ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

হুমকির মুখে বহু স্থাপনা

ভোলায় বর্ষার আগেই নদী গর্ভে বিস্তীর্ণ এলাকা

নিজস্ব সংবাদদাতা. ভোলা

প্রকাশিত: ০১:৫৪, ৫ মে ২০২৫

ভোলায় বর্ষার আগেই নদী গর্ভে বিস্তীর্ণ এলাকা

ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ভোলা খাল এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙনের পরিস্থিতি

ভোলার মেঘনা নদী আবার ও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের বিস্তৃন এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে  পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধ , অসংখ্য বসত ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা।

ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বর্ষা মৌসুমে ঘর বাড়িসহ বহু স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।স্থানীয়রা জানান, গত বছর বর্ষা থেকে এ পর্যন্ত সদর উপজেলা ধনিয়া ইউনিয়নের নাছিরমাঝি থেকে শিবপুর ইউনিয়নের ভোলা খাল, বালুর মাঠ এলাকা পর্যন্ত মেঘনার তীর ভেঙে বহু এলাকার অসংখ্য ঘর বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বর্তমানে শিবপুরের ভোলা খালের মাথা মাছঘাট এলাকার  মাটিরবাঁধ, সড়ক, বসত ঘর, মাছের আড়ৎ, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়েছে।

গ্রীষ্মের শুরুতেই নদীর তীরের ফসলি ও বাগান জমি ও বসত বাড়ি তীব্র ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। এর মধ্যে ভোলা খালের মাথায় মাছঘাট এলাকার প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছে। আর মাত্র ৬০মিটার ভাঙলেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করবে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসি।
ভোলার শিবপুর ভোলা খালের মেঘনা নদীর তীরের বৃদ্ধা রেনু বেগম জানান, এক সময় মধুপুড়াতে স্বামী সন্তান নিয়ে তার সাজানো সংসার ,ঘর বাড়ি সবই ছিল। কিন্তু অশান্ত মেঘনা নদী সুখের সংসার তছনছ করে দিয়েছে। একের পর এক কয়েক দফা নদী ভাঙ্গনের সাথে জীবন যুদ্ধে তার পরিবারটি সর্বশান্ত। শুধু রেনু বেগমই নয়।

তার মতো এরকম ভিটেমাটি হারানো অসংখ্য পরিবারের গল্প ভোলার শিবপুর ইউনিয়নের ভোলা খাল এলাকাসহ মেঘনা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গেলেই শুনা যায়। নদী ভাঙ্গনে শিকার অসংখ্য পরিবার এখন বেড়িবাঁধ এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। 
এদিকে অভিযোগ রয়েছে,ভোলার মেঘনা নদীতে যত্রতত্র ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারনেও নদী ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্লক বাঁধ প্রয়োজন। তা না হলে নদী ভাঙ্গন থেকে এই এলাকা রক্ষা করা সম্ভব নয়। বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে অতি জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ভোলা শহরও হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তাই দ্রুত সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ ও নদীর তীর সংরক্ষণের দাবী জানান এলাকাবাসী। স্থানীয়রা মনে করছেন,ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত সিসি ব্লক দিয়ে সংরক্ষণ করা না গেলে দিন দিন ছোট হয়ে আসবে দ্বীপ জেলা ভোলার মূল ভূখ-। পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, ভোলা জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাড়ে তিন শত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে।এর মধ্যে ৪৯.৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও ৬০ কিলোমিটার নদীর তীর সিসি ব্লক দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভোলার শিবপুরে বণ্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় ৬০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং কাজ চলমান রয়েছে।

