ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

স্বর্ণ জিতে স্মরণীয় অভিষেক জিনাতের

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ৩১ জুলাই ২০২৫

স্বর্ণ জিতে স্মরণীয় অভিষেক জিনাতের

জাতীয় বক্সিংয়ে ৫২ কেজি ওজন  শ্রেণির ফাইনালে জয়ের পর জিনাত ফেরদৌসের উচ্ছ্বাস

জাতীয় বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের ৫২ কেজি ওজন শ্রেণিতে তিন রাউন্ডের সবকটিতেই আনসারের আফরা খন্দকারকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জিতে নিয়েছেন প্রথমবার বাংলাদেশে খেলতে আসা নরসিংদী গুডউইল বক্সিং ক্লাবের জিনাত ফেরদৌস। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা-বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। 
এবারের জাতীয় বক্সিংয়ে  দলগতভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সবমিলিয়ে তারা ১৭টি স্বর্ণ, পাঁচটি রুপা ও দুটি ব্রোঞ্জ জিতে সেরা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ বিভাগে ১২টি স্বর্ণ ও ১টি ব্রোঞ্জ এবং মেয়েদের বিভাগে পাঁচটি করে স্বর্ণ ও রুপা এবং একটি ব্রোঞ্জ রয়েছে। অন্যদিকে রানার্সআপ আনসার জিতেছে ছয়টি স্বর্ণ, ১১টি রুপা ও ২টি ব্রোঞ্জপদক। 
তখন বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা। লোকে লোকারণ্য পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম। আফরার খেলা দেখতে হাজির হয়েছিলেন আফঈদা খন্দকার এবং তার বাবা ও মা। মিডিয়ায় হইচই ফেলে দেওয়া এই লড়াই দেখতে এসেছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বেসির পাবলিক ডিপ্লোমেসি কাউন্সিলর স্টিফেন আইবেলি। পৌঁনে পাঁচটায় শুরু হয় জিনাত ও আফরার লড়াই। তিন রাউন্ডের প্রত্যেকটিতেই জিনাতের কাছে মার খেয়েছেন আফরা।

সেদিকে তাকিয়ে হতাশ হচ্ছিলেন বোন আফঈদা ও বাবা খন্দকার আরিফ হাসান। বারবার তারা আফরাকে উৎসাহ দিলেও তাতে কোনো কাজে আসেনি। শেষ পর্যন্ত হার নিয়েই রিং ছেড়েছেন আফরা। বোনের খেলা দেখে আফঈদার কথা, ‘প্রতিপক্ষ যে (জিনাত) ছিল, সে তো অনেক ভালো বক্সার। ও (আফরা) যে তিন রাউন খেলছে এটাই অনেক।’
খেলা শেষে আফরা খন্দকার বলেন, ‘হেরেছি এতে কোনো আক্ষেপ নেই। আমি চেয়েছিলাম যেন খেলাটি তিন রাউন্ড পর্যন্ত যায়। আলহামদুলিল্লাহ তিন রাউন্ড খেলেই এসেছি।’ আরও বিশেষায়িত অনুশীলনের আর্জি জানিয়ে আফরা বলেন, ‘জিনাত বিদেশে অনুশীলন করে। তার অনুশীলন সুবিধা অনেক ভালো। আমরা যদি ওরকম ভালো সুযোগ-সুবিধা পাই, আমরাও ওদের মতো ভালো করব।’ নিজের খেলা সম্পর্কে আফরার কথা, ‘জিনাত আক্রমণাত্মক খেলেছে। আমি প্রথম থেকেই রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেছি। কারণ আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, মাচটি তিন রাউন্ড পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া।’ তবে পরেরবার খেলা হলে জিনাতকে হারানোর প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন আফরা।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বক্সারদের আরও টেকনিক রপ্ত করার পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশে অভিষেক আসরেই স্বর্ণজয়ী জিনাত ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশি ছেলে এবং মেয়ে যারা আছে, সত্যিকার অর্থেই ওরা অনেক খেলতে চায়। ওরা রিংয়ে খেলা ছেড়ে দিতে চায় না। আরেকটু টেকনিক যদি রপ্ত করতে পারে, তাহলে অনেক ভালো করবে।’

প্রথমবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে এসে নিজের অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই জানান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জিনাত, ‘যেভাবে সবাই আমাদের বক্সিংকে সমর্থন করছে, এটা আমার কাছে অনেক বড় জিনিস। খুব ভালো লাগছে, কত জন আসছে। কত মানুষ সাপোর্ট করছে। আমি এটা প্রথমবার খেললাম, তবে এটাই শেষ নয়।’ জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাক্সক্ষার কথাও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশাআল্লাহ।’ 
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

প্যানেল হু

×