
দৈনিক জনকণ্ঠ
ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার কুলিক নদীর তীরে অবস্থিত রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি, যা একসময় মালদুয়ার রাজবাড়ি নামে পরিচিত ছিল, বর্তমানে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে রাজা টংকনাথ চৌধুরীর পিতামহ বুদ্ধিনাথ চৌধুরীর উদ্যোগে নির্মাণ শুরু হয় এবং পরবর্তীতে রাজা টংকনাথ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়।
প্রায় ১০ একর জমির ওপর বিস্তৃত এই রাজবাড়ির স্থাপত্যশৈলীতে ভিক্টোরিয়ান অলংকরণের ছাপ সুস্পষ্ট। বাড়ির প্রবেশপথে রয়েছে একটি বিশাল সিংহদরজা, যা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যায়। রাজবাড়ির আশেপাশে রয়েছে কাছারি বাড়ি, দুটি পুকুর এবং একটি মন্দির, যা এই স্থাপনাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
তবে, দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে রাজবাড়িটি বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে, ছাদে গজিয়েছে গাছপালা, এবং অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পর এই স্থানে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়, যা রাজবাড়ির পরিবেশকে আরও নষ্ট করছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র নাথ বলেন, "এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী সম্পদ, এটি সংরক্ষণ করা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।" এছাড়া, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাবিনা আলম প্রধান জানিয়েছেন, রাজবাড়িটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে এবং সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
রাজবাড়িটি দেখতে আসা দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন, তারা এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি দেখে মুগ্ধ হলেও এর বর্তমান অবস্থায় হতাশ। তারা চান, সরকার দ্রুত এই রাজবাড়ির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে এটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করুক, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।
রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি শুধু একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন আমাদের ঐতিহ্য রক্ষার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।
হ্যাপী