ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ২৯ নভেম্বর ২০২২

রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে

ম্যাপে রাজশাহী

রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তেজনা বাড়ছে। রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে বিএনপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগও মাঠে নেমেছে। একদিকে সমাবেশ সফল করতে বিএনপি মাঠের রাজনীতি শক্ত করার চেষ্টা করছে তো অপরদিকে রাজশাহী আওয়ামী লীগও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। দুই দলই মাঠে নেমেছে নিজ নিজ বলয় থেকে। পাল্টাপাল্টি আওয়াজ দিচ্ছেন তারা। বিএনপি বলছে, রাজশাহীর গণসমাবেশ হবে ঐতিহাসিক। আর আওয়ামী লীগ বলছে, রাজশাহীর মাটিতে রাজনীতির নামে কাউকে অপরাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে মুলত: রাজশাহীতে এখন উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে।

এদিকে এরইমধ্যে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্র্রাসা মাঠে মঞ্চ ও প্যান্ডেল করতে গিয়ে পুলিশের বাধায় পড়েছে বিএনপি। পুলিশ বলছে, এখনো বিএনপি গণসমাবেশ করার জন্য মাদ্রাসা মাঠে অনুমোতি পায় নি। সর্বশেষ মঙ্গলবার বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিএনপি নেতাদের জন্য থাকার জায়গা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে বিএনপি। পুলিশ বিএনপিকে স্থাপনা করতে দেয় নি।

রাজশাহী নগর পুলিশের ভাষ্য অনুমতি না নিয়েই গণসমাবেশের মঞ্চ নির্মাণ কাজ করায় পুলিশ তাতে বাধা দিয়েছে। তবে আগামী ৩ ডিসেম্বর নগরের মাদ্রাসা মাঠে গণসমাবেশের আয়োজন করতে চায় বিএনপি। বর্তমানে ওই মাঠে তালা ঝুলিয়ে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গত সোমবার সকালে মাঠে মঞ্চ নির্মাণের জন্য ডেকোরেটরের লোকজন গেলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরে এ নিয়ে জেলা ও নগর বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে গণসমাবেশের মঞ্চ নির্মাণের বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলেন বিএনপির নেতারা।

রাজশাহী জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আমাদের মাঠ দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসা মাঠে পুলিশ তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমরা আবেদন করেছি, কিন্তু এখনো মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ ককটেলের নামে নতুন সন্ত্রাস তৈরি করছে। নয়টি উপজেলায় মামলা হয়েছে। সেই মামলায় পুলিশ গ্রেফতার বাণিজ্য করছে।

রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘রাজশাহী জেলার সব থানাতেই মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলাগুলোর নকল দেওয়া হচ্ছে না। আবেদন করার পরও সেটা পাচ্ছি না। বিদেশে থাকা নেতাকর্মীদের নামেও মামলা হয়েছে। জেলার বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁদের নামেও মামলা হচ্ছে। তবে যত বাধাই আসুক, আমরা এই সমাবেশ করব।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেবে জেলা প্রশাসন। সমাবেশ ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয় পুলিশ। আমার জানামতে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিএনপি মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পায়নি। আর সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অন্য জায়গায় সমাবেশের দুই/তিন দিন আগে অনুমতি দেয়া হয়েছে। রাজশাহীতে এখনো চারদিন সময় আছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, মাঠ ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। আমি শুনেছি, বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো সেটা হাতে পাননি। আবেদনপত্র পেলে দেখবো বিএনপি কী শর্তে মাঠটি চেয়েছে। তারপর সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। 

বিএনপি নেতারা বলছেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিভাগে বিএনপি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চায়। দেশজুড়ে ঘোষিত বিভাগীয় গণসমাবেশের শেষ দিকে এসে সরকারের প্রতিবন্ধকতা বাড়তে পারে। তাই আঞ্চলিকভাবে শক্তি ও সামর্থ্য বিবেচনায় ঢাকার মহাসমাবেশের আগের সমাবেশটি রাজশাহীতে করার কৌশল নিয়েছেন তারা।

 বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, যেহেতু রাজশাহীতে গণসমাবেশ শেষের দিকে তাই সরকার সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা আরও বাড়তে থাকবে। ঢাকার সমাবেশের আগে সরকার কঠোর অবস্থানে যেতে পারে। শক্তি-সামর্থ্যের বিচারে রাজশাহীতে আমাদের অবস্থান অনেক বেশি শক্তিশালী। এসব বিবেচনা করে রাজশাহীতে শেষের দিকে গণসমাবেশ আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হবে রাজশাহীতে। 

এদিকে সমাবেশ ঘিরেই ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজশাহী অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। হঠাৎ করে বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণসহ সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশকে কেন্দ্র করে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এরইমধ্যে দায়ের হয়েছে অর্ধশতাধিক মামলা। বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করছেন, গণসমাবেশকে টার্গেট করে প্রশাসন দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা সাজানো হচ্ছে। সেসব ঘটনায় মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, গণসমাবেশকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা নানা অপতৎপরতায় মাঠে নেমেছে। তাদের পাল্টা জবাব দিতে আওয়ামী লীগও প্রস্তত আছে। তবে গণসমাবেশ ঘিরে বিএনপির কৌশল নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নয় বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। 

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বিএনপি আত্মতৃপ্তি পেতে পারে যে ৮টি জেলা থেকে সমাবেশে লক্ষাধিক লোক এসেছে। লক্ষাধিক লোক দিয়ে তো আসলে আওয়ামী লীগের মতো একটি বটবৃক্ষের পাতা ছেড়াও সম্ভব না। আর বিএনপি কোথাও বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে সেটি প্রতিহত করার প্রস্ততি আমাদের আছে। আমরা কোনো মারামারিতে লিপ্ত হতে চাই না। সেটা আওয়ামী লীগের কাজও নয়। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে আমরা জনগণকে নিয়েই সমস্ত অরাজকতা প্রতিহত করবো। 

বিভাগীয় গণসমাবেশ প্রশ্নে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহী এখনও বিএনপির দুর্জয় দুর্গ। আমরা বহু ঘাতপ্রতিঘাত মোকাবিলা করেছি। এখন আমাদের আর কোনো ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। যতই বাধা আসুক কম করে হলেও ১৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। এমন জনস্রোত তৈরি হবে যে পুরো রাজশাহী শহরই তা ছড়িয়ে পড়বে। অনেক ঘটনার সূতিকাগার এই রাজশাহী থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে।

 

টিএস

×