ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

৬৪ সচিবের আমলনামা

প্রকাশিত: ২১:১৪, ৬ মে ২০২৫

৬৪ সচিবের আমলনামা

সম্পাদকীয়

আন্তর্বর্র্তী সরকার বিদায়ী সরকারের আমলে অবসরপ্রাপ্ত ৬৪ সচিবের আমলনামা যাচাইয়ের কাজে নেমেছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের সময় ৬৪ জেলায় দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সরকারি সহায়তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ৬৪ জেলার সচিবের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।

ত্রাণ ও অর্থ বিতরণে প্রভাব বিস্তার, ডিসিদের ওপর ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ছাত্র-জনতাসহ বিরোধী দলের ওপর আক্রমণে সহযোগিতার অভিযোগে এসব তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের সবাই অবসরে গেছেন ইতোমধ্যে। তাদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে সবকিছু। কোনো সচিবের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা লোপাটসহ বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগও আছে। 
বিদেশে অর্থপাচার বহুল আলোচিত একটি বিষয়। এ নিয়ে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা থাকলেও প্রামাণ্য কোনো দলিল ছিল না। দীর্ঘদিন পরে হলেও এতদিনে এ সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২৮ আগস্ট দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র জানার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়।

শ্বেতপত্রে ২৪টি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়েছে তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা সরকারের কতিপয় মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ এবং দলীয় আমলাদের বিশেষ করে অর্থনৈতিক দুর্নীতি লুটপাট ও বিদেশে অর্থপাচারের বিস্তারিত বর্ণনা, যা এক কথায় শিউড়ে ওঠার মতো।
আমলাদের স্বেচ্ছাচারিতা, দৌরাত্ম্য ও আধিপত্য তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলেই শুরু হয়। পরে দেশ বিভাগপরবর্তী পাকিস্তানে সেনা শাসকদের হাত ধরে তা অনেক গুণ বেশি বৃদ্ধি পায়। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলীয় সরকারের আমলে তা জেঁকে বসে। বিগত সরকারের আমলে তা প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এখন সময় এসেছে আমলাদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টেনে ধরার। 
বিগত সরকারের আমলে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি  আমলাদের ব্যাপক ও ভয়াবহ দুর্নীতি এবং বিদেশে অর্থপাচারের যথাযথ তদন্তসহ কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এর দৌরাত্ম্য ও প্রকোপ বহুলাংশে কমবে বলেই প্রত্যাশা। 
বিদেশে যেভাবে এবং যে পদ্ধতিতেই অর্থপাচার করা হোক না কেন, সেদিকে নজরদারি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো, দুর্নীতি দমন কমিশনও এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। বিদেশে অর্থপাচার বন্ধ হলে দেশের সার্বিক উন্নয়নসহ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান আরও বাড়বে নিশ্চয়ই।

×