ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

আপনি বেঁচে আছেন বলেই

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আপনি বেঁচে আছেন বলেই

সে রাতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন বলেই বেঁচেছিলেন এবং আজও বেঁচে আছেন বলেই ওরা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ও ইতিহাসের ধারা পাল্টাতে পারেননি। জাতির পিতার সোনার বাংলাও অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে এবং নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন। পিতার মতোই হয়ত এবারও তার জন্মদিনটি নীরবে-নিভৃতে পার হয়ে যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার আগের জীবনটা কাটিয়েছেন হয় কারাগারে নয়ত রাজপথে জনতার মাঝে। কোনদিন জন্মদিন উদযাপন করেননি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ যখন সে সুযোগটি এলো তখনও তিনি উদযাপন করলেন না। বললেন, যতদিন বাংলায় ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে ততদিন কিসের জন্মদিন? আমার জন্মদিনে কোন উৎসব হবে না। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই চলেছেন শেখ হাসিনা। তিনিও কোন উৎসব আনন্দ করতে দিচ্ছেন না। তারপরও তার সুস্বাস্থ্য দীর্ঘ জীবন কামনা করে হয়ত মিলাদ হবে, প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হবে। বঙ্গবন্ধুর মতোই শেখ হাসিনার জন্ম টুঙ্গিপাড়ার বনেদি শেখ বাড়িতে। দক্ষিণ বাংলার এক ছায়া সুনিবিড় গ্রাম। একদিকে মধুমতি আরেক দিকে বাইগার নদীর সংযোগ খালপাড়ে শেখ বাড়ি। বর্ষায় সারা এলাকা পানিতে ডুবে থাকে। এখানেই শৈশব কেটেছে শেখ হাসিনার। রাস্তাঘাট ছিল না বললেই চলে। সুদিনে বন্ধুদের সঙ্গে স্কুল যেতে হতো ক্ষেতের আল দিয়ে। তারপর একদিন ঢাকায় চলে এলেন। এখানে এসেও আজ এ বাড়ি তো কাল ও বাড়ি। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেন এবং বেশির ভাগ সময়ই কারাগার এই তার আবাসস্থল। এসব কারণেই অনেকেই বাসা ভাড়া দিতে চাইত না। তারপর ১৯৬১ সালে ধানম-িতে (৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন) এসে স্থায়ী হন। আজিমপুর গার্লস হাইস্কুল, ইডেন গার্লস কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ফার্স্ট ইয়ার অনার্সে ভর্তি। এখানে শেষবর্ষ অনার্সে অধ্যয়নকালে তার বিয়ে হয় পিএইচডি ডিগ্রীধারী এক মেধাবী তরুণ অণুবিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ আলী মিয়ার সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির অবিসংবাদী নেতা এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে পাকিস্তান ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলির ৩০০ আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এককভাবে ১৬৭ আসনে জয়লাভ করে। এর ভিত্তিতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার একমাত্র সাংবিধানিক এবং নৈতিক ও আইনী অধিকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই ছিল, আর কারও নয়। কোন মিলিটারি মেজরের তো নয়ই, প্রশ্নই ওঠে না, স্বাধীনতার ঘোষণার পরই পাকিস্তান সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী কারাগারে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আটক রাখে। আর বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ হাসিনা ও তার স্বামী ড. এম ওয়াজেদ আলী মিয়াসহ পরিবারের সকলকে গ্রেফতার করে ধানমন্ডি ১৮ নং সড়কের এক বাড়িতে সাব-জেলে আটক করে রাখে। এই অন্ধকার স্থানে শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হয়। এই সঙ্কটাপন্ন জীবন টানতে টানতে তার স্বাভাবিক লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে। তারপরও বিজয়ের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করেন এবং