ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

মারাকানায় মারামারি

এবার আর্জেন্টিনার কাছে হেরে গেল ব্রাজিল

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২২:১৯, ২২ নভেম্বর ২০২৩

এবার আর্জেন্টিনার কাছে হেরে গেল ব্রাজিল

বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে বীর দর্পে মেসির সঙ্গে মাঠ ছাড়ছেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা

অনাকাক্সিক্ষত মারামারির ম্যাচে বিখ্যাত রিও ডি জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ গোলে হেরেছে স্বাগতিক ব্রাজিল। বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ঘটনাবহুল ম্যাচটিতে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে চোখ ধাঁধানো হেডে গোলটি করেন সেন্টার ব্যাক নিকোলাস ওটামেন্ডি।
এর ফলে উরুগুয়ের কাছে হারের পর জয়ের ধারায় ফিরেছে আর্জেন্টিনা। বর্তমানে ছয় ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে শীর্ষে অবস্থান করছে আলবিসেলেস্তারা। অন্যদিকে ম্যাচে দশজন নিয়ে খেলা ব্রাজিলের দুঃসময় আরও বেড়েছে। টানা তৃতীয় হারের তেতো স্বাদ পাওয়া সেলেসাওরা। মাত্র ৭ পয়েন্ট নিয়ে নেমে গেছে ষষ্ঠ স্থানে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের মাঠে এই প্রথম হেরেছে ব্রাজিল। এর ফলে শেষ হয়েছে নিজ আঙিনায় টানা ৬৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার যাত্রা। শুধু তাই নয়, ২০০১ সালের পর বাছাইয়ে প্রথমবারের মতো টানা তিন ম্যাচও হেরেছে পেলের দেশ।

সবমিলিয়ে এবারের বাছাইয়ে ব্রাজিল জয়হীন আছে টানা চার ম্যাচ! ঘরের মাঠে ব্রাজিলের হারে একটি চক্রও পূরণ হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অংশ নেয়া অন্য সব দলেরই এই প্রতিযোগিতায় ঘরের মাঠে হারের অভিজ্ঞতা আছে। ছিল না শুধু ব্রাজিলের। আর্জেন্টিনা সেটাও পাইয়ে দেয়ায় দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে আর কোনো দেশই বাকি রইল না। 
হারের ম্যাচে আরও অনেক দিক দিয়েই পুড়তে হয়েছে ব্রাজিলকে। ম্যাচ শুরু হতে তখনও কিছুক্ষণ বাকি ছিল, চলছিল ব্রাজিলের জাতীয় সংগীত। ঠিক ওই সময় স্ট্যান্ডে দু’দলের সমর্থকরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ দ্রুত ছুটে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না। পুলিশের সঙ্গেও লেগে যায় দর্শকরা। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটির সূত্রপাত কী থেকে, তা অবশ্য পরিষ্কার নয়। তবে পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সঙ্গতকারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে করতে হয় লাঠিচার্জ।

সবমিলিয়ে সুপার ক্লাসিকোর আগে মারাকানার স্ট্যান্ড যেন হয়ে উঠে রণক্ষেত্র। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আসলে স্ট্যান্ডে কী হয়েছিল? আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমের দাবি, পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে তাদের সমর্থকদের ওপর। বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দুই পক্ষের মারামারির সূত্রপাত জাতীয় সংগীত চলার সময় একটি গোলপোস্টের পেছনের স্ট্যান্ডে।
কিছু সমর্থক সিট উপড়ে ফেলে ছুড়তে শুরু করেন প্রতিপক্ষের দিকে, পুলিশের দিকে। কেউ কেউ সেখান থেকে পালাতে ঢুকে পড়েন মাঠে। পুলিশ ব্যাটন হাতে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের ওপর চড়াও হন। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় ও ব্রাজিল দলের কয়েকজন পরিস্থিতি শান্ত করতে ছুটে যান স্ট্যান্ডের দিকে। আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে দেখা যায় এক পুলিশ অফিসারের হাত থেকে ব্যাটন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করতে। এরপর সতীর্থদের নিয়ে মাঠ ছাড়েন মেসি। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের পৃথক আরেকটি স্ট্যান্ডে আলাদাভাবে বসার বন্দোবস্ত করে পুলিশ। তাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এমন ঘটনার কারণে ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট পর শুরু হয়। 
সঙ্গতকারণেই আর্জেন্টিনার জয়ের চেয়ে মারামারির ঘটনা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে বেশি। চলছে কারণ অনুসন্ধান। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের দায় দেয়া হচ্ছে। মেসির দাবি, ওই স্ট্যান্ডে ছিলেন খেলোয়াড়দের পরিবার ও বন্ধুরা। মারামারি থেকে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের রক্ষা করতে মেসিরা সেখানে গিয়েছিলেন, পরে মাঠ ছেড়ে লকার রুমে চলে যাওয়ার কারণও জানিয়েছন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। অনাকাক্সিক্ষত বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছেন না আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি। তিনি বলেন, ঘটনাটা খুব খারাপ ছিল। কেননা আমরা দেখলাম তারা কিভাবে মানুষগুলোকে মারছিল। লিবের্তাদোরেসের ফাইনালে যেমনটা হয়েছিল।

আমরা আবারও দেখলাম সেভাবেই নাইট স্টিকস (লাঠি) দিয়ে পুলিশ পেটাচ্ছিল। আমরা লকার রুমে চলে গিয়েছিলাম। কেননা সবকিছু শান্ত করতে এটাই সেরা উপায় ছিল। ট্র্যাজেডি দিয়ে এই ঘটনা শেষ হতে পারত। মেসি আরও বলেন, পরিবারের লোকজনদের নিয়ে ভাবছিলাম। যারা স্ট্যান্ডে ছিলেন। কী ঘটছে বুঝতে পারছিলাম না। ম্যাচটা খেলার চেয়ে এগুলো নিয়ে বেশি ভাবছিলাম আমরা। ওই সময় ম্যাচ খেলা গৌণ হয়ে পড়েছিল, ওই ঘটনা ছিল মুখ্য বিষয়।
অন্যদিকে নেইমার, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, কাসেমিরো, এডারসন, ডানিলো, রিচার্লিসন, এডার মিলিটাও- নিয়মিত একাদশের এই সাত জনকে চোটের কারণে না পাওয়ায় ব্রাজিলের শক্তি অনেকটাই খর্ব হয়। এরপরও তারা সমানে সমানে লড়াই করেছে। কিন্তু ওটামেন্ডির অবিশ্বাস্য হেডে অপ্রত্যাশিত হার মানতে হয়। হারের পর সমর্থকদের কাছ থেকে দুয়ো শুনতে হয়েছে ব্রাজিলের অন্তর্র্বর্তীকালীন কোচ ফার্নান্দো দিনিজকে। ম্যাচ শেষে দিনিজ বলেন, এ ম্যাচে আমাদের মাত্র তিনজন খেলোয়াড় ছিল যারা গত বিশ্বকাপে খেলেছে। আর আর্জেন্টিনা প্রায় পূর্ণশক্তির দল নিয়ে খেলেছে। তিনি আরও বলেন, খেলা আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু কখনো কখনো ফল হাতছাড়া হয়ে যায়।

×