ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা! নো-ম্যানস ল্যান্ডে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৯ মে ২০২৫; আপডেট: ০৮:০৫, ১০ মে ২০২৫

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা! নো-ম্যানস ল্যান্ডে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

ছবি: সংগৃহীত

উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার মাঝামাঝি সীমান্তের ওপারে জলপাইগুড়ির বেরুবাড়ী এলাকায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের পক্ষে কার্ফু (সন্ধ্যাকালিন আইন) জারি করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকাটি ভারত অংশের বিএসএফের ৯৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের আওতায় পড়েছে। এপারের সীমান্ত বাংলাদেশের নীলফামারী ব্যাটালিয়ান ৫৬ বিজিবি-র আওতাধীন। ওপারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে জানা যায় গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত থেকে এই কার্ফু শুরু হয়। ঘোষনা অনুযায়ী পরবর্তি নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ওই এলাকায় রাত ৮টা হতে সকাল ৮টা পর্যন্ত কার্ফু চলামান থাকবে। এ বিষয়ে বেরুবাড়ী গ্রামে গতকাল বিকালে থেকে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের নগর বেরুবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের জমাদার পাড়া গ্রামে এই কার্ফুর প্রচার করে বিএসএফ। সেখানে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের সবকিছু বুঝিয়ে বলেন বিএসএফের ৯৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডয়ান্ট মনোজ কুমার । যা ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়।

সূত্র বলছে বাংলাদেশ, চিন, নেপাল, ভুটান ঘেরা বাংলার চিকেন নেককে সুরক্ষিত রাখতে কোনও রকম ত্রুটি রাখছে না ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রায় সাড়ে ২২ কিমি দীর্ঘ শিলিগুড়ির চিকেন নেক করিডর।

শুক্রবার (৯ মে) রাতে এ রিপোর্ট লিখার সময় কার্ফু শুরু হয় যথা সময়ে। সূত্র মতে শুক্রবার রাত থেকে কার্ফু এলাকা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। যা নীলফামারীর চিলাহাটির ওপারে হলদীবাড়ি সীমান্ত, খালপাড়া,ডাঙ্গাপাড়া, কুচলিবাড়ির তিনবিঘা করিডোর সংলগ্ন এলাকা, তিস্তা নদীর সীমান্ত,পঞ্চগড়ের মাগুড়মারী, শুকানী, অমরখানা ঘাঘড়া, মালেকাডাঙ্গা বগদুরঝুলা এলাকা পড়েছে। ভারতীয় একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

সীমান্তবাসী সূত্রমতে ওপরের সীমান্ত সংলগ্ন বেরুবাড়ী এলাকায় রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসা বা বিশেষ কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে না থাকার নির্দেশ দিয়ে টহল জোড়দার রেখেছে বিএসএফ। সূত্র আরও জানায় বেরুবাড়ী এলাকায় ওই সীমান্তে কোন তারকাটা বেড়া নেই। ফলে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘাঘড়া ও মালেকাডাঙ্গা এলাকার সীমান্তবাসীকে নো-ম্যানস ল্যান্ডে কার্ফু চলাকালিন হাঁটাচলা না করার জন্য সর্তক করে দিয়ে টহল জোড়দার করেছে বিজিবি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পর ভারত বাংলাদেশের মধ্যে কিছু চুক্তি হয়। এ চুক্তির অন্য সব বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় ছিল যে, যদি কোনো দেশ সীমান্ত বরাবর বেড়া দেয়, তবে তা শূন্য পয়েন্ট থেকে নিজ ভূখন্ডের ১৫০ মিটার ভেতরে নির্মাণ করতে হবে। এ চুক্তি অনুসারে ভারত সরকার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছে। কাঁটাতারের বেড়া থেকে শূন্য পয়েন্ট পর্যন্ত (সীমানা পিলার) ১৫০ মিটার জায়গা নো ম্যানস ল্যান্ড হিসেবে চিহ্নিত। এ জমিতে ঘন জঙ্গল থাকতে পারবে না। তাই এসব ভূখন্ডের নিচু জমিতে ধানসহ সবজি চাষ ও চা বাগান করা হয়েছে।

এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদীদের শায়েস্তা করতে ভারত চালাচ্ছে অপারেশন সিঁদুর। তবে তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবাসীকে। কতটা ঝুঁকির মুখে আছে পশ্চিমবঙ্গ? এমনও প্রশ্ন করা হয় প্রচারিত সংবাদে। হিন্দুস্তান টাইমসের বাংলা ভার্সনের শুক্রবারে (৯ মে) প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম দেয়া হয় “তড়িঘড়ি বাংলার সীমান্ত পরিদর্শনে বিএসএফের আধিকারিক, জওয়ানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ”। ওই সংবাদে বলা হয় ভারত-পাক সংঘাতের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্তে ইতিমধ্যেই নজরদারি বাড়িয়েছে বিএসএফ।

পায়ে হেঁটে টহল দেওয়ার পাশাপাশি সাইকেল, বাইক এবং নদীপথে স্পিড বোটে টহলদারি চালাচ্ছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। পাক জঙ্গিরা কোনওভাবেই যাতে বাংলাদেশের সীমান্ত হয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে তার জন্য সতর্ক রয়েছেন বিএসএফ জওয়ানরা। খবরে বলা হয় এই অবস্থায় সীমান্তের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শিলিগুড়িতে গিয়েছেন বিএসএফের ইস্টার্ন কম্যান্ডের এডিজি মহেশকুমার আগরওয়াল। তিনি বৃহস্পতিবার (৮ মে) তিনি বিএসএফ আধিকারীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর সবসময়ের জন্য জওয়ানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি এলাকাবাসীদের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়িয়েছে বিএসএফ। জানা গিয়েছে, এদিন কলকাতা থেকে শিলিগুড়িতে পৌঁছান এডিজি। তিনি আধিকারিকদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। সূত্রের খবর, এডিজি প্রথমে কদমতলায় বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের সদর কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি অন্যান্য আধিকারিকদের সঙ্গে উচ্ছ পর্যায়ের বৈঠক করেন।

সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আইজি রিপোর্ট দেন এডিজিকে। ওই খবর মতে বৈঠক শেষের পর সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি তিনবিঘা করিডরে যান। জলপাইগুড়ি সেক্টরের ডিআইজি তাঁকে এই সীমান্ত নিয়ে রিপোর্ট করেন। পরে তিস্তা নদীর চর ও দহগ্রাম-আঙ্গারপোঁতা গ্রামে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন। এছাড়াও, সীমান্তের ইলেকট্রনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও এডিজিকে রিপোর্ট করেন ডিআইজি। পরে জলপাগুড়ি সেক্টরের সদর কার্যালয়ে একটি সম্মেলনে যোগ দিয়ে সীমান্তে জওয়ানদের সর্বদা সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়।

আসিফ

×