
ছবি: সংগৃহীত
জমি ক্রয়ের সময় অনেক ধরনের জটিলতা ও প্রতারণার সম্ভাবনা থাকে। তাই জমি কেনার আগে ক্রেতার উচিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাচাই-বাছাই করে সাবধানতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। জমি কেনার সময় ক্রেতাকে প্রথমেই জরিপ অনুযায়ী প্রণীত খতিয়ান ও নকশা যাচাই করতে হবে এবং জমির তফসিল—যেমন মৌজা, খতিয়ান নম্বর ও দাগ নম্বর দেখে উক্ত জমিতে মোট কতটুকু পরিমাণ জমি রয়েছে তা নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সিএস, এসএ, আরএস ও বিএস পর্চা দেখে জমির ধারাবাহিকতা ও রেকর্ড যাচাই করা প্রয়োজন।
বিক্রেতা যদি ক্রয়সূত্রে জমির মালিক হন, তাহলে তার মালিকানার দলিল বা যে দলিলের মাধ্যমে জমিটি কিনেছেন তা রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। আর যদি বিক্রেতা জমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকেন, তাহলে সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী খতিয়ানে তার নাম বা যার মাধ্যমে পেয়েছেন সেই ব্যক্তির নাম আছে কি না তা মিলিয়ে নিতে হবে। জরিপ চলমান অবস্থায় থাকলে বিক্রেতার কাছে থাকা মাঠপর্চা যাচাই করতে হবে। বিক্রেতার দেয়া দলিল সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বা জেলা রেজিস্ট্রার রেকর্ড রুম থেকে যাচাই করে দেখা অত্যন্ত জরুরি। জমির খতিয়ান, পর্চা বা মৌজা ম্যাপ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস কিংবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড রুম থেকেও যাচাই করতে হবে।
এছাড়া, হাল পর্যন্ত জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। জমির প্রকৃত দখল বিক্রেতার আছে কি না তা সরেজমিনে দেখে নিশ্চিত না হলে জমি কেনা উচিত নয়। যদি জমিটি ওয়ারিশি হয়, তবে সম্পত্তিতে মোট কতজন ওয়ারিশ আছে এবং যিনি বিক্রি করছেন তার কতটুকু অংশ বিক্রির অধিকার আছে তা জেনে নিতে হবে। সম্পত্তি সরকারী বা খাস কি না, তা যাচাই করে নেয়া বাধ্যতামূলক, কারণ সরকারী জমি বিক্রি বা কিনলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জমি নিয়ে অন্য কারো সঙ্গে পূর্বে কোন বিক্রয় চুক্তি বা বায়নাপত্র হয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। জমির উপর কোনো ঋণ বা দায় আছে কি না বা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধক রাখা হয়েছে কি না, তাও নিশ্চিত হতে হবে।
অনেক সময় জমি বিক্রয়ের জন্য মালিক অ্যাটর্নি নিযুক্ত করে থাকেন। সেক্ষেত্রে অ্যাটর্নির আইনগত অধিকার রয়েছে কি না তা যাচাই করা দরকার। যদি অ্যাটর্নি নিযুক্ত থাকেন, তবে মূল মালিকের পরিবর্তে অ্যাটর্নিই বিক্রয় সম্পাদন করতে পারবেন। জমি নিয়ে কোনো মামলা-মোকদ্দমা চলছে কি না তা জেনে নেয়াও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মামলাভুক্ত জমি কিনে পরবর্তীতে জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা থাকে।
জমি ক্রয়ের পর ক্রেতার প্রথম কাজ হলো রেজিস্ট্রির মাধ্যমে জমির মালিকানা গ্রহণ করা এবং সরাসরি জমির দখল বুঝে নেওয়া। এরপর জমির সীমানা নির্ধারণ করে ব্যবহার শুরু করতে হবে, যেমন চাষাবাদ বা ঘরবাড়ি নির্মাণ। রেজিস্ট্রি অফিস থেকে মূল দলিল সংগ্রহ করতে হবে, আর যদি তাৎক্ষণিক না পাওয়া যায় তাহলে সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। দলিল হাতে পাওয়ার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে মিউটেশন বা নামজারির জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এরপর থেকে নিয়মিতভাবে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হবে, কারণ কর না দিলে সরকার জমি নিলামে দিতে পারে। জমির সীমানা সঠিকভাবে নির্ধারণ করে স্থায়ীভাবে চিহ্নিত করে রাখা উচিত, যাতে অন্য কেউ জমিতে অনধিকার প্রবেশ করতে না পারে।
সুতরাং জমি কেনার আগে ও পরে প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও আইনানুগ পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভবিষ্যতের যেকোনো জটিলতা এড়িয়ে নিরাপদে জমির মালিক হওয়া সম্ভব।
ছামিয়া