ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

ক্ষুদ্র খামারিদের দুর্দিন

প্রকাশিত: ২১:১২, ৬ মে ২০২৫

ক্ষুদ্র খামারিদের দুর্দিন

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হাত ধরে পোল্ট্রি খাত প্রায় স্বনির্ভর হলেও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাস তাদের প্রায় সবাইকে পথে বসিয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক লেনদেন, ব্যবসাবাণিজ্য প্রায় সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শাটডাউনের কারণে। এরপর মহামারির উপদ্রব ক্রমশ কমে গেলেও এহেন দুরবস্থা থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পোল্ট্রি খাত।

এর অন্যতম কারণ হলো পোল্ট্রি খাতে একাধিক বহুজাতিক কোম্পানির প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি সুস্পষ্ট হতে পারে। কিছুদিন আগে দেশের প্রায় সর্বত্র ডিমের বাজারে দামের উল্লম্ফন শুরু হলে প্রবল হৈ চৈ পড়ে যায় গণমাধ্যমে। এক পর্যায়ে সরকার বাধ্য হয়ে বিদেশ থেকে ডিম আমদানি করতে বাধ্য হয় দাম নিয়ন্ত্রণে। এক্ষেত্রেও আধিপত্য অব্যাহত রাখে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। গত কয়েক মাস ধরে ডিমের কম দামের খবর আসেনি পত্রপত্রিকায়। কেননা, বর্তমানে ডিমের দাম স্থিতিশীল ও সহনীয়। ফলে, ক্রেতাসাধারণ আছেন স্বস্তিতে। 
তবে এর ফলে পথে বসার উপক্রম হয়েছে ক্ষুদ্র খামারিদের। খামার পর্যায়ে ডিমের সরকারি দাম ১০ দশমিক ৫৬ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে খামারিদের ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে ৭ দশমিক ৮৫ টাকায়। ফলে, গুনতে হচ্ছে লোকসান। ক্ষুদ্র খামারিদের মুরগির খাবার বা পোল্ট্রি ফিডের পেছনে ব্যয় করতে হচ্ছে ৭০ শতাংশ। তদুপরি বাজারে হাঁস-মুরগির ছানা, টিকা, ওষুধপত্রের দামসহ রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বেশি। এ ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। 
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মুরগি উৎপাদনের ১০ শতাংশ আসে ১০টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে। বাকি ৯০ শতাংশ জোগান দেন ক্ষুদ্র খামারিরা। তদুপরি বড় কোম্পানিগুলো ডিম, মুরগি, ছানা, খাদ্য, ওষুধপত্র প্রায় সব রকম পোল্ট্রি উপকরণ উৎপাদন করে থাকে। ফলে, তাদের লোকসান দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে অব্যাহত লোকসানের মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।

এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র খামারিদের বাঁচার অন্যতম উপায় হতে পারে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বা চুক্তিভিত্তিক ব্রয়লার মুরগি ও ডিম উৎপাদন। এর মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ক্ষুদ্র খামারিদের মুরগির ছানা, পোল্ট্রি ফিড, টিকা এবং ওষুধপত্র চুক্তিভিত্তিতে সরবরাহ করবে। তবে তাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে বড় কোম্পানিগুলোর কাছে। এর পাশাপাশি ক্ষুদ্র খামারিদের স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণের সুবিধাও প্রদান করা যেতে পারে। 
 দেশে পোল্ট্রি খামার রয়েছে প্রায় ১ লাখ। প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৫০ লাখ এবং পরোক্ষভাবে এক থেকে দেড় কোটি মানুষ এর সঙ্গে জড়িত। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী মুরগির মাংস ও ডিমের সরবরাহ বাড়াতে নতুন উদ্যোগ কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বা চুক্তিভিত্তিক পোল্ট্রি খামার ব্যবসায়ীদের মনে আশার সঞ্চার করেছে। স্বল্প পুঁজিতে নিশ্চিত লাভের এ ব্যবসা মুরগির খামারিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

পুরানো খামারিদের পাশাপাশি সারাদেশে শিক্ষিত ও নিরক্ষর বিভিন্ন শ্রেণির নারী-পুরুষ কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে মুরগি ও ডিম উৎপাদনের ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছেন। সংকট সব সময় থাকবে, তবে এ শিল্পের সম্ভাবনাও রয়েছে ব্যাপক। এজন্য গড়ে তুলতে হবে পোল্ট্রি শিল্পের জন্য আলাদা ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা করপোরেশন। ভোক্তা পর্যায়ে বিবিধ পোল্ট্রিপণ্যের দাম নির্ধারণও সময়ের দাবি।

×