ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

এক দিনে দুজনের মস্তিষ্কে চিপ প্রতিস্থাপন, আশাবাদী ইলন মাস্ক

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২৪ জুলাই ২০২৫

এক দিনে দুজনের মস্তিষ্কে চিপ প্রতিস্থাপন, আশাবাদী ইলন মাস্ক

ছবি: সংগৃহীত

ভোর হতেই শহর জেগে ওঠে স্বাভাবিক কোলাহলে। কিন্তু বিজ্ঞানপাড়ার এক গোপন ল্যাবে শুরু হয় দিনটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কনফারেন্স রুমে দাঁড়িয়ে আছেন প্রযুক্তি দুনিয়ার এক রহস্যময় নাম—এলন মাস্ক। চোখে অদ্ভুত দীপ্তি, যেন মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক নতুন ধাপে পা রাখার মুহূর্ত এসে গেছে।

পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো দুজন মানুষের মস্তিষ্কে একসঙ্গে প্রতিস্থাপন করা হলো নিউরালিঙ্ক চিপ—একটি ক্ষুদ্র অথচ বুদ্ধিমান যন্ত্র, যা মানুষ ও যন্ত্রের সীমানাকে এক করে দেবে। দুই ব্যক্তি শুয়ে আছেন স্টার ওয়ার্স-ঘরনার অপারেশন টেবিলে। ঘড়ির কাঁটা নির্ধারিত মুহূর্তে থেমে দাঁড়ায়। নীরবতা ছেঁকে ধরে পুরো কক্ষ। এরপর নিঃশব্দেই শুরু হয় ইতিহাস রচনার কাজ।

চিন্তা, স্বপ্ন, স্মৃতি, অনুভূতি—সবকিছুই এবার মস্তিষ্ক থেকে ইলেকট্রিক সংকেত হয়ে যাবে যন্ত্রে, আবার যন্ত্র থেকেও ফিরে আসবে মস্তিষ্কে।

একদিনেই দুটি সফল অস্ত্রপচার
একই দিনে দুটি সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে নিউরালিঙ্ক আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। সংস্থার দাবি, অস্ত্রপচারের পর দুজনই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

এর আগে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে নিউরালিঙ্ক প্রথমবারের মতো মানবদেহে চিপ প্রতিস্থাপন করে। কাঁধের নিচ থেকে পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত ৩০ বছর বয়সী নোল্যান্ড আরবার-এর মস্তিষ্কে চিপ বসানোর পর তিনি শুধু চিন্তার মাধ্যমে কম্পিউটারের কার্সর নিয়ন্ত্রণ ও অনলাইন দাবা খেলায় অংশ নিতে সক্ষম হন। নিউরালিঙ্কের দাবি, সেটিই ছিল তাদের প্রযুক্তির কার্যকারিতার প্রথম বাস্তব উদাহরণ।

কীভাবে কাজ করে ‘লিংক’ চিপ?
নিউরালিঙ্কের তৈরি যন্ত্রটির নাম লিংক। এটি একটি ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস, যা মস্তিষ্কের স্নায়ু সংকেত শনাক্ত করে, বিশ্লেষণ করে বাহ্যিক যন্ত্রে পাঠায়।

কয়েন আকৃতির এই চিপ ব্যবহারকারীর স্কাল টাইগার স্কেলের ভিতরে স্থাপন করা হয়। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে ১০২৪টি সূক্ষ ইলেকট্রোড-যুক্ত থ্রেড, যা মস্তিষ্কের কর্টেক্স অংশে স্থাপন করা হয়। প্রতিটি ইলেকট্রোড স্নায়ু সংকেত শনাক্ত করে একটি কাস্টম চিপে পাঠায়, যা পরে ব্লুটুথের মাধ্যমে বাহিরের যন্ত্রে সঙ্কেত পাঠায়।

পুরো অস্ত্রপচারটি নিউরালিঙ্কের নিজস্ব রোবটিক সার্জন দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির দাবি—এই রোবট মানুষের চেয়ে অনেক বেশি নিখুঁতভাবে ইলেকট্রোড বসাতে সক্ষম, ফলে মস্তিষ্কের আশেপাশের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

ভবিষ্যতের দরজা খুলছে নিউরালিঙ্ক
এটি শুধু একটি অস্ত্রপচার নয়, মানব সভ্যতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা। যেখানে মানুষ নিজেই নিজের ভবিষ্যৎ লিখছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি এক যুগান্তকারী মোড়। পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বাকরুদ্ধ, দৃষ্টিশক্তিহীনদের জন্য খুলে যেতে পারে নতুন পৃথিবীর দরজা।

প্রযুক্তি যখন মানবিক প্রয়োজনের জন্য ব্যবহৃত হয়, তখনই ঘটে সত্যিকারের বিপ্লব। নিউরালিঙ্ক যেন সেই বিপ্লবের পথিকৃৎ হয়ে উঠছে—নিশ্চল দেহে বয়ে আনা হচ্ছে চলমান স্বপ্নের ঢেউ।

 

শেখ ফরিদ

আরো পড়ুন  

×