
ছবি: জনকণ্ঠ
দুর্নীতির অভিযোগে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে আদালত প্রাঙ্গণ।
১৩ নভেম্বর তার সাথে নিয়োগ পাওয়া ৫০ জন পিপি এপিপি মো. আনিসুজ্জামানের অপসারণ চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়েও আবেদন দিয়েছেন। বিএনপিসমর্থিত এই পিপিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে সরিয়ে দিতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তার সাথে কাজ না করার জন্য আদালতের ৫০ জন আইন কর্মকর্তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার বিকালে জামালপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের দ্বিতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা দায়রা ও চিফ জুডিসিয়াল আদালতের আইনজীবীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জিপি এস এম তৌফিকুল ইসলাম বাদশা। তিনি বলেন, মো. আনিসুজ্জামান পিপি নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে দুর্নীতি ও বিভিন্ন জায়গায় পদের অপব্যবহার করে আসছেন। সম্প্রতি বকশীগঞ্জ থানার ওসির সাথে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কথোপকথন ভাইরাল হয়। যেখানে আইনজীবীদের মান ক্ষুণ্ন হয়। ১৩ নভেম্বর পিপি হিসাবে যোগদানের পর থেকে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি মো. আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের দোসর আওয়ামী লীগ দলীয় আসামিদের জামিন করে দেওয়ার চুক্তি এবং বিভিন্ন থানায় মামলা নেয়া ও না নেয়া কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আদালতের ৫০ জন আইন কর্মকর্তা এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, মো. আনিসুজ্জামান পিপি হিসেবে যোগদানের পর থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় আসামিদের জামিন করে দেওয়ার জন্য চুক্তি নেন। তার জুনিয়র ও বন্ধু আইনজীবীদের মাধ্যমে জামিনের আবেদন করিয়ে থাকেন। কোর্টে আসামিদের বিরুদ্ধে শুনানি চলাকালে আসামির পক্ষের আইনজীবীকে জামিনের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করার জন্য কানে কানে পরামর্শ দেন। যা উপস্থিত আইনজীবীরা প্রত্যক্ষ করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তাকে রাষ্ট্রপক্ষে তার বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য বললে তিনি নমনীয়তা প্রকাশ করেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা নেয়া এবং না নেয়ার সুপারিশের অভিযোগ রয়েছে। যা পিপি পদে থেকে সম্পূর্ণ বেমানান।
তিনি ১ মে একটি মামলা রেকর্ড করার জন্য বকশীগঞ্জ থানার ওসি’র সাথে আপত্তিকর ভাষায় কথাবার্তা বলেন। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে যে ভাষা সম্বোধন করেছেন তাতে আদালতে সকল আইনজীবীদের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। পিপি মো. আনিসুজ্জামানের আচার আচরণ, কথাবার্তা আপত্তিকর। তিনি প্রায় সময় সিনিয়র আইনজীবীদের সম্পর্কে বিরূপ ও অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করেন। এ ছাড়া এপিপিদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন। এসব অভিযোগে মো. আনিসুজ্জামানকে পিপি পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বিধায় তাকে এই পদ থেকে অপসারণের দাবি করা হয়েছে। এসব কারণেই আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ৪ মে তাকে অপসারণ চেয়ে আবেদন করেছেন তারা। এ ছাড়াও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকেও অব্যাহতি চেয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আবেদন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি আইনজীবী গোলাম নবী এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী রিশাদ রেজওয়ান।
তবে অনাস্থা বিষয়ে পিপি মো. আনিসুজ্জামান বলেন, তারা একটা হিংসা থেকে এই কার্যক্রম চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের জামিনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কথা মিথ্যা। বরং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি আইনজীবী গোলাম নবী মির্জা আজমসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দায়ের থাকা একটি মামলার ৪ নম্বর আসামি ক্যাপ্টেন শফিকুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে তিনি নিজে জামিন শুনানি করেছেন। তার তো পক্ষ নেয়ার কথা না।
আজিজুর/রবিউল