অনুশীলন মাঠে দেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
এ বছর জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও প্রথমবারের মতো সহ-আয়োজক হওয়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবে টি২০ বিশ্বকাপের নবম আসর। ছোট্ট ফরম্যাটের ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের এ দ্বৈরথের আগে আর দুটি মাত্র দিপক্ষীয় সিরিজ পাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী মাসে ঘরের মাঠে জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে পাঁচ ম্যাচের টি২০ সিরিজ। এরপর মার্কিন মুলুকে উড়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিন ম্যাচের একটি সিরিজ। এমনিতে টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
তার ওপর নতুন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর অধীনে অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশেলে গড়া অন্যরকম একটা দল। কেমন করবে টাইগাররা? শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে কেমনই বা হবে একাদশ? আগেভাগেই প্রত্যাশার ফানুশ ওড়াতে বারণ করেছেন শান্ত। আর বোর্ডের (বিসিবি) প্রভাবশালী পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের পরামর্শ, খুব বেশি নাড়া-চাড়া না করে জিম্বাবুইয়ে সিরিজেই বিশ্বকাপের দল চূড়ান্ত করে ফেলা উচিত।
দল কেমন হবে, নতুন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুও কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। সব ঠিক থাকলে ২৮ এপ্রিল ঢাকায় পা রাখবে জিম্বাবুইয়ে। চট্টগ্রামে প্রথম তিন ম্যাচ ৩, ৫, ও ৭ মে। ১০ ও ১২ মে শেষ দুই ম্যাচ মিরপুরে।
টি২০ বিশ্বকাপ সামনে রেখে সম্ভাব্য ৩০ ক্রিকেটারের ভিসা তৈরি করে রাখছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেই ৩০ ক্রিকেটারের মধ্য থেকেই বিশ্বকাপ দলে সুযোগ মিলবে ১৫ জনের। টি২০ বিশ্বকাপের দল নিয়ে এবার আর অতীতের পথে হাঁটতে চায় না ক্রিকেট বোর্ড। ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পক্ষেও নন প্রধান নির্বাচক।
বিশ্বকাপের আগে ক্রিকেটারদের শতভাগ ফিট রাখতে করা হবে বিশেষ ক্যাম্পও। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে টাইগাদের বিশ্বকাপ মিশন। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেতে যাওয়া সম্ভাব্য সব ক্রিকেটারই জিম্বাবুইয়ের সিরিজের দলে থাকবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ। হাতে থাকা সেরা ক্রিকেটাররাই বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাবেন। তিনি বলেন, ‘বড় কোনো ইনজুরির ঘটনা না ঘটলে কাছাকাছি একটা দল নিয়েই আমরা প্রস্তুতি শুরু করব।
কৌশলগত কারণে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে হয়তো কেউ কেউ বিশ্রাম পেতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো, মূল দলটাকে এ ম্যাচে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। যত কাছাকাছি থাকা যায়।’ প্রধান নির্বাচক আরও যোগ করেন, ‘আমার বিশ্বাস ক্রিকেটাররা উপলব্ধি করতে পারবে স্কিলে কতটুকু উন্নতি দরকার। এজন্য ঘরের মাটিতে আমরা জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ খেলব।’
আর বিশ্বকাপের জাতীয় দল প্রসঙ্গে সাবেক অধিনায়ক সুজনের পরামর্শ, ‘যাদের ওপর আমার বিশ্বাস থাকবে, যারা বিশ্বকাপে খেলবে, যাদের কোচ, অধিনায়ক ও ম্যানেজমেন্ট বিশ্বাস করবে তাদেরই আসলে জিম্বাবুইয়ে সিরিজে খেলানো উচিত। কারণ হাতে বেশি সময় নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ রকম না যে, দুটা ইনিংস এ খেলল, দুটা ইনিংস ও খেলল। দুজনই ফেল করল। তারপর পাঁচ নম্বর ইনিংসে আপনি কাকে খেলাবেন? আপনি আত্মবিশ্বাস নষ্ট করছেন দুজন ছেলের।
