ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

সকালে বেশি ঠান্ডা পানি খাওয়া কি হজমের ক্ষতি করে?

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ৯ আগস্ট ২০২৫

সকালে বেশি ঠান্ডা পানি খাওয়া কি হজমের ক্ষতি করে?

ছ‌বি: প্রতীকী

সকালে বেশি ঠান্ডা পানি খাওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের ধারণা আছে। কেউ মনে করে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর, আবার কেউ ভাবে এতে শরীর সতেজ হয়। আসলে ঠান্ডা পানি খাওয়া ভালো না মন্দ তা নির্ভর করে সময়, শরীরের অবস্থা এবং কতটা ঠান্ডা পানি খাওয়া হচ্ছে তার উপর। বিশেষ করে সকালে যখন পেট একেবারে খালি থাকে, তখন শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রাতভর বিশ্রামে থাকার পর ধীরে ধীরে কাজ শুরু করে। এই সময় অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি একসাথে পেটে গেলে হজম প্রক্রিয়ায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

মানুষের শরীর স্বাভাবিকভাবে গরম বা হালকা গরম তাপমাত্রায় কাজ করতে অভ্যস্ত। খাবার হজমের জন্য পেটের ভেতরে কিছু এনজাইম এবং অ্যাসিড সক্রিয় থাকে। হঠাৎ করে খুব ঠান্ডা পানি ঢুকলে সেই এনজাইমগুলোর কার্যকারিতা কিছুক্ষণের জন্য ধীর হয়ে যেতে পারে। ফলে সকালে খাওয়া নাস্তা বা অন্য খাবার ঠিকমতো ভাঙতে একটু দেরি হয়। অনেক সময় এ কারণে কারও কারও পেটে ভারী ভাব, গ্যাস বা হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজমশক্তি আগে থেকেই দুর্বল, তাদের জন্য এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

ঠান্ডা পানি খাওয়ার পর শরীর সেই পানিকে গরম করার জন্য বাড়তি শক্তি খরচ করে। এতে শরীরের মেটাবলিজম সাময়িকভাবে পরিবর্তিত হয়। সকালে যখন শরীরের শক্তি ধীরে ধীরে জমা হচ্ছে, তখন এই অতিরিক্ত চাপ হজম প্রক্রিয়াকে কিছুটা ধীর করে দেয়। এছাড়া, খুব ঠান্ডা পানি পেটে গেলে পাকস্থলীর ভেতরের রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়। এই সংকোচনের কারণে রক্তপ্রবাহ কিছুটা কমে যায়, যা খাবার হজমের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায়, সকালে খুব ঠান্ডা পানি খাওয়ার পর কেউ কেউ হঠাৎ গলা ব্যথা, কাশি বা সর্দি-জ্বরের মতো সমস্যায় ভোগেন। যদিও এগুলো সরাসরি হজমের সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে, যা পরে হজম প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে। ঠান্ডা পানি খাওয়ার ফলে হজম রসের কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণও ধীর হয়। দীর্ঘ সময় ধরে যদি কেউ প্রতিদিন সকালে এভাবে খুব ঠান্ডা পানি পান করেন, তবে ধীরে ধীরে হজমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি বা গ্যাসট্রিকের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তবে এটাও ঠিক যে, সবার ক্ষেত্রে একই প্রভাব পড়ে না। যাদের হজমশক্তি ভালো, শারীরিক সক্ষমতা বেশি এবং ঠান্ডা পানিতে অভ্যস্ত, তারা সকালে ঠান্ডা পানি খেলেও তেমন অসুবিধা নাও পেতে পারেন। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মে চিকিৎসকরা খালি পেটে খুব ঠান্ডা পানি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। তার বদলে কুসুম গরম পানি বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি সকালে খাওয়া অনেক বেশি উপকারী। এতে রাতভর জমে থাকা টক্সিন বের হয়ে যায়, হজম প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে সক্রিয় হয় এবং পাকস্থলীর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না।

আরও একটি বিষয় হলো, অনেক সময় সকালে উঠে মানুষ শরীরকে জাগিয়ে তুলতে ঠান্ডা পানি পান করে থাকে। এতে সাময়িকভাবে সতেজ অনুভূতি হলেও পেটের জন্য এটি বেশ ধাক্কাধরনের অভিজ্ঞতা হতে পারে। পেটের ভেতরের মাংসপেশি ও হজম সংক্রান্ত অঙ্গগুলো ধীরে ধীরে কাজ শুরু করতে চায়। খুব ঠান্ডা পানি এই প্রক্রিয়ায় হঠাৎ পরিবর্তন আনে, যা হজমের গতি কমিয়ে দেয়। এমনকি কারও কারও ক্ষেত্রে পেট মোচড়ানো বা হঠাৎ মলত্যাগের চাপও তৈরি হতে পারে।

অতএব বলা যায়, সকালে বেশি ঠান্ডা পানি খাওয়া অনেকের হজমের ক্ষতি করতে পারে। যদিও সবাই সমানভাবে প্রভাবিত হয় না, তবুও যারা সুস্থ হজম প্রক্রিয়া বজায় রাখতে চান, তাদের জন্য খালি পেটে বরফ ঠান্ডা পানি না খাওয়াই ভালো। স্বাভাবিক বা হালকা গরম পানি পান করা পেট, অন্ত্র ও লিভারের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এর ফলে শরীর সহজে খাবার হজম করতে পারে, অপ্রয়োজনীয় গ্যাস বা অ্যাসিডিটি কমে যায় এবং দিনের শুরুটা হয় আরামদায়ক। ঠান্ডা পানি খেতে চাইলে খাবারের পর বা দিনের গরম সময়ে তা পান করাই উত্তম, কিন্তু সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে একেবারে বরফ ঠান্ডা পানি এড়িয়ে চলাই স্বাস্থ্যকর সিদ্ধান্ত হবে।

এম.কে.

×