
চার মাসের জন্য বন্ধ হলেও এক বছরেও চালু হয়নি টিটিপাড়া-কমলাপুর সড়ক
রাজধানীর টিটিপাড়া-কমলাপুর সড়কটিতে আন্ডারপাস নির্মাণের কারণে ৪ মাস ১০ দিনের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় অতিক্রম হলেও চালু হয়নি সড়কটি। তাই প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। তবে আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী দু-এক মাসের জন্য সড়কটিতে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘টিটিপাড়া-কমলাপুর সড়কে একটি আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য সড়কটি বন্ধ রাখা হয়েছিল। ইতোমধ্যে আন্ডারপাস নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত কোরবানির ঈদের সময় আন্ডারপাসটি আংশিক খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছু কাজ বাকি থাকায় ঈদের পরে আবারও বন্ধ করা হয়েছে। সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ বাকি রয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে এই কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। আশা করছি এক-দুই মাসের মধ্যে সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’
জানা গেছে, গত বছর ২০ জুন থেকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় টিটিপাড়ায় আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য টিটিপাড়া-কমলাপুরগামী সড়ক অস্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়। গত বছর ১৯ জুন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের পক্ষে আবু ইউসুফ মোহাম্মদ শামীম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, টিটিপাড়ায় আন্ডারপাসের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য টিটিপাড়া-কমলাপুরগামী সড়ক অস্থায়ীভাবে বন্ধ থাকবে। এ কারণে ২০ জুন বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৩১ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত এই রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এ অবস্থায় টিটিপাড়া-কমলাপুরগামী সড়কে চলাচলকারীদের বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
সড়ক বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে স্থানীয়রা ॥ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এই সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন রাজধানীর মতিঝিল, রাজারবাগ, মালিবাগ ও মৌচাকসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষ চলাচল করে থাকে। এ ছাড়া কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও বিআরটিসি বাস ডিপোর যাত্রীদের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। পাশাপাশি মতিঝিল আইডিয়ালসহ বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা এই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে থাকে।
তাই দীর্ঘদিন যাবৎ সড়কটি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। এ বিষয়ে সাইফ নামের রাজধানীর খিলগাঁও বাসিন্দা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে এই সড়কটিতে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তি শেষ নেই আমাদের। এই সড়কটি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা বেশি ব্যয় হচ্ছে। কারণ আমার অফিস মতিঝিল এলাকায়। আগে খিলগাঁও থেকে বাসে কমলাপুর হয়ে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে মতিঝিল যাওয়া যেত। এখন টিটিপাড়া-কমলাপুর সড়ক বন্ধ থাকায় রাজারবাগ হয়ে অনেক ঘুরে বাসগুলো মতিঝিল পৌঁছায়। এতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। তাই এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই আমরা।’
রাজধানীর মুগদা, মানিকনগর, বাসাবো ও বৌদ্ধমন্দিরসহ বিভিন্ন এলাকাবাসী কমলাপুর, মতিঝিল আসার জন্য টিটিপাড়া মোড় হয়ে আসা সড়কটি ব্যবহার করেন। কিন্তু গত প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরেই সড়কটি বন্ধ রয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এলাকাবাসীকে খিলগাঁও ফ্লাইওভার অথবা মানিকনগর বিশ্বরোড হয়ে মতিঝিল আসতে হয়। এত তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
টিটিপাড়া এলাকায় কামাল নামের এক যাত্রী জানান, ‘এ সড়ক দিয়েও যান চলাচল বন্ধ থাকায়। এমনকি সাধারণ পথচারীদের চলাচলে অনেক সদস্যা হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তির মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। টিটিপাড়ায় নির্মাণকাজের কারণে বিশ্ব রোডের যানজটে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়। টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁওমুখী সড়কটি ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে যাত্রীদের।’ তাই আন্ডারপাস নির্মাণ শেষে দ্রুত সড়কটি খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
আন্ডাপাসের নির্মাণ ৯০ শতাংশ শেষ ॥ সড়কপথের রেলক্রসিং যানজটের ভোগান্তি দূর করতে রাজধানীর টিটিপাড়া-কমলাপুর সড়কে নির্মাণ করা হচ্ছে এই আন্ডাপাসটি। এই নির্মাণ হলে নির্বিঘেœ ট্রেন চলাচল করবে এই রেলপথের পাঁচটি লাইন দিয়ে। তবে সড়কপথের যানবাহন চলতে যাতে সমস্যা না হয় এ জন্য মূল সড়ক থেকে ১১ মিটার নিচ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আন্ডারপাসটি (পাতাল সড়ক)। চার লেনের এই আন্ডারপাসে রিক্সাসহ অযান্ত্রিক যান চলাচলের জন্য থাকবে দুই লেনের পৃথক সড়ক।
পাশাপাশি পথচারী পারাপারের জন্য থাকবে ফুটপাত। ইতোমধ্যে আন্ডারপাসের ৯০ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে আন্ডারপাসের সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের অর্থায়নে আধুনিক এই আন্ডারপাসটি নির্মাণ করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই আন্ডারপাসটি নির্মাণ করা হচ্ছে। রাজধানীর অতীশ দীপঙ্কর সড়কের টিটিপাড়া মোড় থেকে কমলাপুরের আউটার সার্কুলার সড়কের মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ মিটার দীর্ঘ হবে আন্ডারপাসটি। টিটিপাড়া রেলক্রসিং দিয়ে ঘন ঘন ট্রেন চলাচল করায় প্রায় সময় যানবাহন বন্ধ রাখতে হবে। ফলে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে টিটিপাড়ায় রেল ক্রসিংয়ের পরিবর্তে আন্ডারপাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২০২২ সালের নভেম্বরের এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চায়না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই আন্ডারপাসটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় কমলাপুর স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকায় নতুন তিনটি ডুয়েলগেজ রেলপথ ও একটি ব্রডগেজ প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া যাত্রী ছাউনি ও টিটিপাড়ায় ১২ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
টিটিপাড়ায় বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন নির্মাণ ও গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে। আইসিডির অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন ও নতুন সীমানা দেয়াল নির্মাণ করা হবে। এ সব কারণে রাজধানীর টিটিপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ে ছয় লেনের আন্ডারপাস নির্মাণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুর রেল লাইনসহ তিন-চারটি রেলপথ নির্মাণ হয়েছে। এই পথে ট্রেন চলাচলের সময়ে লেভেল ক্রসিংয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। তখন সড়কে প্রচ- যানজট তৈরি হবে। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে টিটিপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। ৬ লেনের আন্ডারপাস সড়কে গাড়ি ও রিক্সা চলাচলের জন্য পৃথক লেন থাকবে।’
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর এই প্রথম লেভেল ক্রসিং আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। আন্ডারপাসটি হবে অনেকটা আন্দনিক। সাড়ে ৩০০ মিটার দীর্ঘ আন্ডারপাসে ফুটপাতের পাশে থাকবে ফুলগাছসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিত। ছয়লেন বিশিষ্ট এই পাতাল সড়কে প্রস্থ্য হবে ৩০ মিটার। আন্ডারপাসের ভার্টিক্যাল উচ্চতা হবে ৫ দশমিক ১ মিটার। অযান্ত্রিক যানবাহনের লেনের উচ্চতা হবে ৩ দশমিক ৪ মিটার। আন্ডাপাসের বৃষ্টির পানি নিঃস্কাশনের জন্য একটি পাম্প হাউজ থাকবে। এই পাতাল সড়কে ৪০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এই আন্ডারপাস চালু হলে রেলপথ দিয়ে কেউ চলাচল করতে পারবে না।
প্যানেল হু