
ছবি: সংগৃহীত
দুই হাজার বছর আগে, রোমান সাম্রাজ্যের যুগে খেজুর ব্যবসায়ী যে বীজগুলো ফেলে গিয়েছিলেন, তা হয়তো তাদের ধারণাই ছিল না এই বীজ একদিন আবার আলো দেখবে।
আর সেই বিস্ময়ের সাক্ষী এখন ইসরায়েলের আরাভা মরুভূমি, যেখানে সেই পুরাতন বীজ থেকে জন্ম নিয়েছে প্রকাণ্ড খেজুর গাছ, মাথা তুলে দাঁড়িয়ে মানুষকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
হাদাসা মেডিকেল সেন্টারের ড. সারা স্যালন এবং আরাভা ইনস্টিটিউটের ড. ইলেইন সলোয়ি প্রথম ২০০৫ সালে এই প্রাচীন বীজের একটি অঙ্কুরোদ্গম ঘটাতে সক্ষম হন। সেই গাছের নাম দেওয়া হয় "মিথুশেলাহ", বাইবেলের দীর্ঘজীবী চরিত্রের নামে।
এরপর আরও কিছু বীজ অঙ্কুরিত হয়। এর মধ্যে একটি স্ত্রী গাছ “হান্না”, যেটি মিথুশেলাহর পরাগ দিয়ে ২০২০ সালে প্রথম খেজুর ফল দেয়। স্বেচ্ছাসেবীরা সেই খেজুরকে “মধুমাখা হালকা মিষ্টি” স্বাদের বলে বর্ণনা করেছেন।
এই বীজগুলো পাওয়া গেছে মাসাদা এবং আশেপাশের মরুভূমির গুহা থেকে, যেখানে এক সময় বিদ্রোহীরা রোমানদের হাত থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করেছিল। আশ্চর্যজনকভাবে, মরু অঞ্চলের শুষ্ক আবহাওয়ায় এই বীজগুলো দু’হাজার বছর ধরে পচন ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছে।
প্রথমে প্রতিটি বীজকে গরম পানিতে ভিজিয়ে, এরপর পুষ্টি ও গ্রোথ হরমোনে ডুবিয়ে জীবাণুমুক্ত মাটিতে রোপণ করা হয়।
কোনোটি আট সপ্তাহে, আবার কোনোটি ছয় মাস পর অঙ্কুরোদ্গম করে। কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় এই বীজগুলো চতুর্থ শতাব্দী খ্রিষ্টপূর্ব থেকে দ্বিতীয় শতাব্দী খ্রিষ্টাব্দের সময়কালের।
গাছগুলো যথেষ্ট বড় হলে, গবেষকরা পাতার নমুনা নিয়ে পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং করেন। ফলাফলে দেখা যায়, প্রাচীন খেজুর জাতগুলোর মধ্যে প্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং মেসোপটেমিয়ার জিনের সংমিশ্রণ ছিল।
পুরাতন ইসরায়েলি কৃষকরা বিদেশি জাত এনে স্থানীয় পুরুষ গাছের পরাগ দিয়ে উৎপাদন বাড়াতেন, যা খেজুরকে আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছাতে সহায়তা করেছিল।
এই গবেষণা শুধুমাত্র ইতিহাস নয়, বরং ভবিষ্যতের কৃষিকেও দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, খরা সহনশীলতা, রোগ প্রতিরোধ ও সুস্বাদু ফলের জাত গঠনে এই প্রাচীন ডিএনএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বর্তমান সময়ে, বিশ্বব্যাপী 'সিড ব্যাংক' বা বীজভাণ্ডারগুলো তৈরি হচ্ছে ভবিষ্যতের সংকট মোকাবেলায়। এই গবেষণা দেখিয়েছে, ঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে বীজ হাজার হাজার বছর পরও জীবিত থাকতে পারে।
মুমু ২