
মাত্র একবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিততে পেরেছে বাংলাদেশ
মাত্র একবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। সবেমাত্র ১১ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল তাদের বিরুদ্ধে। ৩ বছর আগে ঘরের মাটিতে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজও জিতেছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে। এবার নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে আরেকটি সিরিজ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে পয়মন্ত সাগরিকা। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আজ এখানেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।
দিবারাত্রির ম্যাচটি বেলা ২টা ৩০ মিনিটে মাঠে গড়াবে। প্রথম ম্যাচ জেতার পর আত্মবিশ^াসের তুঙ্গে থাকা বাংলাদেশ সিরিজ জিততে মুখিয়ে আছে। অপরদিকে সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে জয় পেয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায় শ্রীলঙ্কা। তাদের দৃষ্টি সিরিজে সমতা ফেরানো। টি২০ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জেতার পর প্রথম ওয়ানডে হারলেও বিন্দুমাত্র তাদের আত্মবিশ^াসে ঘাটতি আসেনি। তবে নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে শান্ত তার প্রথম সিরিজের শুরুটা যেভাবে করেছেন তা স্বাগতিক টাইগারদের করেছে দুরন্ত। সেই দলকে হারিয়ে ফিরে আসা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে লঙ্কানদের জন্য।
২০২১ সালে প্রথমবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। সেই সিরিজের সব ম্যাচ মিরপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। টানা দুই ম্যাচ জিতে তামিমের দল আগেভাগেই সিরিজের ট্রফি নিশ্চিত করে। কিন্তু শেষ ম্যাচে হেরে যায়। এবারও একইভাবে শান্তর নেতৃত্বে জয় দিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশ দল। তবে এবার পুরো সিরিজ হচ্ছে চট্টগ্রামে। যেখানে ২০০৬ সালে একটাই মাত্র ওয়ানডে খেলেছে লঙ্কানরা। সেই দলের কেউ এখন আর নেই।
প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং, বোলিং এ দুটি বিভাগেই দুর্দান্ত শুরু করে শ্রীলঙ্কা। ব্যাটাররা ১০ ওভারে মাত্র ১ উইকেটে ৭১ রান এনে দেন। আর বোলাররা ৫.১ ওভারে ২৩ রানের মধ্যে ৩ টপঅর্ডারের উইকেট তুলে আনেন। তবে পরবর্তীতে খেই হারিয়েছেন ব্যাটার ও বোলাররা। শেষ ৫ উইকেট মাত্র ৩৪ রানে হারিয়ে না ফেললে দারুণ ব্যাটিং সহায়ক সাগরিকার উইকেটে নিশ্চিতভাবেই ৩০০+ রান করতে পারত শ্রীলঙ্কা। আর সেটি করতে পারলে নিশ্চিতভাবেই ম্যাচের ফল ভিন্ন হতো।
বোলিংয়েও পরের ২৩৪ রান খরচায় মাত্র ১ উইকেট নিতে পেরেছেন বোলাররা। ফিল্ডিংয়েও করুণ দশা দেখা গেছে লঙ্কানদের। আর এতেই জিতে গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিপরীত চিত্র বাংলাদেশ দলের। পুরো ম্যাচেই তারা দারুণভাবে কামব্যাক করেছে। বোলিংয়ে শুরুতে বেধড়ক পিটুনি খেলেও সেই বোলাররাই পরে লঙ্কানদের ব্যাটিং লাইনআপের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন। আর ব্যাটিংয়ে টপঅর্ডাররা ব্যর্থ হলেও মিডলঅর্ডারদের দৃঢ়তাপূর্ণ দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ফিল্ডিংয়েও দারুণ পারফর্ম্যান্স দেখিয়েছে স্বাগতিকরা। এসব কারণেই সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে থেকে জিতেছেন শান্তরা।
প্রথম ম্যাচে দুই দলের মধ্যে পার্থক্যটা পরিষ্কার। সব বিভাগেই এগিয়ে থেকে জিতেছে বাংলাদেশ। এবার সেই পার্থক্য কমিয়ে এগিয়ে যেতে হবে লঙ্কানদের। ব্যাটিং, বোলিংয়ে সলিড পারফর্ম্যান্স দেখাতে না পারলে ঘরের মাঠে দুর্বার বাংলাদেশকে হারানো কঠিন হবে তাদের জন্য। যদিও সর্বশেষ ৩টি সিরিজ বাংলাদেশ জিততে পারেনি। যার মধ্যে ঘরের মাঠে বিশ^কাপের আগে আফগানিস্তানের কাছে ২-১ ও দ্বিতীয় সারির নিউজিল্যান্ডের কাছে ২-০ ব্যবধানে হারের হতাশা আছে।
