০ কেজি = ৮,২২৪ মেট্রিক টন
এ এক বিস্ময়কর উৎপাদন অর্থনীতির দ্বার উন্মোচন করবে। যা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে।
খেজুর চাষ এক মৌসুমভিত্তিক কর্মসংস্থানের দ্বার খুলে দিতে পারে। তাপ্পিদের জন্য এটি একটি জীবিকার সুযোগ, স্থানীয় তরুণদের জন্য হতে পারে উদ্যোক্তা হওয়ার প্ল্যাটফর্ম।
রেলপথের পাশে গাছ থাকলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন বাড়ে, তেমনি মাটি ক্ষয় রোধ, শব্দ ও ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও রাখবে বড় ভূমিকা।
যদিওবা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে কিছু বাস্তবধর্মী চ্যালেঞ্জ রয়েছে।সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সম্ভাবনার আকাশ খোলা। প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা ও রাষ্ট্রীয় সহায়তা।
ধরা যাক, এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পে কেবল ১ লাখ খেজুর গাছ রোপণ করা হলো,তাতেই রস উৎপন্ন হবে ৫০ লাখ লিটার।যার থেকে গুড় তৈরি হবে প্রায় ৮০০ মেট্রিক টনের বেশি।
খেজুর গাছের ছায়ায় আমরা দেখতে পারি এক নতুন দেশের রূপ। যেখানে রেললাইনের ধারেই গড়ে উঠতে পারে জীবন ও জীবিকার আশ্বাস। সরকার, রেল মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় জনগণ যদি একসাথে এগিয়ে আসে, তবে এই রেলপথের ধারেই হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের সবচেয়ে অনন্য প্রকল্প।
হ্যাপী