পাশাপাশি আরো ২০০ মিটারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এখানে প্রটেকশন ওর্য়াক শুরু হবে। এছাড়াও ৬২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ধনিয়া, শিবপুর, মেদুয়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্প অনুমোদন হলে নদী ভাঙ্গন স্থায়ী ভাবে রোধ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সিরাজগঞ্জ ॥ যমুনা নদীতে আকস্মিক পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় শত শত বিঘা বাদামের খেত তলিয়ে গেছে। এ কারনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা অপরিপক্ক বাদাম তোলার চেষ্টা করছেন। রবিবার (৪ঠা মে) দুপুরের দিকে স্থল ইউনিয়নের সন্তোষা চরের সরেজমিন দেখা গেছে সম্মিলিত বাদাম চাষীরা পানিতে নেমে অপরিপক্ক বাদাম তুলছেন।

এতে ক্ষতিগ্রস্থ বহু কৃষক পরিবার লোকশানের মুখে পড়েছে।চৌহালী উপজেলা কৃষি অফিস ও চাষীরা জানান, যমুনা নদীতে বিধ্বস্ত চৌহালী উপজেলার নতুন করে জেগে ওঠা চরে বিগত বছরের ন্যায় এবারও বাদাম চাষ করেছিল বহু কৃষক। স্থল ইউনিয়নের সন্তোষা, কোচগ্রাম, বসন্তপুর, মালিপাড়া, ছোট চৌহালী-বড় চৌহালী, তেঘুরি, স্থল চর, মি¯্রগিাতি ও লাঙ্গলমুড়া, উমারপুর ইউনিয়নের দত্তকান্দি, ছোল, উমারপুর, খাষকাউলিয়া, ঘোড়জান, সদিয়া চাঁদপুর, স্থল ও খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিমচর এলাকা প্রায় ২২ শ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়।

অল্প কিছু দিনের মধ্যে বাদাম ঘরে তোলার প্রস্তুতি ছিল তাদের। আকস্মিক জোয়ারে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরের নিচু এলাকার বাদামের খেত তলিয়ে যায়। এতে দক্ষিন ও পশ্চিমাঞ্চলের দুই শতাধিক হেক্টর জমির প্রায় ১৯শ মন বাদাম নষ্ট হয়েছে। এ কারনে ওই এলাকার শতাধিক কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।

সন্তোষা চরের আবুশামা, লোকমান হোসেন, ছানোয়ার হোসেন, মোকছেদ আলী  ও জয়নাল হোসেন জানান, অন্যান্য বছরে বাদামের বাম্পার ফলন দেখে এবার বেশি খেতে চাষ করি। তবে আমাদের এলাকায় পানিতে তলিয়ে বহু জমির বাদাম নষ্ট হয়েছে। এ কারনে কোমর পানিতে নেমে অপরিপক্ক বাদাম তুলতে হচ্ছে। আগামীতে সঠিক সময়ে কৃষি প্রণোদনার বীজ বিতরণের দাবি জানাই।
এদিকে যমুনার পশ্চিম তীর এনায়েতপুরে দেখা যায়, পানিতে জমি তলিয়ে যাওয়ায় বাদাম তুলে নদীর পাড়ে কৃষক পরিবারের নারী, শিশুসহ সব সদস্য মিলে বাদাম ছাড়াচ্ছেন। আবার কোথাও কোথাও তারা জমির পাড়ে শুকনা স্থানে বাদাম রোদে শুকাচ্ছে। 
এতে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্তোষা গ্রামের ইউপি সদস্য হাসান আলী জানান, কৃষকদের স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে গেছে, বাদাম খেত নষ্ট  ও তলিয়ে যাওয়ায় বহু কৃষক এবছর লোকশানের মুখে পড়বে।

সরকারী ভাবে তাদের সহায়তার দাবি জানাই।এবিষয়ে চৌহালী উপজেলার স্থল ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু হুরাইয়া জানান, যমুনার চরাঞ্চলের বাদাম খেত তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। অপরিপক্ক বাদাম তুলে বহু কৃষক পরিবার লোকশানের মুখে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে, সরকারী সহায়তা এলে দেয়া হবে। এছাড়া বিশেষ প্রণোদনার জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।

×