ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চরম বিতর্কিত চারজন আবারও দায়িত্ব পেলেন প্রশাসনে

প্রকাশিত: ০১:৪৫, ২১ মে ২০২৫

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চরম বিতর্কিত চারজন আবারও দায়িত্ব পেলেন প্রশাসনে

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যাদের ‘চরমপন্থী’ মনোভাব ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে পদ হারাতে হয়েছিল বা সেনেটের অনুমোদন পাওয়া সম্ভব হয়নি, সেই অন্তত চারজন বিতর্কিত কর্মকর্তা এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে এসেছেন—এবং এবার তাদের হাতে রয়েছে আগের চেয়েও বেশি ক্ষমতা।

তাদের কেউ নারীদের ভোটাধিকার নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন, কেউ শ্বেত জাতীয়তাবাদীদের সম্মেলনে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, কেউ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ‘সন্ত্রাসী নেতা’ বলেছেন এবং তার সিআইএ পরিচালককে ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ পাঠানোর বা আত্মহত্যা করার পরামর্শ দিয়েছেন। এমনকি কারও ভাষ্য অনুযায়ী হিলারি ক্লিনটন হলেন ‘স্মৃতিভ্রষ্ট সন্ত্রাসী’ এবং টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজের স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর সরকার একীভূত করার ষড়যন্ত্রে জড়িত!

যাদের এক সময় প্রশাসন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বা মনোনয়ন আটকে দেওয়া হয়েছিল, তারাই এখন আবার ক্ষমতার আসনে ফিরেছেন। কেবল ফিরেই আসেননি, এবার আরও কম নিয়ন্ত্রণ, কম জবাবদিহিতা এবং বড় পরিসরে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেয়েছেন।

২০২৫ সালে এসে এসব চরমপন্থী মুখ আবার দায়িত্ব পেলেন ট্রাম্প প্রশাসনে। এটা ট্রাম্প প্রশাসনের আরও এক প্রমাণ, যেখানে মডারেট বা মাঝামাঝি অবস্থানের মানুষদের ছেঁটে ফেলে এক আদর্শগত রূপরেখায় নীতি নির্ধারণ হচ্ছে, যেখানে ‘নিষ্ঠা’ই হলো প্রধান যোগ্যতা।

প্রথম মেয়াদে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেট পর্যন্ত এদের চরমপন্থী ও অব্যবস্থাপনা করার ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় পদে বসাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দলীয় আনুগত্যের বদৌলতে তাঁদের পথ প্রশস্ত হয়েছে।

জন গিবস: নারীদের ভোটাধিকারকে ‘অসুন্দর’ বলে ব্যঙ্গ

জন গিবস এখন হাউজিং অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট (HUD) দফতরে অন্যতম শীর্ষ নীতিনির্ধারক। যদিও এই পদে থাকার জন্য সেনেটের অনুমোদন লাগে না, কিন্তু তার অতীত বিতর্কিত।

২০১৬ সালে তিনি দাবি করেছিলেন, হিলারি ক্লিনটনের প্রচারক শয়তানপূজায় অংশ নিয়েছেন। সেইসাথে তিনি এমন এক বর্ণবাদী ব্যক্তিকে সমর্থন করেছিলেন যিনি পরে টুইটার থেকে নিষিদ্ধ হন।

স্ট্যানফোর্ডে পড়াকালে তিনি এমন এক ‘থিংক ট্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করেন, যার ওয়েবসাইটে নারীদের ভোটাধিকারকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘ক্ষতিকর’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। পরে এসবকে ‘স্যাটায়ার’ বলে দাবি করলেও ইন্টারনেট আর্কাইভে তার নানা নারীবিদ্বেষী মন্তব্য পাওয়া গেছে।

গিবস সম্প্রতি মিশিগানের অটোয়া কাউন্টির প্রশাসক পদে ছিলেন, কিন্তু সেখানে ‘গুরুতর দুর্ব্যবহার ও ইচ্ছাকৃত অনিয়মে’ জড়িয়ে পড়ে বরখাস্ত হন। পরে ১ লাখ ৯০ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণসহ সমঝোতা হয়।

ড্যারেন বিটি: শ্বেত জাতীয়তাবাদীদের কণ্ঠস্বর এখন আমেরিকার প্রশাসক

ড্যারেন বিটিকে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউসের ভাষণ লেখক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে সাদা জাতীয়তাবাদীদের এক সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সরানো হয়।

এখন তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টে ‘আন্তর্জাতিক জনসচেতনতাবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি’। অর্থাৎ তিনি আমেরিকার আন্তর্জাতিক বার্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

বিটি অতীতে লিখেছেন, ‘যোগ্য শ্বেতাঙ্গ পুরুষদেরই শাসনে থাকা উচিত।’ তিনি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন এবং কৃষ্ণাঙ্গ রাজনীতিবিদদের অপমান করে লিখেছেন, ‘তাদের মাথা নিচু করে ম্যাগা-র কাছে হাঁটু গেড়ে বসা শিখতে হবে।’

অ্যান্থনি টাটা: ওবামা ‘সন্ত্রাসী নেতা’, ইসলাম ‘সহিংস ধর্ম’

সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অ্যান্থনি টাটা এখন প্রতিরক্ষা দফতরের ‘আন্ডার সেক্রেটারি ফর পার্সোনেল অ্যান্ড রেডিনেস’ পদে মনোনীত। এই পদে বসে তিনি সামরিক নিয়োগ, সুযোগ-সুবিধা এবং প্রস্তুতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখভাল করবেন।

২০১৮ সালে তিনি ওবামাকে ‘মুসলিম সন্ত্রাসী নেতা’ বলে আখ্যা দেন এবং ইসলামকে ‘সহিংসতম ধর্ম’ বলেন। এছাড়াও তিনি দাবি করেন, সিআইএ পরিচালক জন ব্রেনান ট্রাম্পকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর তদন্তেও বহু অভিযোগ উঠে আসে—অন্তত দুই নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং সন্তান লালন-পালনের কাগজে জালিয়াতি। তবুও সেনাবাহিনী তাকে শাস্তি দেয়নি।

লিয়ান্দ্রো রিজুটো জুনিয়র: এবার আমেরিকান স্টেটগুলোর মুখপাত্র

চুলের পণ্য নির্মাতা কোম্পানি কনএয়ার-এর উত্তরাধিকারী লিয়ান্দ্রো রিজুটো জুনিয়র ২০১৮ সালে বার্বাডোজ ও কিছু ক্যারিবীয় দেশের রাষ্ট্রদূত পদে মনোনয়ন পেলেও সেটা আটকে যায় তার ষড়যন্ত্রমূলক ও অপমানজনক মন্তব্যের জন্য।

তিনি একবার টেড ক্রুজকে ‘কানাডায় ফিরে যাও’ বলেছিলেন এবং হিলারি ক্লিনটনকে ‘ভুলে যাওয়া সন্ত্রাসী’ বলে টুইট করেছিলেন। এবার তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আমেরিকান স্টেটগুলোর সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে—যা উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ফোরাম।

এই চারজনের প্রত্যাবর্তন শুধু বিতর্ক নয়, মার্কিন প্রশাসনের রূপ বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেখানে এক সময়কার চরমপন্থা এখন মূলধারার নীতি, এবং যেখানে রাজনৈতিক আনুগত্যই হলো প্রধান মাপকাঠি।

 

সূত্র: সিএনএন

রাকিব

আরো পড়ুন  

×