
বর্তমান জীবনে বিষন্নতা কেবল মন খারাপ বা সাময়িক দুঃখ নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী হলে জীবনযাত্রার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সচেতনতা এবং সঠিক পন্থায় এ সমস্যার মোকাবেলা সম্ভব।
বিষন্নতার কারণ, লক্ষণ এবং তা কাটিয়ে ওঠার কার্যকর উপায় নিচে আলোচনা করা হলোঃ
বিষন্নতার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে—ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন, চাকরি বা শিক্ষাগত চাপ, আর্থিক সমস্যা, একাকিত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, অতীতের ট্রমা বা দুঃখজনক স্মৃতি, দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুস্থতা, এমনকি জেনেটিক কারণও বিষন্নতার অন্তর্ভুক্ত। কারণ বুঝতে পারলে তার সমাধান খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
বিষন্নতার সময় নেতিবাচক চিন্তা যেমন “আমি ব্যর্থ”, “আমার জীবন অর্থহীন”, “আমি কারো জন্য গুরুত্বপূর্ণ নই”, “আমার কোনো ভবিষ্যৎ নেই” ইত্যাদি প্রায়ই আসে, যা আত্মবিশ্বাস কমিয়ে হতাশা বাড়ায়। এসব চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করতে শিখতে হবে। নিজের অর্জন, প্রিয়জনের ভালোবাসা এবং জীবনে নিজের অবদান নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা জরুরি।
দৈনন্দিন জীবনে রুটিন মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো, জাগা, খাওয়া, কাজ এবং অবসর নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বিষন্নতা বাড়তে পারে, তাই সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করা উচিত। শোবার আগে মোবাইল বা ল্যাপটপ কম ব্যবহার করা, প্রশান্তিদায়ক সংগীত শোনা বা ধ্যান করা উপকারী।
শারীরিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, হালকা ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, জগিং, সাইকেল চালানো বা সাঁতার মস্তিষ্কে এন্ডরফিন হরমোন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা মন ভালো রাখে। পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস যেমন সবুজ শাকসবজি, বাদাম, চিয়া সিড, মাছ (স্যামন, টুনা), দই, প্রোবায়োটিক ও ডার্ক চকলেট বিষন্নতা কমাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত চিনি, প্রসেসড ফুড, ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, ধূমপান ও জাঙ্ক ফুড থেকে বিরত থাকা উচিত।
সৃজনশীল কাজ যেমন বই পড়া, ছবি আঁকা, গান শোনা, লেখালেখি, রান্না শেখা, নতুন ভাষা শেখা বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে। পাশাপাশি কাছের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো, বন্ধুদের সঙ্গে বের হওয়া, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া একাকিত্ব কমায়। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি বা ডিজিটাল ডিটক্স করাও উপকারী।
বিষন্নতার সময় নিজেকে দোষারোপ না করে সদয় হওয়া জরুরি। ইতিবাচক দৃষ্টিতে অতীত বিশ্লেষণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে বিশ্বস্ত কারো সঙ্গে কথা বলতে হবে। নিয়মিত ধর্মচর্চা ও ধ্যান মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
যদি বিষন্নতা দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, আত্মহত্যার চিন্তা আসে, কাজে মনোযোগ কমে অথবা আনন্দ অনুভূতি হারায়, তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সিলরের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।
অতএব, বিষন্নতা জয় করা সম্ভব, তবে ধৈর্য, সচেতনতা এবং সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। মনে রাখবেন, আপনি একা নন—অনেকেই এই সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে সফল হয়েছেন। আশা ও ধৈর্য নিয়ে এগিয়ে চলুন, ইনশাআল্লাহ সুস্থ জীবন আপনার হবে।
শেখ ফরিদ