
বাংলাদেশে জমি নিয়ে বিরোধ নতুন কিছু নয়। দখল, সীমানা নির্ধারণ, কিংবা জোরপূর্বক জমি দখলের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে প্রায়শই ঘটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এমন পরিস্থিতিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আইনি উপায় হিসেবে বিবেচিত।
কখন প্রযোজ্য ১৪৫ ধারার মামলা?
আপনার জমির উপর কেউ জবরদখলের চেষ্টা করলে, কিংবা দখল থেকে আপনাকে উচ্ছেদ করার হুমকি দিলে, এমনকি দখল নেওয়ার মতো পরিস্থিতিও যদি সৃষ্টি হয় তাহলে আপনি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করতে পারেন। এই ধারার আওতায় আদালত উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে।
১৪৫ ধারার আদেশ কি জমির মালিকানা নির্ধারণ করে?
না, এই মামলা জমির মালিকানা নির্ধারণ করে না। এটি শুধুমাত্র জমির সাময়িক দখল বজায় রাখতে এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। আদালত এখানে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেন, যাতে বিরোধপূর্ণ জমিতে কোনো পক্ষই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে। মালিকানা নির্ধারণের জন্য অবশ্যই দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে।
নিষেধাজ্ঞা জারি করার ধাপগুলো:
ধাপ ১: আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ
প্রথমেই একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করুন। তিনি আপনার জমি সংক্রান্ত সমস্যা শুনে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবেন।
ধাপ ২: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন
জমির দলিল
খতিয়ান ও নামজারির কাগজ
বিরোধের বর্ণনা
প্রমাণাদি (ছবি, সাক্ষীর বিবৃতি ইত্যাদি)
ধাপ ৩: আদালতে আবেদন দায়ের
আপনার আইনজীবী জমির দখল ও বিরোধ নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে নিষেধাজ্ঞা আবেদন তৈরি করবেন এবং নির্ধারিত ফি দিয়ে তা আদালতে জমা দেবেন।
ধাপ ৪: শুনানি ও প্রমাণ উপস্থাপন
আদালত উভয় পক্ষকে হাজির হতে বলবেন এবং শুনানিতে প্রমাণ ও সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে।
ধাপ ৫: আদেশ প্রদান
আদালত পর্যালোচনা শেষে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন, যার ফলে উভয় পক্ষকে বিরোধপূর্ণ জমিতে কোনো কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হয়।
১৪৪ বনাম ১৪৫ ধারা
অনেক সময় ১৪৪ ও ১৪৫ ধারা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা যায়। সংক্ষেপে বলা যায়:
১৪৪ ধারা: জনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োগ করা হয়, যেখানে কোনো সভা-সমাবেশ, জমায়েত বা সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকে। এটি জেলা বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জারি করেন।
১৪৫ ধারা: জমির দখল সংক্রান্ত বিরোধে প্রয়োগ হয়। এতে আদালত উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ রোধে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেন, তবে এটি মালিকানা নির্ধারণ করে না।
কেন প্রয়োজন হয় নিষেধাজ্ঞা?
জমি রক্ষা করতে
সংঘর্ষ ও সহিংসতা ঠেকাতে
বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে
জমি নিয়ে বিরোধের ক্ষেত্রে শান্তি বজায় রাখা ও আইনি অধিকার সংরক্ষণে ১৪৫ ধারা একটি কার্যকর ব্যবস্থা। তবে এটি একটি সাময়িক প্রতিকার চূড়ান্ত মালিকানা নির্ধারণের জন্য আপনাকে দেওয়ানি আদালতের সহায়তা নিতে হবে। সঠিক পথে নিষেধাজ্ঞা পেতে একজন দক্ষ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র:https://tinyurl.com/5azk2k53
আফরোজা