ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম টি২০ পরিত্যক্ত, বাংলাদেশের অগোছালো ব্যাটিং, কাটেনি ওপেনিং নিয়ে দুশ্চিন্তা

বৃষ্টির আশীর্বাদে ‘ভাগ্যবান’ টাইগাররা

মোঃ মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:২৮, ৪ জুলাই ২০২২; আপডেট: ০০:৩০, ৪ জুলাই ২০২২

বৃষ্টির আশীর্বাদে ‘ভাগ্যবান’ টাইগাররা

.

গত বছর টি২০ বিশ্বকাপে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। বারবার পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতা,  ফিল্ডিং দৈন্যতা, বিশৃঙ্খল বোলিংয়ে  একেবারে হতশ্রী চেহারা হয় বাংলাদেশের। তখন দলের বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ বাধ্য হয়ে সরল স্বীকারোক্তি করেন, সবারই ভাল কিছু করার আপ্রাণ চেষ্টা আছে, আমরা সবাই সেটা করছিও। কিন্তু আমাদের দ্বারা হচ্ছে না। সেই হচ্ছে না’র চক্করেই এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ দল। টি২০ ক্রিকেট যেন চরম দুর্বোধ্য মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের কাছে। স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে  ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে তা আরেকবার দেখা গেছে। ভাগ্যিস বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে, নয়ত আরেকটি হার বাংলাদেশের ব্যাটিং শেষেই শঙ্কা করা হয়েছে। শুরু হয়েছে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর। টস হেরে ১৬ ওভারের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লে’র ৫ ওভারে ২ উইকেটে ৪৬ রান নিয়ে উড়ন্ত সূচনাই করে বাংলাদেশ। কিন্তু পরে দুই দফা বৃষ্টিতে ম্যাচ কমিয়ে ১৩ ওভারের করা হয়। সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসান সোহান ব্যতীত বাকিদের ভুল শটে সাজঘরে ফেরার মিছিলে শামিল হওয়ায় ৮ উইকেটে ১০৫ রান করে। শেষ পর্যন্ত আর খেলা না হওয়ায় ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ দল।
টি২০-তে ওপেনিং জুটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছে বাংলাদেশ দল। অভিজ্ঞ বাঁহাতি পেসার তামিম ইকবাল আড়াই বছর ধরে এই ফরমেটে খেলছেন না জাতীয় দলের হয়ে। তার ঘাটতি পূরণে সর্বশেষ ৩১ ম্যাচে ১০টি ভিন্ন ভিন্ন ওপেনিং জুটি দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি নাইম শেখ সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু তিনিও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতার জেরে ছিটকে পড়েছেন দল থেকে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে একেবারে নতুন জুটি হিসেবে দীর্ঘ ৭ বছর পর টি২০ খেলতে নামা এনামুল হক বিজয় ও ২ টি২০ খেলা মুনিম শাহরিয়ারকে নিয়ে  চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। তবে আবারও শুরুতে বিপদ, প্রথম ওভারেই মুনিম (২) সাজঘরে ফেরেন আকিল হোসেনের স্পিনে। তাই আরেকবার ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হয়। সেই ব্যর্থতা অবশ্য ঢেকে দেন অধিনায়ক সাকিব ও বিজয়। দু’জন দারুণ খেলতে থাকেন। কিন্তু ১০ বলে ৩ চারে ১৬ রানে এলবিডব্লিউ হন তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। দীর্ঘ সময় পর এই সফরে দ্বিতীয় টেস্টে নেমেও দুই ইনিংসে এলবিডব্লিউ হয়েছেন বিজয় এবং উভয়ক্ষেত্রে রিভিউ নিয়ে সফল হননি। তাই লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এবার বিশ্বরেকর্ড গড়া পারফর্মেন্স দেখিয়ে দীর্ঘ সময় পর ফিরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধাতস্থ হওয়া চ্যালেঞ্জে ফেলেছে তাকে। ১৬ ওভারের ম্যাচে ৫ ওভার পাওয়ার প্লে’ তবু দারুণ কেটেছে, বাংলাদেশ ২ উইকেটে ৪৬ রান তুলে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে গেছে। কিন্তু এরপরই অধোগতি, ব্যাটিংয়ের রেশ ধরে রাখতে না পারা এবং ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে দারুণ প্ল্যানিংয়ে ব্যাট করে মজবুত অবস্থানে যেতে ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
দারুণ শুরুর পর ব্যাটিংয়ে এমন ধসটাও বাংলাদেশ দলের চিরাচরিত ঘটনা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট যে পরিকল্পনা করেন সেখানেও যে ঘাটতি আছে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। অথচ ক্যারিবীয়রা টস জেতার পর বোলিংয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশকে চাপে ফেলার কায়দাটা ঠিকঠাক কাজে লাগিয়েছে। এই ভেন্যুতে ২০১৪ সালে হওয়া দুই টি২০ ম্যাচেই আগে ব্যাট করা দল জিতেছে। এরপরও উইন্ডিজ দল টস জিতে বোলিং নিয়েছে কয়েকদিন টানা বৃষ্টিতে মাঠ ও উইকেটের পরিস্থিতি বোলিং সহায়ক হবে এমন চিন্তায়। সেটাতে তারা সফল হয়েছে। শুরুটা আকিল করেন আর শেষ করেন হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র ও রোমারিও শেফার্ড। লিটন দাস ১৪ বলে ৯ এবং তার পরে দুর্দান্ত খেলতে থাকা সাকিব ১৫ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ২৯ রানে বিদায় নেন। এরপর আর ধস ঠেকানো যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে ব্যর্থ মাহমুদুল্লাহও ১৩ বলে ৮ রানে আউট। টানা ৮ ইনিংসে বড় কিছু (সর্বোচ্চ ২১) পায়নি তার কাছ থেকে দল। আফিফ হোসেন (০) ও শেখ মেহেদি হাসান ১ রানে সাজঘরে ফেরেন। ৭৭ রানে ৭ উইকেট হারানো দল ততক্ষণে আরেক দফা বৃষ্টিতে ১৪ ওভারে নেমে আসা ম্যাচেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। কিন্তু সোহান ঝড় তোলেন। দুর্দান্ত কিছু শট খেলে দলকে একটা সম্মানজনক পুঁজিতে নিয়ে যান।
তিনি ১৬ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ২৫ রান করেন। ১৩ ওভারে ৮ উইকেটে ১০৫ রান তোলার পর বৃষ্টি নামলে তাৎক্ষণিকভাবে খেলা ১৩ ওভারেই নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মাঠের অবস্থা ভাল না থাকায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন ম্যাচ রেফারি।  শেফার্ড ৩টি, হেইডেন ও আকিল ২টি করে উইকেট নেন। কম ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১০৫ রান! ওভারপ্রতি রানের ক্ষেত্রে দারুণ হলেও প্রতিপক্ষের জন্য ১০ উইকেট হাতে নিয়ে আরেকটু বেশি টার্গেটে নামা সহজ। তাই খেলা না হওয়ায় বৃষ্টি, বৈরী প্রকৃতিকে ধন্যবাদ দিতেই পারে বাংলাদেশ দল। প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো তো ভাগ্যবানই মনে করছেন তার দলকে। তিনি বলেন, আমরা  ফেরিতে দীর্ঘ করে এসেছিলাম এবং এখানে কিন্তু আমরা গতকাল অনুশীলন করতে পারিনি। এটা আমাদের ছন্দ  কেটে দিয়েছে। তাই আমরা খুবই  সৌভাগ্যবান  যে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে।

 

 

×