
ছবি: সংগৃহীত
বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) শোষণ করতে পারে—এমন জীবন্ত নির্মাণসামগ্রী তৈরি করেছেন সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ (ETH Zurich)-এর বিজ্ঞানীরা। প্রচলিত নির্মাণসামগ্রীর সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল ও ছত্রাকের সংমিশ্রণে উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো তৈরিতে দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রফেসর মার্ক টিবিটের নেতৃত্বে এক আন্তঃবিভাগীয় গবেষক দল একটি ফটোসিন্থেটিক জীবন্ত উপাদান তৈরি করেছে, যাতে সায়ানোব্যাকটেরিয়া (cyanobacteria) ব্যবহার করে একটি থ্রিডি প্রিন্টযোগ্য জেল তৈরি করা হয়েছে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো সূর্যালোক ও CO₂ ব্যবহার করে প্রাণিত কাঠামোর মধ্যেই জৈব বস্তু ও খনিজ উৎপাদন করে—ফলে উপাদানটি বেঁচে থাকে, বৃদ্ধি পায় এবং বায়ু থেকে কার্বন সরিয়ে ফেলে।
দ্বৈত কার্বন ধারণ ক্ষমতা
উপাদানটির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো—এটি CO₂ কে জৈব কোষের মাধ্যমে ধারণ করার পাশাপাশি খনিজ হিসেবেও সংরক্ষণ করে। গবেষকদের ভাষায়, এটি শুধু একটি জীবন্ত সামগ্রী নয়, বরং একটি কার্যকর কার্বন সিঙ্ক বা শোষক হিসেবেও কাজ করে।
গবেষক ইয়িফান কুই বলেন, ‘সায়ানোব্যাকটেরিয়া পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবগুলোর একটি, যারা অতি অল্প আলোতেও ফটোসিন্থেসিসে পারদর্শী। এর ফলে তারা CO₂ থেকে কঠিন কার্বনেট (যেমন চুন) তৈরি করতে পারে।’ এই কঠিন খনিজ উপাদানগুলি দীর্ঘমেয়াদে CO₂ ধারণ করে রাখে, যা সাধারণ জৈব পদার্থের তুলনায় অনেক বেশি স্থায়ী।
হাইড্রোজেল: জীবাণুর আবাসস্থল
এই জীবন্ত উপাদান তৈরি করতে যে জেল ব্যবহার করা হয়েছে, তা হাইড্রোজেল—অর্থাৎ উচ্চ জলীয় উপাদানবিশিষ্ট একধরনের পলিমার নেটওয়ার্ক। এটি CO₂, জল ও পুষ্টির প্রবাহ সহজতর করে, যাতে ব্যাকটেরিয়ারা সক্রিয়ভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে উপাদানের পৃষ্ঠতল ও গঠন এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে আলো প্রবাহ ও পুষ্টি চলাচল বেশি হয়। ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় ছিল। পরীক্ষাগারে দেখা গেছে, প্রতি গ্রাম উপাদানে প্রায় ২৬ মিলিগ্রাম CO₂ শোষণ করা যায়—যা অনেক প্রচলিত জৈব প্রযুক্তির তুলনায় বহুগুণ কার্যকর।
ভবিষ্যতের ভবনই হবে কার্বন শোষণকারী
গবেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতের ভবনের দেয়াল বা ছাদে এই ধরনের জীবন্ত উপাদান প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার করে পুরো স্থাপনাটিকেই একটি পরিবেশবান্ধব CO₂ সিঙ্কে রূপান্তর করা সম্ভব। ইতোমধ্যে আর্কিটেকচারের গবেষকেরা এই ধারণার উপর ভিত্তি করে দুইটি পরীক্ষামূলক স্থাপনাও নির্মাণ করেছেন—একটি ভেনিসের আর্কিটেকচার বায়েনালে-তে এবং আরেকটি মিলানের ট্রিনেল প্রদর্শনীতে।
ভেনিসে ৩ মিটার উচ্চতার একটি জীবন্ত কাঠামো বানানো হয়েছে—যা বছরে ১৮ কেজি পর্যন্ত CO₂ শোষণ করতে পারে, যা একটি ২০ বছরের পাইন গাছের সমান। মিলানে ‘ড্যাফনের স্কিন’ নামের একটি ইনস্টলেশনে কাঠের শিঙল আবৃত কাঠামোয় জীবাণুর ছোপ তৈরি করে CO₂ শোষণ এবং প্রাকৃতিক পচনকে একটি নান্দনিক উপাদানে রূপান্তর করা হয়েছে।
এই উদ্ভাবনটি ‘ALIVE (Advanced Engineering with Living Materials)’ প্রকল্পের আওতায় গড়ে ওঠা একটি যুগান্তকারী সাফল্য, যেখানে জুরিখের ইটিএইচ-এর বিভিন্ন বিভাগের গবেষকরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছেন নতুন পরিবেশবান্ধব, টেকসই নির্মাণ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে।
সূত্র: https://www.sciencedaily.com/releases/2025/06/250620231906.htm
রাকিব