
ছবি: প্রতীকী
ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সকালের ব্যায়াম একটি সহজ অথচ কার্যকর অভ্যাস, যা শরীর ও মনের জন্য সমানভাবে উপকারী। সকালে বাতাস তুলনামূলকভাবে শুদ্ধ থাকে, ধূলাবালি ও দূষণ কম থাকে, ফলে এ সময় ব্যায়াম করলে ফুসফুসে বিশুদ্ধ অক্সিজেন প্রবেশ করে। শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছালে শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ও শক্তিশালী হয়। যারা নিয়মিত সকালের ব্যায়াম করেন, তাদের শ্বাসনালী পরিষ্কার থাকে, ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শ্বাসকষ্ট বা হাপানির মতো সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সকালে ব্যায়াম শুরু করার আগে হালকা স্ট্রেচিং করলে শ্বাসপ্রশ্বাসের পেশি ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা হালকা জগিং—এসব ব্যায়াম ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। কারণ এই ধরনের ব্যায়ামে শরীরের মেটাবলিজম বেড়ে যায় এবং ফুসফুস বেশি পরিমাণে অক্সিজেন টেনে নিতে অভ্যস্ত হয়। ফুসফুস যত বেশি কাজ করে, তার পেশি তত শক্তিশালী হয়, ঠিক যেমন অন্য পেশি ব্যায়ামের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়।
সকালের ব্যায়াম মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার অভ্যাস ফুসফুসকে প্রশস্ত করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করতে সাহায্য করে। সকালে তাজা বাতাসে শ্বাস নিলে মস্তিষ্কও সক্রিয় হয়, মন প্রফুল্ল থাকে। যারা শহরে থাকেন, তাদের জন্য সকালে সূর্য ওঠার আগে বা ঠিক সূর্যোদয়ের সময় ব্যায়াম করা ভালো, কারণ এ সময় বায়ুদূষণ তুলনামূলক কম থাকে।
ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়ার অনুশীলন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সকালে কিছু সময় নিরিবিলি জায়গায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে গভীরভাবে শ্বাস নিলে ফুসফুসের ভেতরের স্তরগুলো সক্রিয় হয়। এভাবে প্রতিদিন অনুশীলন করলে ফুসফুসের বায়ু ধারণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়ে। যোগব্যায়ামের প্রণায়াম, ভ্রমরী বা অনুলোম-বিলোম শ্বাসপ্রশ্বাসের কৌশলও ফুসফুস শক্তিশালী করে এবং রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখে।
যারা ধূমপান করেন, তাদের ফুসফুস তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয় এবং শ্বাসনালীতে প্রদাহ থাকে। সকালের ব্যায়াম ধূমপানের ক্ষতি কিছুটা কমাতে পারে, তবে ধূমপান ত্যাগ করাই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কারণ ব্যায়াম করার সময় ফুসফুসে নতুন অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়লেও যদি নিয়মিত ক্ষতিকর ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসে, তবে তার কার্যক্ষমতা সীমিত হয়ে যায়।
ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির আরেকটি উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা। ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শ্বাসনালী আর্দ্র থাকে এবং শ্লেষ্মা জমে থাকলেও সহজে বের হয়ে আসে। সকালের ব্যায়ামের পর পানি বা হালকা গরম লেবুর পানি পান করলে শরীর ও ফুসফুস উভয়ই সতেজ থাকে।
সকালের ব্যায়াম শুধু ফুসফুস নয়, পুরো শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থা ও রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এতে হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ে, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক থাকে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। যারা নিয়মিত এ অভ্যাস বজায় রাখেন, তারা শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যেমন হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার ঝুঁকি থেকে অনেকাংশে সুরক্ষিত থাকেন।
ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সকালের ব্যায়ামকে জীবনের অংশ করে নেওয়া উচিত। প্রথমে হয়তো শরীর অভ্যস্ত নাও হতে পারে, তবে ধীরে ধীরে প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট সময় ব্যায়ামে দিলে ফুসফুসে দৃশ্যমান উন্নতি আসবে। নিয়মিত শুদ্ধ বাতাসে গভীর শ্বাস নেওয়া ও শরীরকে সক্রিয় রাখার মাধ্যমে আমরা ফুসফুসকে সুস্থ, শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে কার্যকর রাখতে পারি। সুস্থ ফুসফুস মানে সুস্থ জীবন, আর সকালের ব্যায়াম সেই সুস্থ জীবনের অন্যতম সহজ চাবিকাঠি।