বিশ^কাপের পর অবশ্য শান্ত ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে ম্যাজিকই দেখিয়েছেন। তার নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথমবার কোনো ওয়ানডে জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সিরিজ ঠিকই ২-১ ব্যবধানে হেরেছে দল। এবার সেই সিরিজ হারের ধারাটা বদলাতে চান শান্তরা। প্রথম ম্যাচে দুই অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম বিপর্যয়ের মুখে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। আর তাতেই শান্ত অধিনায়কসুলভ একটি রেকর্ডময় ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছেন।
যখন দলের অধিনায়ক জয়ের নায়ক বনে যান, তখন সেই দলটি হয় অনেক উজ্জীবিত। সঙ্গে অভিজ্ঞতম দুই ক্রিকেটারের দারুণ পারফর্ম্যান্স তো আছেই। এবার সিরিজ জয়ের ব্যাপারটিকে বাস্তব করার অপেক্ষা। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা এর আগে ৯টি দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে। দুটি সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হয়েছে এবং সর্বশেষ সিরিজটি বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জিতেছে। বাকি ৬ সিরিজেই হাসিটা লঙ্কানদের মুখে লেগে ছিল। এবার তারা সফরের শুরুতেই টি২০ সিরিজ জিতে দারুণভাবে শুরু করেছে। তাই প্রথম ওয়ানডেতে হারলেও ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মবিশ^াস আছে তাদের।
রসদ হিসেবে রয়েছে ফর্মে থাকা পাথুম নিশঙ্কা, আভিস্কা ফার্নান্দো, অধিনায়ক কুসাল মেন্ডিস, উইকেটরক্ষক সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিথ আসালঙ্কার ব্যাটিং। বোলিংয়ে প্রমোদ মাদুশান, মাদুশঙ্কা ও লাহিরু কুমারা বেশ ভালো করেছেন। তারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছন্দ ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশের জন্য আগেভাগে সিরিজ জয় কঠিন করে তুলতে পারবে।
প্রথম ওয়ানডেতে পেসাররা বেশ সহায়তা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচেও সাগরিকাতে একই ধরনের পরিবেশ থাকার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ ব্যাটিং সহায়তাও ছিল উইকেটে। বাংলাদেশের তিন পেসারই ভালো করেছেন। ব্যাটিংয়ে শুধু টপঅর্ডারে রান পাওয়াটা জরুরি। সেক্ষেত্রে বেঞ্চে থাকা এনামুল হক বিজয় ও তানজিদ হাসান তামিমের মধ্যে একজন সুযোগ করে নিতে পারেন। তারা সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বেশ ভালো ব্যাটিংও করেছেন।
আর বোলিংয়ে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের জায়গায় রিশাদ হোসেন জায়গা করে নিতে পারেন। কারণ টি২০ সিরিজে দুর্দান্ত বোলিং করে নজর কেড়েছেন এ তরুণ লেগস্পিনার। পাশাপাশি ব্যাট হাতে একটি বিধ্বংসী অর্ধশতক হাঁকিয়ে শেষদিকে দ্রুত কিছু রান উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেখাচ্ছেন। অধিনায়ক হিসেবে একটাই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছেন শান্ত গত ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে। তখন তিনি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ছিলেন। এখন তিনি পূর্ণ মেয়াদের স্থায়ী অধিনায়ক।
প্রথম সিরিজ খেলছেন সেই দায়িত্বে লঙ্কানদের বিপক্ষে। যেভাবে প্রথম ম্যাচে দলকে জিতিয়েছেন তা অব্যাহত রেখে আজও জয়ী হয়েই মাঠ ছাড়তে চাইবেন তিনি। কারণ তাহলে প্রথমবার অধিনায়ক হিসেবে কোনো সিরিজের ট্রফি ছোঁয়া হবে শান্তর।