.
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ উদ্যোগে ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, নামে একজন ফ্যাসিস্ট বিদায় নিলেও জাতির ওপর থেকে ফ্যাসিজমের কালো থাবা কিন্তু বিদায় নেয়নি।
ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশের পর আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতি খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে একটা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন। আমরা দাবি করছি, যেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। সেই ধরনের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যেন নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে পারে এবং সেইভাবে যেন তারা কাজ করেন।
ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন চলছে নির্বাচন হবে কি হবে না। তবে আমি খুব আশাবাদী মানুষ। নির্বাচন তো এদেশের মানুষ চায়, নির্বাচনের জন্য তো এদেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে। মানুষ একটা নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চায় পার্লামেন্টের মধ্য দিয়ে। এ জিনিসগুলো নিয়ে আমি মনে করি কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো যে, যত দ্রুত সম্ভব আমরা সংস্কারের কাজগুলো করে আমরা নির্বাচিত সরকারের দিকে যাই, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যাই। আর বিএনপিই সবার আগে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। বিএনপির জন্মই সংস্কারের মধ্য দিয়ে। তাই বিএনপি অবশ্যই সংস্কারের পক্ষে। তবে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে বাকি সংস্কারগুলো সংসদে মতামত নিয়ে করার পক্ষে বিএনপি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বিএনপি খাটো করে দেখতে চায় না জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে মূল্যায়ন করেই জুলাই সনদের মতামত বুধবার রাতে সরকারের কাছে জমা দিয়েছে বিএনপি। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা সংস্কারকে স্বাগত জানাই। কিন্তু কেউ যদি বলে বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, তাহলে সেটা ভুল ব্যাখ্যা।
ফখরুল বলেন, ১৭ বছরে প্রায় ৬০ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে, ২০ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় না। যারা এই বাস্তবতা অস্বীকার করছেন, তারা গণতন্ত্রের দিকেই চোখ বন্ধ করে আছেন। তিনি বলেন, দেশের জনগণ নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না। আমরা আশাবাদী, সামনে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে, যেখানে দেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। কিন্তু বারবার একটি অপশক্তি সেই পথে বাধার সৃষ্টি করছে। কিছু দূর এগিয়ে আবার কিছু দূর পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা। গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীতে এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়ার সময় হয়েছে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ তো নেই, দুঃশাসন তো বিদায় নিয়েছে, না। আমরা তো তাাকিয়ে দেখতে পাই, আমাদের সামনে এখনো দেখতে পাচ্ছি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো বিরাজমান। রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা, দিল্লির আধিপাত্যের কালো থাবা চতুর্দিকে ছেয়ে বসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য-রাজনীতি-আন্তর্জাতিক নীতি-কূটনীতি এমনকি সামনের নির্বাচনে জনগণের আকাক্সক্ষাকে কিভাবে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া যায়, তার চক্রান্ত কিন্তু এখনো বিদ্যমান।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচন আসলে পরাশক্তির যে খেলা হয়, সেই খেলা কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি। অর্থপাচার, লুটপাট, দুর্নীতির সিন্ডিকেট কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। জাতীয় ঐক্যের যে কমন ইস্যু শুধু আওয়ামী লীগ নেই বলে আমাদের মধ্যে বিভেদ থাকবে, ঐক্য থেকে বেরিয়ে যার যার হয়ে যাব, তা হয় না। আমরা বক্তৃতার সময় বলব, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়, আর কাজের সময় আসলে দেখা যাবে যে, না- দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড় হয়ে যাবে, এটা নিয়ে আত্মপর্যালোচনার সময়ে এসেছে এখনই।
গোলাম পরওয়ার বলেন, নামে একজন ফ্যাসিস্ট বিদায় নিলেও জাতির ওপর থেকে ফ্যাসিজমের কালো থাবা কিন্ত বিদায় নেয়নি। এজন্য আমি মনে করি, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে জুলাই অভ্যুত্থানের যে কঠিন চেতনা আমরা লালন করেছিলাম, তেমন একটা জাতীয় ঐক্যের সময় কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। আমি মনে করি, এটি তার চূড়ান্ত মুহূর্ত আমরা অতিক্রম করছি।
সংস্কার সম্পর্কে মাহমুদুর রহমান বলেন, যেগুলো এখন আমরা একমত হতে পারব না, রেখে দেব। আগামী দিনে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা সেই বিষয়গুলো যদি পছন্দ করেন, তাহলে সংস্কার করার চেষ্টা করবেন। কারও কারও মনে হচ্ছে যে, ভাই এখনই মানে নাই তখন তো মানবেই না। যদি কোনো কারণে টু-থার্ড মেজরিটি পেয়ে যায়, তাহলে তাদের সঙ্গে কথাই বলা যাবে না। কথাটা উঠে গেল বলে বলেই ফেলি, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কোনো দলেরই আগামী নির্বাচনে টু-থার্ড মেজরিটি পাওয়া উচিত নয়। আমি জানি এখানে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশই একটা দলের ভক্ত। কিন্তু কোনো দলের ভক্ত হওয়ার চেয়ে এখন কাজ গণতন্ত্রের পক্ষে যাওয়ার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর পরিবার এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছয় সাংবাদিকের পরিবারের হাতে সম্মাননা প্রদান করেন বিএনপি মহাসচিব।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, একে এম মহসিন, ইরফানুল হক নাহিদ, দিদারুল আলম, সাঈদ খান, খন্দকার আলমগীর হোসেন ও প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ফ্যাসিবাদবিরোধীসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ ৬৪ জন সাংবাদিকের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডিইউজের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক।
প্যানেল মজি
