
পাহাড়ি ঢলে সীমান্তের কালাঘোঁষা নদীর পাড় ভেঙে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ
শেরপুরে কয়েকদিনের বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। এতে এ জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেল ৪টা পর্যন্ত নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালি নদীর পানি বিপদসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এছাড়া নালিতাবাড়ীর ভোগাই, ঝিনাইগাতীর মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এতে উভয় উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বোরো আবাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যেকোনো সময় এসব নদীর বাঁধ ও পাড় ভেঙে লোকালয় এবং ফসলি জমি তলিয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন নদী তীরবর্তীসহ নিম্নাঞ্চলের লোকজন। অন্যদিকে বন্যার আশঙ্কায় সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরে শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই কয়েকদিন আগে বন্যার পূর্বাভাস পেয়ে আতঙ্ক দেখা দেয় ওইসব এলাকায়। গত ১৭ মে থেকে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। সেইসাথে দু-দিন যাবত ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসছে পাহাড়ি ঢল। এতে সীমান্তের সবগুলো নদীর পানি বাড়ছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের বাগেরভিটা এলাকায় সোমেশ্বরী নদীতে নির্মাণাধীন চাপাতলী ব্রিজে ময়লা আটকে পানির তোড়ে পাশের সড়ক ও একটি দোকান আংশিক ভেঙে যায়। মঙ্গলবার কালঘোঁষা নদীর ফুলহাড়ি এলাকায় কিছুটা পাড় ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ১২ হেক্টর বোরো আবাদ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
জেলা খামারবাড়ীর উপপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, 'বন্যার পূর্বাভাস পেয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের দ্রুত আধা-পাকা ধান কেটে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণের জন্য মাইকিং করা হয়েছে। জেলায় ইতোমধ্যে ৯২ শতাংশ বোরো ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ধানের মধ্যে যেগুলো ৮০ শতাংশের বেশি পেকে গেছে, তা দ্রুত কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আউশ ধানের বীজতলার পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা তৈরি করে দিতে কৃষকদের বলা হয়েছে।'
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান বলেন, 'মঙ্গলবার সারাদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও সন্ধ্যা থেকে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে চেল্লাখালি নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্ষণ না হলে আগামী ১২ ঘণ্টায় পানির প্রবাহ আরও কমবে। তিনি আরও বলেন, কোন এলাকার বাধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দ্রুত সময়ে যাতে মেরামত করা যায় সেজন্য আপদকালীন হিসেবে ৮ হাজার জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে ঝিনাইগাতীর দিঘীরপাড় এলাকায় বাধে ভাঙন শুরু হলে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হয়েছে।'
এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, 'দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পাঠানো বন্যা সতর্কবার্তা পেয়ে বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।'
অভি