ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে পাকিস্তানের হার ৫ উইকেটে

আক্ষেপের বদলা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:২৮, ১৪ নভেম্বর ২০২২

আক্ষেপের বদলা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দলের ক্রিকেটারদের পাশে স্পন্সর এ্যামিরেটসের দুই কেবিন ক্রু

ফেরেনি ১৯৯২-এর স্মৃতি, অতীতের দুঃখ পাল্টে এবার ইংল্যান্ড নিয়েছে বদলা, জিতেছে দাপটের সঙ্গে। টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। ৩০ বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপে  মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) লেখা হয় পাকিস্তানের প্রাপ্তির গৌরবময় ইতিহাস আর অপ্রাপ্তির আক্ষেপ ইংল্যান্ডের।
আড়াই যুগ পর সেখানেই ভিন্ন ফরম্যাটে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটার সব মঞ্চই প্রস্তুত ছিল পাকিস্তানের জন্য। এমসিজির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরে পাকিস্তানি ভক্ত-সমর্থকদের উৎসব, গান-বাজনা আর গর্জনে ম্রীয়মান ইংলিশদের উপস্থিতি পাওয়াই হয়েছে দুষ্কর।

এই পাগলাটে, অন্তঃপ্রাণ ক্রিকেটপ্রেমী, ভক্তদের সঙ্গে পার্শ¦বর্তী ইয়ারা পার্কে ফাইনালের আগে উভয় দলের ক্রিকেটারদের সরাসরি সাক্ষাতের অনুষ্ঠানেও পাকভক্তদের ভিড়ে কোণঠাসা ছিলেন গুটিকয়েক ইংলিশ সমর্থক। তবে অনেক ইংলিশ ভক্ত জানিয়েছিলেন যে, মাঠের লড়াইয়ে পাকিস্তানকে পাত্তাই দেবে না ইংল্যান্ড। তাই হয়েছে- রবিবার ফাইনালে আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৭ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। অথচ, উপস্থিত ৮০ হাজার ৪৬২ দর্শকের সিংহভাগই গর্জন করেছে পাকিদের হয়ে। সেই গজর্নকে স্তিমিত করে এক ওভার হাতে রেখেই বেন স্টোকসের দুর্দান্ত অপরাজিত অর্ধশতকে বিজয়  ছিনিয়ে নেয় ইংল্যান্ড।
১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ফাইনালে মেলবোর্নে ছিল ৮৭ হাজার ১৮২ জন দর্শক। আর রবিবার টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে উপস্থিত হয় ৮০ হাজার ৪৬২ জন। এর কারণ হট ফেভারিট ভারত ফাইনালে উঠবে, সে জন্য অনেক ভারতীয় আগেভাগে টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন। সেবার টস জিতে পাকিস্তান ব্যাটিং করে, এবার তারা টস হারলেও আবার ব্যাট হাতেই নামে আগে। দেখেশুনে শুরু করেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম। কিন্তু ২৯ রানেই জুটি ভেঙে যায় স্যাম কুরানের আঘাতে, বোল্ড হন রিজওয়ান (১৪ বলে ১৫)। ওয়ানডাউনে নামা মোহাম্মদ হারিসও (১২ বলে ৮) দ্রুতই ফিরে গেছেন আদিল রশিদের লেগস্পিনে।
পাওয়ার প্লে থেকে ৬ ওভারে এক উইকেটে ৩৯ রান তুললেও ভালো কিছু করার আশায় ছিল পাকিরা। এরপরে বাবর-শান মাসুদ মাত্র ২৪ বল খরচায় ৩৯ রানের জুটি গড়ে ভালো একটা ভিত দিয়েছেন। কিন্তু এরপর আদিল, কুরান ও ক্রিস জর্ডান দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। বাবর ২৮ বলে ২ চারে ৩২ রানে রশিদের দ্বিতীয় শিকার হন এবং মাসুদ ২৮ বলে ২ চার, ১ ছয়ে ৩৮ রানে কুরানের পেসে সাজঘরে ফেরেন।

