
ছবি: সংগৃহীত
প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে নানা পরিবর্তন। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা ট্যাবের পাশাপাশি এখন অনেকেরই দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে ইয়ারবাড বা ওয়্যারলেস হেডফোন। গান শোনা, ফোনে কথা বলা কিংবা ভিডিও কনফারেন্স—সবক্ষেত্রেই ইয়ারবাড যেন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু তথ্যের কারণে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—ইয়ারবাড কি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের দাবির পেছনে মূল কারণ হলো ইয়ারবাডে ব্যবহৃত ব্লুটুথ প্রযুক্তি। ব্লুটুথ সিগন্যাল ‘রেডিওফ্রিকোয়েন্সি (RF) ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন’ ব্যবহার করে, যা এক ধরনের নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন। আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থা (IARC) ২০১১ সালে নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশনকে “সম্ভাব্যভাবে ক্যানসার সৃষ্টিকারী” (Group 2B) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছিল। তবে এটি নিশ্চিত প্রমাণ নয়; বরং উচ্চমাত্রায় বা দীর্ঘসময় এক্সপোজারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. জোয়ান ল্যান্ডসবার্গ বলেন, “এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ইয়ারবাড ব্যবহারের সঙ্গে সরাসরি ক্যানসারের সম্পর্ক প্রমাণিত হয়নি। তবে দীর্ঘসময় কানে ব্যবহার করলে কানের সমস্যা, শ্রবণশক্তি হ্রাস এবং কানের ভেতরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হতে পারে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA)ও জানিয়েছে, ব্লুটুথ ডিভাইস থেকে নির্গত রেডিয়েশনের মাত্রা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সীমার অনেক নিচে থাকে। ফলে সাধারণ ব্যবহারে এটি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়—এমন প্রমাণ নেই।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, কানে ইয়ারবাড দীর্ঘসময় বা অতিরিক্ত উচ্চ ভলিউমে ব্যবহার না করতে। নিরাপদ ব্যবহারের জন্য ৬০/৬০ নিয়ম মেনে চলা ভালো—অর্থাৎ সর্বোচ্চ ভলিউমের ৬০ শতাংশের বেশি নয়, এবং একটানা ৬০ মিনিটের বেশি ব্যবহার না করা।
সংক্ষেপে, ইয়ারবাড নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো নেই। তবে প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা ও সংযমই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর সেরা উপায়।
আসিফ