ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

সকালের দুধ-চা বনাম লাল চা, পাকস্থলীর জন্য কোনটা ভালো?

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ৯ আগস্ট ২০২৫

সকালের দুধ-চা বনাম লাল চা, পাকস্থলীর জন্য কোনটা ভালো?

ছ‌বি: প্রতীকী

সকালের নাস্তায় অনেকেই দুধ-চা খেতে পছন্দ করেন। আবার কিছু মানুষ লাল চা খেতে বেশি ভালোবাসেন। বিশেষ করে পাকস্থলীর সমস্যায় যারা ভুগছেন, তারা চায়ের ধরন নিয়ে বেশ সচেতন হন। প্রশ্ন ওঠে, সকালে দুধ-চা নাকি লাল চা, পাকস্থলীর জন্য কোনটা বেশি ভালো? আসুন সহজ ভাষায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।

প্রথমে বুঝে নেওয়া যাক, দুধ-চা এবং লাল চা কী ধরনের পানীয়। দুধ-চা সাধারণত কালো চায়ের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে তৈরি হয়। এতে চায়ের গাঢ় স্বাদ থাকে এবং দুধ মিশানোর কারণে এটি একটু নরম হয়। অন্যদিকে, লাল চা মূলত হলো ওলং চা বা উলং চা, যা সাধারণ কালো চায়ের থেকে কিছুটা কম প্রসেস করা হয়। লাল চায়ের স্বাদ তুলনামূলক হালকা এবং এতে কিছুটা মিষ্টি গন্ধও থাকে।

পাকস্থলীর জন্য চায়ের প্রভাব মূলত এর উপাদানের উপর নির্ভর করে। কালো চায়ে ক্যাফেইন থাকে, যা কিছু মানুষের পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দুধ মিশিয়ে চা খেলে কখনো কখনো পাকস্থলীর ওপর এর প্রভাব কিছুটা কমে যায়, কারণ দুধ পাকস্থলীর এসিডিটি কমাতে সাহায্য করতে পারে। আবার দুধের কারণে কেউ কেউ অম্লতা বা হজমের সমস্যা অনুভব করতে পারেন। তাই দুধ-চা পাকস্থলীর জন্য পুরোপুরি নিরাপদ বলা কঠিন।

অপরদিকে, লাল চায়েও কিছু ক্যাফেইন থাকে, তবে কালো চায়ের থেকে কম। লাল চায়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল পাকস্থলীর জন্য উপকারী হতে পারে। এই উপাদানগুলো পাকস্থলীর জ্বালা ও অম্লতা কমাতে সাহায্য করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া, লাল চা হালকা হওয়ায় বেশিরভাগ সময়েই এটি পাকস্থলীর জন্য সহায়ক।

তবে যদি লাল চা বেশি গরম বা বেশি ঘন করা হয়, তাহলে সেটাও পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গরম পানীয় পাকস্থলীর ভেতরের আস্তরণে জ্বালা বা খোসা উঠার কারণ হতে পারে। তাই লাল চা খাওয়ার সময় সেটি গরম না করে একটু ঠাণ্ডা হলে ভালো।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তিভেদে প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। কেউ দুধ-চা খেলে ভালো বোধ করেন, আবার কেউ লাল চা খেলে। পাকস্থলীর যাদের সমস্যাগুলো বেশি, তাদের উচিত একসময় এক ধরণের চা খাওয়া এবং দেখার যে কোনটি তাদের জন্য উপকারী বা ক্ষতিকর।

এক কথায় বলতে গেলে, যারা পাকস্থলীর জন্য উদ্বিগ্ন, তারা চাইলে সকালে লাল চা খেতে পারেন কারণ এতে ক্যাফেইনের মাত্রা কম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি। তবে লাল চা বেশি গরম হলে সেটা এড়িয়ে চলা উচিত। অন্যদিকে, দুধ-চা পাকস্থলীর এসিডিটি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যাদের পেটে অম্লতার সমস্যা আছে, তাদের জন্য দুধ-চা কম ভালো। তবে দুধের কারণে কেউ কেউ হজমে সহায়তা পেতে পারেন।

পাকস্থলীর যত্নে চায়ের সঙ্গে সঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস ও খাবারের ধরনও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় চায়ের সঙ্গে বেশি মশলাদার বা তেলতেলে খাবার পেটে সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই সকালে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার সঙ্গে চা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সর্বশেষে বলতে চাই, চা পান করার ক্ষেত্রে সঠিক মাত্রা বজায় রাখা জরুরি। অতিরিক্ত চা খাওয়া যেকোনো প্রকার পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে রাতে বেশি চা পান এড়িয়ে চলা ভালো।

সকালে লাল চা পাকস্থলীর জন্য সাধারণত দুধ-চায়ের চেয়ে ভালো, তবে তা অবশ্যই হালকা এবং গরম না করে খেতে হবে। যারা দুধ-চা পছন্দ করেন এবং তাদের পাকস্থলী ঠিকঠাক কাজ করছে, তারা খুব বেশি চিন্তা না করেই দুধ-চা খেতে পারেন। কিন্তু যারা পাকস্থলীর অম্লতা, গ্যাস বা জ্বালা অনুভব করেন, তাদের লাল চা বেছে নেওয়াই ভালো।

আপনার শরীরের অবস্থা ও অভ্যাসের ওপর ভিত্তি করে যে কোনো নতুন অভ্যাস শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সর্বদা উত্তম। এতে করে আপনি নিজের শরীরের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

এম.কে.

×