
ছবি: প্রতীকী
ঘুম ভাঙার পরের প্রথম দশ মিনিট আসলে সারা দিনের মেজাজ, শক্তি আর মনোভাবকে প্রভাবিত করে। আমরা অনেক সময় ঘুম থেকে উঠেই তাড়াহুড়া করে ফোন হাতে নিই, সোশ্যাল মিডিয়া দেখি বা চিন্তায় ডুবে যাই। এতে মন শান্ত হওয়ার বদলে আরও অস্থির হয়ে ওঠে। অথচ এই প্রথম কয়েক মিনিট যদি সচেতনভাবে নিজের জন্য ব্যবহার করা যায়, তাহলে দিনটা অনেক সুন্দর ও কার্যকরভাবে কাটতে পারে।
ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথমেই দরকার কয়েক মুহূর্ত স্থির হয়ে থাকা। চোখ খুলে সাথে সাথে বিছানা ছাড়ার পরিবর্তে এক-দুই মিনিট নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন। ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস নিন আর ছাড়ুন। এতে রাতের ঘুম থেকে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে জেগে ওঠে এবং শরীরে অক্সিজেন প্রবাহ বেড়ে যায়। একই সাথে মনেও শান্ত ভাব আসে। এই সময়টি নিজের জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময়।
এরপর ধীরে ধীরে শরীরকে নড়াচড়া করানো দরকার। হালকা স্ট্রেচিং বা হাত-পা মেলানো শুধু পেশি নয়, রক্ত সঞ্চালনকেও সক্রিয় করে তোলে। ঘুমের সময় দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থায় থাকার ফলে শরীর কিছুটা শক্ত হয়ে যায়। কয়েক মিনিটের এই স্ট্রেচিং আপনাকে সতেজ করে দেবে এবং দিন শুরু করার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করবে।
ঘুম ভাঙার পর যত দ্রুত সম্ভব প্রাকৃতিক আলো পাওয়া ভালো। জানালা খুলে সূর্যের আলো মুখে লাগানো বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকানো শরীরের ভেতরের জৈবিক ঘড়িকে সক্রিয় করে। সূর্যের আলো মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা মন ভালো রাখে এবং অলসভাব দূর করে।
এই সময় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। চোখ খোলার পর মনে মনে অন্তত তিনটি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞতা অনুভব করা যেতে পারে—যেমন সুস্থভাবে ঘুম থেকে ওঠা, পরিবারের ভালোবাসা, বা আজকের নতুন সুযোগগুলো। এটি মনের ভেতর ইতিবাচক শক্তি জাগায় এবং সারাদিন সেই অনুভূতি টিকে থাকে।
অনেকেই ঘুম থেকে উঠেই দিনের কাজের চাপ বা সমস্যার কথা ভাবতে শুরু করেন, যা মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। বরং প্রথম দশ মিনিট নিজেকে অনুপ্রাণিত করার জন্য কোনো ইতিবাচক বাক্য মনে মনে বলা যেতে পারে, যেমন—“আজকের দিনটা আমার জন্য ভালো যাবে” বা “আমি শক্তি ও উদ্যমে ভরপুর”। এই ধরনের বাক্য মস্তিষ্কে ইতিবাচক সংকেত পাঠায়, যা সারাদিন মনোভাবকে প্রভাবিত করে।
শরীরের ভেতরের জড়তা কাটাতে এই সময় এক গ্লাস স্বাভাবিক বা হালকা গরম পানি খাওয়াও খুব উপকারী। ঘুমের সময় শরীর দীর্ঘক্ষণ পানি ছাড়া থাকে, ফলে হালকা পানিশূন্যতা তৈরি হয়। পানি খেলে শুধু শরীর সতেজ হয় না, হজম প্রক্রিয়াও সক্রিয় হয়ে ওঠে। চাইলে পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে, যা বাড়তি ভিটামিন সি সরবরাহ করে।
যদি সময় মেলে, প্রথম দশ মিনিটে কয়েক মুহূর্ত প্রার্থনা, ধ্যান বা মননশীল চর্চায় কাটানো যায়। এটি মানসিক স্বস্তি আনে, চিন্তাগুলোকে গুছিয়ে নেয়, আর এক ধরনের গভীর মনোসংযোগ তৈরি করে, যা পরের কাজগুলো সহজ করে দেয়।
সবচেয়ে জরুরি হলো ঘুম থেকে ওঠার পরপরই মোবাইল ফোন, ইমেইল বা খবরের দিকে না ঝোঁকা। দিনের শুরুতেই নেতিবাচক খবর বা কাজের চাপ দেখে ফেললে মন অস্থির হয়ে যায়। বরং অন্তত প্রথম দশ মিনিট নিজের ভেতরেই মনোযোগ রাখা ভালো।
ঘুম ভাঙার পরের এই ছোট্ট দশ মিনিটের সঠিক ব্যবহার আসলে সারাদিনের জন্য এক ধরনের মানসিক ও শারীরিক পুঁজি তৈরি করে। এটি মনকে ইতিবাচক, শরীরকে সতেজ এবং চিন্তাকে স্পষ্ট রাখে। ব্যস্ত জীবনেও এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে অনেক চাপের মাঝেও দিনটা সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও আনন্দময় কাটানো সম্ভব।
এম.কে.