এগুলো না করে একটা ছেলেকেই চারটা ম্যাচ খেলান। ও যদি দুই ম্যাচে ফেলও করে, ওর সুযোগ থাকবে তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে রান করে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়ার।’ আর বিশ্বকাপে প্রত্যাশার চাপে পড়তে চান না অধিনায়ক শান্ত, ‘প্রতিবরই দেখি বিশ্বকাপের আগে এগুলো নিয়ে অনেক কথা হয়। আশা-প্রত্যাশা, এটা করব সেটা করব। আমার একটা অনুরোধ থাকবে, এই প্রত্যাশাটা খুব বেশি করার দরকার নেই, আশাটা মনের মধ্যেই থাকুক সবার।
আপনিও জানেন বাংলাদেশ দল কী চায়, আমরা খেলোয়াড়রাও দলটাকে দূর পর্যন্ত নিয়ে জেতে চাই। সবাই চায় যে আমরা অনেক বড় কিছু করি। কিন্তু এটা নিয়ে যখন খুব বেশি মাতামাতি হয় তখন জিনিসটা আমার ব্যক্তিগত ভাবে ভালো লাগে না। কারণ দরকার নেই, ফল যখন হবে, তখন এমনিই বোঝা যাবে।’
তবে নিজেদের দিক থেকে ভালো করতে কোনো অংশে ছাড় দেবে না জানিয়ে শান্ত আরও বলেন, ‘আমি একটা জিনিস বলব যে, যেই দলটা খেলবে এরা নিজের নিজের সেরা দেবে। প্রত্যেকটা ম্যাচে জেতার জন্য। এই নিশ্চয়তাটা আমি দিতে পারি। এবং প্রত্যেকটা ম্যাচ জেতার জন্যই খেলবে। তবে আগে থেকেই অনেক আশা করছি, এবার অনেক বেশি প্রত্যাশা করছি... একটাই অনুরোধ করব, আমরা যেন এসব নিয়ে বেশি মাতামাতি না করি।’ শান্ত আরও বলেন, ‘আমাদের শেষ ছয়টা-সাতটা সিরিজ দেখেন এই দলটা বেশিরভাগ সিরিজ (টি২০) জিতেছে। তো এই দলটা ভালো অবস্থানে আছে।
এই সিরিজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই খেলোয়াড়রা যদি ভালো কিছু নিয়ে সিরিজ শেষ করে যেতে পারে ঐ আত্মবিশ্বাস নিয়ে যদি আমরা যেতে পারি তাহলে এটা দলের জন্য ভালো হবে।’ এ সময় জিম্বাবুইয়ে সিরিজে প্রত্যাশিত উইকেট নিয়ে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমরা যেই সিরিজটা খেলেছি তেমন স্পোর্টিং উইকেটই আমরা পাব বলে আশা করছি। তারপরও চেষ্টা থাকবে যুক্তরাষ্ট্রে (টি২০ বিশ্বকাপ) আমরা যে উইকেটে খেলব তেমনি উইকেট প্রস্তুত করা যায় কি না।
যদিও আমার মনে হয় না ঐ ধরনের উইকেট করা সহজ হবে।’ তামিমের ফিরে আসার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না? ‘আমি তো চাইব, তিনি যদি ফিট থাকেন, টি২০ থেকে যদিও অবসর নিয়েছেন, যদি তিনি ফিট থাকেন, তাহলে তো যে কোনো সংস্করণে এলেই আমরা খুশি হব। আমার মনে হয়, শুধু আমি না, দেশের প্রত্যেকটা মানুষ, প্রত্যেকটা ক্রিকেটারই খুশি হবে। এটা তো একটা ইচ্ছা, এটা চাওয়া। তবে সবার আগে ওনার চাইতে হবে। তারপর বাকি প্রক্রিয়া হবে। তবে অধিনায়ক হিসেবে, আমার যেটা ইচ্ছা বা চাহিদা, সে বিষয়গুলো নিয়ে টুকটাক একটু আলাপ-আলোচনা করেছি।’
বিশ্বের বড় দলগুলো বিশ্বকাপের আগে দলের প্রয়োজনে অবসরে থাকা তাদের সেরা খেলোয়াড়দের ফিরিয়ে দলে যুক্ত করা হয়। অবসর ভেঙে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমকে ফেরানোর কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না। তবে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করেই শান্ত জানিয়ে দিয়েছেন এমন চিন্তা তারা আপাতত করছেন না। শান্ত বলেন, ‘না, এই মুহূর্তে এই ধরনের (তামিম-মুশফিকের টি-টোয়েন্টি অবসর ভাঙানো) চিন্তা-ভাবনা করছি না। বিশ্বকাপের খুব বেশি দিন সময় নেই।
দলটা মোটামুটি খুব ভালো সেটলও আছে। আর বেশ কয়েক দিন ধরে তামিম ভাই ঘরোয়া ক্রিকেটটা খেলছেন তার ফিটনেসেরও একটা ইস্যু আছে। সেসব নিয়েও আমাদের কথা হয়েছে। এই মুহূর্তে এসব কিছু ভাবছি না। তবে অবশ্যই দলের প্রয়োজনে যে কোনো মুহূর্তে যে কাউকে ডাকার জন্য প্রস্তুত।’