এমএতে ভর্তি হন। কিন্তু ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডির কারণে আর এমএ ফাইনাল পরীক্ষাটা দেয়ার সুযোগ হয়নি। এই আক্ষেপ তার রয়ে গেছে আজও। ঝুঁকিপূর্ণ জীবন এবং এরপরে দীর্ঘ ৬ বছর তাকে স্বামী-সন্তান ও ছোট বোন শেখ রেহানাসহ বিদেশের মাটিতে কাটাতে হয়েছে। মাস্টার্স ডিগ্রী তার জন্য ছিল অসম্ভব ব্যাপার কেবল রাজনৈতিক কারণে, কারাভোগের কারণে। কিন্তু তিনি অত্যন্ত মেধাবী এবং জেদী সাহসী ছিলেন বলেই সঙ্কটের মধ্যেও গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন সম্ভব হয়েছে। বলা ভাল জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সঙ্কটের মধ্যে, ঝুঁকির মধ্যে থেকেও তিনি লক্ষচ্যুত হননি এতটুকু। এই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরো ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সংগঠনের অনেক বড় পদে যেতে পারতেন; কিন্তু তিনি একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তিনি আজিমপুর গার্লস হাইস্কুলে তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ছেন। আইয়ুববিরোধী আন্দোলন চলছে, বিশেষ করে ১৯৬২ সালের হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন চলছে। বটতলায় ছাত্র সমাবেশ ডাকা হয়েছে। তিনি তার আজিমপুর গার্লস হাইস্কুলের একদল ছাত্রীকে অরগানাইজ করে মিছিল নিয়ে বটতলায় আসছিলেন। কাছাকাছি এসে দেখলেন পুলিশ সভাস্থলে আক্রমণ করেছে, লাঠিপেটা করছে। তিনি তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে রোকেয়া হলের কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে হলের ভেতরে ঢুকে পড়লেন। মেইন গেট বন্ধ ছিল এবং দারোয়ান কিছুতেই খুলছিলেন না। এভাবে তার ছাত্রজীবন এগিয়ে চলছিল। ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালে ইডেন ছাত্রী সংসদের নির্বাচন। ছাত্রলীগ থেকে তাকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুরোধ জানানো হলো। তখন বঙ্গবন্ধু কারাগারে, বেগম মুজিব তাকে ডিসকারেজ করলেন না, বরং উৎসাহ দিলেন। নির্বাচন হলো। তিনি বিপুল ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে ভিপি নির্বাচিত হলেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা অর্থাৎ ৬+১১ দফা ছাত্র গণঅভ্যুত্থান দানা বাঁধতে শুরু করেছে। আইয়ুবের সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধু ক্যান্টনমেন্টে আটক। ক্যাম্পাস উত্তপ্ত। সকাল-দুপুর-বিকেল মিছিলে মিছিলে মুখরিত ক্যাম্পাস। স্লোগান উঠছে পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা, পিন্ডি না ঢাকা ঢাকা ঢাকা, তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব, জেলের তালা ভাঙব শেখ মুজিবকে আনব। এক পর্যায়ে স্লোগান উঠল জয় বাংলা বীর বাঙালী অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর ইত্যাদি। শেখ হাসিনা মিছিলের অগ্রভাগে থাকতেন। যারা বলেন রান্নাঘর থেকে রাজনীতিতে এসেছেন তারা ভুলে যান বাংলাদেশের এক নম্বর রাজনৈতিক পরিবারে তার জন্ম অর্থাৎ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শ্রেষ্ঠ সন্তান, যার ধমনীতে বইছে বঙ্গবন্ধুর রক্ত, তিনি জনগণের আন্দোলনের থাকবেন না এ কি হয়? তিনি ছিলেন এবং সংক্রিয়ভাবে ছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৫ আগস্টের পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী যদি আশ্রয় না দিতেন তাহলে কি যে হতো আল্লাহ মালিক জানে। অসহায়ের মতো দিল্লীতে ছিলেন। মিসেস গান্ধী ড. এম ওয়াজেদ মিয়াকে চাকরি দিয়েছিলেন বলেই কিছুটা শান্তি পেয়েছিলেন। এর মধ্যেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের জন্য লন্ডনে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। অনেকেই সেদিন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হতাশ হননি। অবশেষে ক্ষমতায় গিয়ে সফল হলেন। ১৯৮১ সালে ঢাকার ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচন করলে তিনি ওই সালেই ১৭ মে সকল বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরেন। তখনকার মিলিটারি শাসক জিয়া শেষ পর্যন্ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু ব্যর্থ হন। তারপর থেকে তার আরেক জীবন। ১৯৮১ থেকে ২০১৯ আটত্রিশ বছরের নেতৃত্ব। তার মধ্যে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি টানা তিনবার রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রনেতা। বাকি সময়টাও আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে বাঙালী জাতির নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং গণআন্দোলনের মাধ্যমে মিলিটারি জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার পতন ঘটিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আজও ক্ষমতায় আছেন। আর এই সময়ের মধ্যে তিনি বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। অবশ্য বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে আজকের চেহারা আরও দুই দশক আগেই জনগণ দেখতে পেত। তারপর একটু দেরিতে হলেও শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশ যেখানে পৌঁছেছে তার কয়েকটি উদাহরণ : ১. শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেন ২. জাতিকে স্বপ্ন দেখান ৩. স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেন ৪. বঙ্গবন্ধুহত্যার বিচার ৫. জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার ৬. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ৭. স্বৈরাচারের বিপরীতে গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ ৮. জিডিপি ৮.১৩% ৯. মূল্যস্ফীতি ৫.৬৯% ১০. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ১১. এবারের বাজেট ৫,২৩,১২৩ কোটি টাকা ১২. মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলার ১৩. দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার ৪১% থেকে ২১%-এ নেমেছে ১৪. দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪ কোটি টন ১৫. মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে ৩য় ১৬. সবজি উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ ১৭. গার্মেন্টস রফতানিতে ২য় ১৮. সর্বোপরি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে মধ্যম আয়ের দেশে তুলে আনা ১৯. বিরাট জনশক্তিকে শ্রমশক্তিতে এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতে উন্নীত করা ২০. বিদ্যুত উৎপাদন ৩২০০ মেগাওয়াট থেকে ২২ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা ২১. প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে (মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ভিত্তিতে) স্থল সীমানা নির্ধারণ করা ২২. সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ২৩. এই সময়ের ভিত্তিতে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ পর্যায়ে ২৪. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ ২৫. পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ২৬. ঢাকায় মেট্রোরেল সমাপ্তির পথে ২৭. কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ ২৮. পরপর কয়েকটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠান ২০১৪ সালে নির্বাচন না করলেও বিএনপি ২০১৮ সালে নাকে দাগ লাগিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং যথারীতি পার্লামেন্টে বসে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছে, যার প্রায় সবই মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। তারপরও বিএনপিকে সংসদে আনতে বাধ্য করা শেখ হাসিনার