
ছবি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে মৃত প্রসূতি মুন্নি ও তারাগুনিয়া ক্লিনিক
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় একই ক্লিনিকে দুই প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাত ১১টার দিকে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় মারা যান। এর আগে গত ৮ জুন একই ক্লিনিকে মারা যান আরেক প্রসূতি আখি খাতুন (২২)।
ঘটনার পর মঙ্গলবার দুপুরে জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেন।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। তার পরিবার জানায়, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। তবে চিকিৎসকরা ঝুঁকি দেখিয়ে তাকে কুষ্টিয়া বা রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানোর পরামর্শ দেন। পরে সন্ধ্যায় তাকে স্থানীয় ‘তারাগুনিয়া ক্লিনিকে’ ভর্তি করা হলে রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই তার মৃত্যু হয়।
মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেন বলেন, “আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, কীভাবে রোগী মারা গেছে সেটি ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ দেন। আমরা ওটিতে প্রবেশ করেই দেখি, রোগী স্ট্রোক করেছে। তখন দ্রুত সিজারিয়ানের মাধ্যমে নবজাতককে বের করে আনি।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি এবং ক্লিনিকটি তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা জানান, “মুন্নির মৃত্যুর পর এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি উভয়পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা করেছে।”
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, “এক মাসের ব্যবধানে দুটি মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, যথাযথ চিকিৎসা সুবিধা ও দক্ষ জনবল না থাকা সত্ত্বেও এই ক্লিনিকে নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন চালানো হয়। তারা দ্রুত তদন্ত শেষ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
আসিফ