ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই অভ্যুত্থানই এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা করে: আবু জাফর

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ১৭ জুলাই ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানই এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা করে: আবু জাফর

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের আয়োজনে জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম আকরামসহ সব শহীদের স্মরণে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় গাজীপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সভা হয়।

স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এইচ এম আবু জাফর। তিনি বলেন, “গত বছরের ১৬ জুলাই খুনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা আবু সাঈদ ও চট্টগ্রামের ওয়াসিম আকরাম শহীদ হন। তাদের শাহাদাতের মধ্য দিয়েই অরাজনৈতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে, শহীদ হন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ, লক্ষাধিক মানুষ আহত বা পঙ্গু হন। এই অভ্যুত্থানই এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা করে এবং খুনি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ২০২৪ সালের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি, তাদের আত্মত্যাগ জাতি কখনো ভুলবে না। তবে দুঃখজনকভাবে আজ একটি গোষ্ঠী এ আন্দোলনের কৃতিত্ব এককভাবে নিয়ে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। গণঅভ্যুত্থান কোনো একক দলের সম্পত্তি নয়, এটি দেশের আপামর জনতার অধিকার। তবে ছাত্রদল এই অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে—১৪২ জন ছাত্রদল নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন। তাই ছাত্রদলকে বাদ দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস অসম্পূর্ণ।”

গোপন একটি সংগঠনের নেতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “যার সভাপতি আন্দোলনে না গিয়ে বাজারে সবজি কিনেছে, সেই সংগঠন আজ আন্দোলনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দাবি করছে—এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা।”

সরকার শহীদদের নিয়েও বিভাজন তৈরি করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “পাঠ্যপুস্তকে ছাত্রদল কর্মী ওয়াসিম আকরামের নাম পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি—এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমরা চাই, সব শহীদের মর্যাদা সমানভাবে নিশ্চিত হোক।”

স্মরণ সভায় এই ছাত্রনেতা আরও অভিযোগ করেন, মিটফোর্ডে দুই ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্ব থেকে সৃষ্ট সোহাগ হত্যাকাণ্ডের দায় বিএনপির উপর চাপাতে একটি গোপন বাহিনী ষড়যন্ত্র চালিয়ে গেছে। পুলিশের তদন্তে এই ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। তিনি বলেন, “এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে যারা কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিয়েছে, ভবিষ্যতে তাদের প্রতিহত করবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।”

তিনি আরও বলেন, “পি-আর পদ্ধতির নামে জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি ও পীরভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নতুন করে ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন করতে চাইছে। এমন অনেক পীর আছেন, যাদের মুরিদ আছে কিন্তু ভোটার নেই। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ওয়াসিম-সাঈদ সহ দুই হাজার শহীদ এই স্বার্থান্বেষী ফ্যাসিবাদের জন্য প্রাণ দেননি।”

তিনি ছাত্রদল কর্মীদের ৩১ দফা ভিত্তিক একটি সাম্যবাদী, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রোহানুজ্জামান শুক্কুর এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিরণ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক এনাম, গাজীপুর মহানগরের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজুর রহমান খান, দপ্তর সম্পাদক বোরহান উদ্দিন ও সহ-দপ্তর সম্পাদক মোবারক হোসেন রাসেল।

 

 

ফারুক

×