একটি অর্জন। বদিউল আলম মজুমদার বা আসিফ নজরুল যতই ইনক্লুসিভ ইলেকশন বলে গলা ফাটাক না কেন, গলা ফাটাতে থাকবেন, তাতে কোন কাজ হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতীসহ বিশ্বের দুই ডজনের বেশি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করেছে। জাতিসংঘের মতো বিশ্ব সংস্থা তাকে সেরেস পুরস্কার, সাউথ-সাউথ পুরস্কার, স্টার অব দ্য ইস্ট, মাদার অব হিউম্যানিটি, চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ এমনি ভূরি ভূরি এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছে। সৎ রাষ্ট্রনেতা হিসেবে বিশ্বের তিনজনের মধ্যে দ্বিতীয় এবং সফল দক্ষ দূরদর্শী ব্যক্তির মধ্যে তৃতীয়। এ অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আজ এক নম্বরে। এই বিশাল অর্জনের পথ মসৃণ ছিল না। ১৯ বার তার ওপর হামলা হয়েছে তাকে হত্যা করার জন্য। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা ছিল ভয়ঙ্কর। উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের (বর্তমানে যাবজ্জীবন কারাদন্ড মাথায় নিয়ে লন্ডনে পলাতক) হাওয়া ভবন পরিচালিত এই গ্রেনেড হামলায় তিনি রক্ষা পেলেও এক কানের শ্রবণশক্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন অন দ্য স্পট এবং তিন শতাধিক আহত হন। তাছাড়া চট্টগ্রাম, ঢাকার জিরো পয়েন্ট, রাসেল স্কয়ার, তোপখানা রোড, বঙ্গবন্ধু ভবনে গুলি-বোমা হামলাও ছিল একেবারে তাকেই টার্গেট করে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কৃপায় তিনি আজও বেঁচে আছেন এবং জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি বিশ্বের সকল ক্ল্যাসিক ট্র্যাজেডিকেও হার মানিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী বা পেছনের কুশীলবরা এতই নিম্নমানের এবং অশিক্ষিত যে, ৯ বছরের শিশু শেখ রাসেল বা ৪ বছরের সুকান্ত বাবুকেও বাঁচতে দেয়নি। গুলিতে ঝাঁজরা করে দিয়েছিল। প্রিয় পাঠক, আপনি শেখ হাসিনার জায়গায় বসে একবার ভাবুন এবং সেই দৃশ্যটি কল্পনা করুন, সহ্য করতে পারবেন কি? খালেদা-তারেক রুমিন হলে পারবেন; কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। একটি পরিবারের সকলকে হত্যা করেছে এমন নজির ইতিহাসে নেই। ব্রুটাস কিংবা অসওয়ার্ন্ড কিংবা নাথুরাম গডসের মতো নয়, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের হত্যাকারীরা নেহাতই নিম্নমানের এবং অনেক বেশি হিংস্র। তারপরও শেখ হাসিনা রাজনীতি করছেন, জাতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কে আছো তার মত এমন মারণাস্ত্র তুচ্ছ করে এগিয়ে যান নির্ভয় মানুষের প্রতি ভালবাসা যেখানে সেখানে কি ভয় পেতে হয়? ভালবাসার পুষ্পশরে পরাস্ত হয় যত হায়নার দল যত রাজাকারের বাচ্চার দল যত যুদ্ধাপরাধীদের দল ॥ জঙ্গীবাদ ও এক তুচ্ছ মরা গাছ সামান্য বাতাসে ভেঙ্গে পড়ে পথের ধারে কোন চারা গজায় না ফুল পাতা না ॥ এতগুলো হত্যা একসঙ্গে কেউ দেখেছে কি? কেউ কি দেখেছে বাবা-মার কোলে শিশু সন্তানের বুক ঝাঁজরা হতে? কেউ কি দেখেছে পিতার বুকে সন্তান গুলি চালাচ্ছে? এ কেমন সন্তান জন্মই যার আজন্ম পাপ নিষিদ্ধ পল্লীতে বড় হওয়া পাপ। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ আপনি বেঁচে আছেন বলেই শেখ হাসিনা প্রিয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলার জোয়ান অব আর্ক এখনো গাঙে জোয়ার বয় এখনো ক্ষেতে ধান হয় অনেক গান সোনালি ধান এখনো কাশবনে ফুল ফোটে সাদা সারসের দল মাছ শিকার করছে এখনো পদ্মায় ইলিশের ঝাঁক কাশফুল সাদা সারসও সাদা প্রভাতী এবং গোধূলির সূর্যের রঙিন লাভা কি অপরূপ জাতির পিতার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। জন্মদিন শুভ হোক। লেখক : সংসদ সদস্য, সিনিয়র সাংবাদিক ও উপদেষ্টা সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×