ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

দিনে একবার হলেও গভীর শ্বাস নেওয়ার উপকারিতা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৯ আগস্ট ২০২৫

দিনে একবার হলেও গভীর শ্বাস নেওয়ার উপকারিতা

ছ‌বি: প্রতীকী

দিনে একবার হলেও গভীর শ্বাস নেওয়া আমাদের শরীর ও মনের জন্য এক ধরনের প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে। ব্যস্ততা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ কিংবা দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্লান্তি আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসকে অনেক সময় অগভীর করে তোলে। আমরা তখন ঠিকভাবে ফুসফুস ভর্তি করে শ্বাস নিই না। ফলে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না, রক্ত সঞ্চালনও তেমনভাবে সক্রিয় থাকে না। অথচ দিনে একবার হলেও সচেতনভাবে গভীর শ্বাস নিলে শরীরের প্রতিটি কোষ যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। এটি করতে খুব বেশি সময় লাগে না, কেবল কিছু মুহূর্ত দরকার হয়, কিন্তু এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়।

গভীর শ্বাস নেওয়ার সময় আমরা ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নেই, ফুসফুস সম্পূর্ণ ভর্তি করি এবং তারপর ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ি। এই প্রক্রিয়ায় ফুসফুসের ভেতরে থাকা দূষিত বাতাস ও কার্বন ডাই-অক্সাইড বেরিয়ে যায়, আর নতুন অক্সিজেন শরীরে প্রবেশ করে। অক্সিজেন হলো জীবনের জ্বালানি। পর্যাপ্ত অক্সিজেন পেলে মস্তিষ্ক আরও সক্রিয় হয়, চিন্তাশক্তি পরিষ্কার হয় এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। এ কারণেই অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, গভীর শ্বাস মানসিক প্রশান্তি আনার পাশাপাশি কাজের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

আমরা যখন দুশ্চিন্তায় থাকি বা রাগ করি, তখন শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত ও অগভীর হয়ে যায়। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে আরও উত্তেজিত করে এবং শরীরে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়ায়। কিন্তু গভীর শ্বাস নেওয়া সেই উত্তেজনা কমিয়ে দেয়। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে, হৃদস্পন্দন ধীর করে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। তাই দিনে একবার হলেও গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা মানসিক চাপ মোকাবিলার জন্য একটি সহজ ও কার্যকর উপায়।

এছাড়া গভীর শ্বাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। যখন শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে, তখন কোষগুলো আরও সক্রিয় হয়, ক্ষত সারতে সময় কম লাগে এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শরীরের লড়াইয়ের ক্ষমতা বেড়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, যারা নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করেন, তারা সর্দি-কাশি বা মৌসুমি অসুখে কম ভোগেন। এর কারণ হলো তাদের শরীর ভেতর থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

গভীর শ্বাস হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারী। এটি হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ উন্নত করে এবং শরীরের প্রতিটি অংশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি হজম প্রক্রিয়াকেও উন্নত করে। যখন আমরা গভীরভাবে শ্বাস নেই, তখন ডায়াফ্রাম নড়াচড়া করে এবং পেটের ভেতরের অঙ্গগুলোতে একটি হালকা ম্যাসাজের মতো প্রভাব ফেলে, যা হজমে সহায়ক। ফলে খাবার ভালোভাবে হজম হয় এবং গ্যাস, অম্বল বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা কমতে পারে।

শরীরের পাশাপাশি মনের স্বাস্থ্যের জন্যও এই অভ্যাস অমূল্য। গভীর শ্বাস নেওয়ার সময় আমরা কয়েক মুহূর্তের জন্য বাইরের দুশ্চিন্তা ভুলে যাই। এই প্রক্রিয়ায় মন ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে এবং ভেতরে এক ধরনের স্বস্তি অনুভূত হয়। অনেকেই বলেন, দিনে একবার কয়েক মিনিট গভীর শ্বাস নেওয়া যেন মনের জন্য এক কাপ ঠান্ডা পানির মতো কাজ করে—ক্লান্তি দূর হয়, মন ভালো হয়ে যায় এবং নতুন উদ্যমে কাজে মন বসে।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি আমরা সকালবেলা বা ঘুমানোর আগে গভীর শ্বাস নেওয়ার সময় বের করি। সকালবেলায় এটি শরীরকে দিনের জন্য প্রস্তুত করে, আর রাতে এটি মনকে শান্ত করে ভালো ঘুম আনতে সাহায্য করে। গভীর শ্বাস নেওয়ার জন্য বিশেষ কোনো যন্ত্র বা জায়গা প্রয়োজন হয় না। বাড়ির যেকোনো শান্ত কোণ, অফিসের বিরতির সময় বা এমনকি বাসে বসেও কয়েক মুহূর্তের জন্য এটি করা সম্ভব।

আমাদের ব্যস্ত জীবনে নিজের জন্য কিছু মুহূর্ত বের করা অনেক সময় কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু দিনে একবার হলেও সচেতনভাবে গভীর শ্বাস নেওয়া এমন একটি সহজ অভ্যাস, যা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের শরীর ও মনের স্বাস্থ্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এটি বিনা খরচে, বিনা ঝুঁকিতে একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা। শুধু কয়েক মুহূর্ত থেমে গিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া— এতেই শুরু হতে পারে আমাদের সুস্থতার নতুন অধ্যায়।

এম.কে.

×