ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক ডাকাতি ॥ রুমা ছাত্রলীগ সভাপতিসহ সাতজন গ্রেপ্তার

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাংক ডাকাতি ॥ রুমা ছাত্রলীগ সভাপতিসহ সাতজন গ্রেপ্তার

রুমা ছাত্রলীগ সভাপতিসহ সাতজন গ্রেপ্তার

বান্দরবানের রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, মসজিদে হামলা, পুলিশ, আনসারের অস্ত্র-টাকা লুটের ঘটনায় কুকি-চিন সদস্য সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছে রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও এক নারীসহ সাতজন। আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে বান্দরবান চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম এমরান এ আদেশ প্রদান করেন।
আসামিরা হলেনÑ রুমা উপজেলার মুনলাইপাড়া এলাকার লাল নুন নোয়াম বম (৬৮), লাল দাভিদ বম (৪২), চমলিয়ান বম (৫৬), লাল পেকলিয়ান বম (৩২), রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ভান মুন নোয়াম বম (৩৩), লালমিন বম (৫০), বান্দরবান সদর উপজেলার লাইমিপাড়ার মৃত সিয়াম ময় বমের ছেলে ভানবিয়াক লিয়ান বম (২৩)।

এদিকে, বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অংসাইং উ (পুলু) এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন মানিকের স্বাক্ষরিত ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ইং তারিখের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছেÑ বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সংগঠনের গঠনতন্ত্রবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থি অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণœ হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ভান মুন নোয়াম বমকে (সভাপতি, রুমা উপজেলা শাখা) বহিষ্কার করা হলো।
আদালতের জিআরও বিশ্বজিৎ সিংহ জানান, রুমায় উপজেলা চত্বর ঘেরাও করে আনসার সদস্যদের অস্ত্র-গোলাবারুদ লুটের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার ছয় আসামি ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, বান্দরবানের রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, মসজিদে হামলা, টাকা-অস্ত্র লুট ও ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার  নারীসহ ৭৮ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এ ছাড়াও এই ঘটনায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৭৮ জনের মধ্যে ৫৯ জনকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর ও তিন নারীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি প্রদান করেছেন আদালত। 
তিন উপজেলা নির্বাচন স্থগিত ॥ পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানের কারণে পার্বত্য বান্দরবানের থানচি, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলা নির্বাচন আপাতত স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার দুপুরে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। অপরদিকে, রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় কেএনএফের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে রুমা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতিসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, মসজিদে হামলা, পুলিশ-আনসারের অস্ত্র-টাকা লুটের ঘটনায় বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি, রুমা এবং রোয়াংছড়ি উপজেলায় যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলমান রয়েছে। এ কারণে আপাতত এই তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। পরে সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করা হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। থানচি, রোয়াংছড়িতে আগামী ৮ ও রুমায় ২১ মে ভোট হওয়ার কথা ছিল। 
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। মূলত পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযানের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল রুমার সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি, তারাবি নামাজরত অবস্থায় মসজিদে হামলা, পুলিশ-আনসারের অস্ত্র ও টাকা লুট করে। পরে ৩ এপ্রিল থানচি সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখায় দিন-দুপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ জড়িত থাকায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে।

এ ঘটনায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ২২ নারীসহ ৭৮ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এ ছাড়াও এই ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭৮ জনের মধ্যে ৫৯ জনকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর ও তিন নারীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি প্রদান করেছেন আদালত।

নিহত কেএনএফের সদস্যের লাশ হস্তান্তর ॥ এদিকে বান্দরবানের রুমায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্যের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষ করে নিহতের চাচার কাছে লাশটি হস্তান্তর করে পুলিশ। 
নিহত সশস্ত্র কেএনএফ সদস্য লালরেম রোয়াত বম (৩২) রুমার চুংচুংপাড়ার বাসিন্দা লাল থোয়াই তেং বমের পুত্র। 
বিষয়টি নিশ্চিত করে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাজাহান দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছেই লাশটি হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের পক্ষে নিহতের চাচা লাশটি গ্রহণ করেন। 
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রুমা উপজেলার দুর্গম মুনলাইপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) একজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয়। এ সময় কেএনএফের ব্যবহৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

×