ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

মাদারীপুরে সেতুর নিচে পাওয়া কিশোরের পরিচয় পাওয়া গেছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ০০:১১, ৪ মে ২০২৫

মাদারীপুরে সেতুর নিচে পাওয়া কিশোরের পরিচয় পাওয়া গেছে

মাদারীপুরে সেতুর নিচে পাওয়া অজ্ঞাত কিশোরের পরিচয় যাওয়া গেছে। স্বেচ্ছাসেবক আসাদুজ্জামান সাঈফের কাছে খরব পেয়ে তাকে প্রথমে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি আদিল হোসেন। ভর্তি করা হয় মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে। সাথে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। পরে তার হাতের ছাপ নিয়ে পরিচয় সনাক্ত করে পরিবারকে খবর দেয়া হয়। অবশেষে অজ্ঞাত কিশোরের পরিবার হাসপাতালে এসে সন্তানকে ফিরে পেয়েছে। উন্নত চিকিৎসার দাবী এই পরিবারের। খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে পটুয়াখালীর কলাপড়া থেকে ছুটে আসেন তার মা। শনিবার ছেলেটিকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধিরা।

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদারীপুর-শরীয়তপুর সড়কের আড়িয়াল খাঁ ব্রিজের নিচ থেকে মুর্মুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা। ওই কিশোরের নাম মো. আসাদুল জামান, বয়স ১৮ বছর। তিনি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের নাচনাপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ও মোসা. রাশিদা বেগমের সন্তান। এরা রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর শাফিয়া শরীফে গত ২৬ এপ্রিল ওরশ মাহফিলে আসেন। সেখান থেকে আসাদুল হারিয়ে যায়।

উদ্ধারকারী ও পুলিশ জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে আড়িয়াল খাঁ ব্রিজের নিচে এক কিশোরকে মুর্মুর্ষ অবস্থায় দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার আহবায়ক নেয়ামত উল্লাহ ও কর্মী আসাদুজ্জামান সাইফ দ্রুতই পুলিশকে খবর দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ ওই কিশোরকে মাদারীপুর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু ওর কোন পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তার হাতের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সনাক্ত করে তার ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়। ঠিকানা মতো পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তার পরিবারকে আসতে বলা হয়। তারা শুক্রবার রাতে মাদারীপুরে আসেন।
ওই কিশোরের ছোট থেকেই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় মাঝে মাঝে হারিয়ে যায়। পরিবারটি তার সুচিকিৎসার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী করেন।

কিশোরের মা রাশিদা বেগম জানান, ‘আমি ও আমার স্বামী কলাপাড়া পৌরসভায় ঝাড়–দারের কাজ করি। ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে আসাদুল সবার ছোট। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে অসুস্থ্য, মেঝ ছেলে পড়া লেখা করে। আর ছোট ছেলে ছোট থেকেই মৃগী রোগে আক্রান্ত। ভালো চিকিৎসা দিতে পারেনি। আমাদের খেয়ে পড়ে বাঁচাই দায়, সেখানে কিভাবে চিকিৎসা করাবো। এখন যদি কেউ আমার ছোট ছেলেটাকে চিকিৎসা করায়, তাহলে আমরা বাঁচতে পারবো।’

আসাদুজ্জামান সাঈফ বলেন, “আমি বাড়ি থেকে শহরে আসার সময় আমার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি একটি ছেলে আড়িয়ালখাঁ বড় সেতুর নিচে জঙ্গলের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। আমি সাথে সাথে দৌড়ে যাই সেখানে। সেখানে গিয়ে আমি ছেলেটিকে দেখতে পেয়ে ফেইজবুক লাইভে আসি এবং সদর মডেল থানার ওসি আদিল হোসেনকে জানাই। তিনি এসে ছেলেটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পড়ে আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছেলেটিকে বাইরে রাখা হয়েছে। আমরা ওর জন্য পুরান বাজার গিয়ে নতুন জামা, গেঞ্জি, লুঙ্গী গামছা কিনে আনি এবং ছেলেটিকে গোসল করিয়ে নতুন জামা-কাপড় পড়িয়ে দেই। ছেলেটি এতোটাই অসুস্থ ছিলো যে, সে কথাও বলতে পারছিল না। আল্লাহর রহমতে ছেলেটি জীবিত আছে এটাই অনেক।” 

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের আহবায়ক নেয়ামত উল্লাহ, সদস্য সচিব মাসুম বিল্লাহ, তুষার সব্যসাচী, তানভীর, মিলন মুন্সি, কিরণ, হিমেল হাওলাদার, সায়েম, আবদুর রহিম ও বন্যা উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা ও মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদিল হোসেন। 

এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাদারীপুর জেলার আহবায়ক নেয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘ছেলেটার খোঁজ পেয়ে আমিসহ আরো কয়েকজন মিলে উদ্ধার করে হাসপাতালে এনেছি। আমরা ওর দেখভাল করি। আগামীতে কিভাবে ওর সুচিকিৎসা পেতে পারে, তার চেষ্টা করছি। কোনভাবেই যেন এমন একটি কিশোরের জীবন শেষ হয়ে না যায়, তার চেষ্টা করবো। আমরা মানুষের পাশে আছি, মানুষের পাশেই থাকবো।’

 

রাজু

×