শাদাব খান ১৪ বলে ২ চারে ২০ রান করলেও বাকিদের ব্যর্থতায় ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৭ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান। টুর্নামেন্টজুড়ে বিধ্বংসী বোলিং করা কুরান ৪ ওভারে ১২ রানে ৩টি এবং জর্ডান ৪ ওভারে ২৭ রানে ও আদিল ৪ ওভারে ২২ রানে ২টি করে উইকেট নেন। জবাবে শাহিন আফ্রিদি ও হারিস রউফের ভয়ংকর পেসের সামনে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। ইনফর্ম অধিনায়ক জস বাটলার ১৭ বলে ৩ চার, এক ছয়ে ২৬ রান করেন।
দ্রুত ৩ উইকেট হারালেও পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৪৯ রান তুলে লক্ষ্যে পৌঁছার গতি ঠিক রাখে ইংলিশরা। সেই ভিতে দাঁড়িয়ে স্টোকস একাই লড়েছেন। হ্যারি ব্রুকস কিছুক্ষণ সঙ্গ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ১৩তম ওভারে শাদাব খানের লেগস্পিনে। তিনি ২৩ বলে এক চারে ২০ রান করেন। দারুণ লাইন-লেংথে বোলিং করে ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফিরিয়ে আনে পাকিরা। শেষ ৫ ওভারে ৪১ রান দরকার পড়ে ইংল্যান্ডের। কিন্তু ১৬তম ওভার ছিল ম্যাচের টার্নি পয়েন্ট।
নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে আফ্রিদি এক বল করেই আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। পরে ইফতিখার আহমেদের অনিয়মিত অফস্পিনেও স্টোকস কঠিন এক সুযোগ দিলেও বাবর ক্যাচটি নিতে পারেননি। জীবন পাওয়া স্টোকস ১৩ রান তুলে নেন এবং ১৭তম ওভারে মোহাম্মদ ওয়াসিমকে ৩ চার হাঁকিয়ে ১৬ রান তুলে নেন মঈন। ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি হাঁকিয়ে স্টোকস দলকে দ্বিতীয় টি২০ বিশ্বকাপ জিতিয়ে দেন ৬ বল বাকি থাকতেই। ৪৯ বলে ৫ চার, এক ছয়ে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন স্টোকস।

মঈন অবশ্য ১২ বলে ৩ চারে ১৯ রানে সাজঘরে ফেরেন। রউফ ৪ ওভারে ২৩ রানে নেন ২ উইকেট।  ২০০৯ সালের দ্বিতীয় আসরে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাদেরই চোখের সামনে টি২০ বিশ্বকাপের ট্রফি জিতে উল্লাস করেছে পাকিরা। তবে এরপর আর ফাইনালেই উঠতে পারেনি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে গিয়ে পরের বিশ্বকাপ আসরে ২০১০ সালে শিরোপা উৎসবে ঘরের মাটিতে পাওয়া আক্ষেপ ভুলেছে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালেও ফাইনাল খেলে তারা, কিন্তু রানার্সআপ হয়েছে সেবার।

এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট হিসেবেই নেমেছে ইংল্যান্ড। সুপার টুয়েলভ পর্বে শীর্ষে থেকেই সেমিফাইনালে উঠে এর প্রমাণও দিয়েছে তারা। সেমিতে শক্তিধর ভারতকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করে ১০ উইকেটের জয়ে আরেকবার শিরোপা জেতার অন্যতম দাবিদার ছিল তারা। কিন্তু চোখ রাঙ্গানি দিয়েছে ১৯৯২ সালের ইতিহাস এবং বৈরী প্রাকৃতিক পূর্বাভাস।
কিন্তু এ দুটোর সঙ্গে সঙ্গে হার মেনেছে উজ্জ্বীবিত পাকিস্তানও। সৌভাগ্যক্রমে সুপার টুয়েলভের শেষ ম্যাচে জিতে তারা সেমিতে পা রাখে। আর শেষ চারে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে বিধ্বস্ত করে শিরোপা জয়ের অন্যতম ফেভারিট হয়ে ওঠে তারা। পাকদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ইমরান খানের নেতৃত্বে সেবারই প্রথম এবং একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে পাকিরা। মেলবোর্নে হওয়া সেই ফাইনালে অতিকষ্টে গ্রুপ পর্ব পেরোনো পাকিরা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে। ইংল্যান্ডের ছিল সেটি তিনবার ফাইনালে উঠে পরাজয়।
পাকিদের কাছে হেরে যাওয়ার পর ফাইনালেই আর যেতে পারছিল না ইংলিশরা। অবশেষে ২০১৯ সালের ফাইনালে উঠে শিরোপা জয় করে নিজেদের মাঠে। এবার জিতল তারা টি২০ বিশ্বকাপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে ২ বার টি২০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। ক্যারিবিয় দল ২০১২ ও ২০১৬ সালে এবং ইংল্যান্ড এর আগে ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়।

×