ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

টক-মিষ্টি স্বাদের লোভনীয় ফল, দাম আকাশছোঁয়া

মামুন-অর-রশিদ

প্রকাশিত: ২২:৪২, ৯ মে ২০২৫

টক-মিষ্টি স্বাদের লোভনীয় ফল, দাম আকাশছোঁয়া

.

মধুমাস জ্যৈষ্ঠের আগেই রাজশাহীর বাজারে দেখা দিয়েছে লোভনীয় ফল লিচু। বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সাহেব বাজারসহ কয়েকটি বাজারে দেশীয় আগাম জাতের লিচু বিক্রি করতে দেখা গেছে। অসময়ে হলেও বাড়তি লাভের আশায় আগেই বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে এই লিচু। এখনো পরিপূর্ণতা না পেলেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব লিচু।
ভর মৌসুমের লিচু মিষ্টি ও রসালো হলেও এখনকার লিচু টক-মিষ্টি স্বাদের, আটিও বড়। এর পরও দাম বেজায় চড়া। কেবল রং ধরতেই প্রায় অপরিপক্ব দেশী জাতের ছোট আকৃতির ১০০টি লিচুর দাম চাওয়া হচ্ছে মানভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার বেশি। ফলে সাধ্যের বাইরে হওয়ায় সাধ থাকলেও আগাম লিচু কিনতে পারছেন না অনেকেই।  
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজারে দেখা মেলে এক লিচু ব্যবসায়ীর। ইন্তাজ আলী নামের এ ব্যবসায়ী জানান, এসব লিচু রাজশাহী নগরীর রায়পাড়া থেকে এনেছেন। বেচা-বিক্রি  জোরতাল না হলেও অনেকে কিনছেন বলে জানান তিনি। এদিনই প্রথম লিচু বাজারে এনেছেন তিনি। নগরীর সাহেববাজার ছাড়াও, লক্ষ্মীপুর, শালবাগান ও কোর্ট চত্ব¡র এবং হড়গ্রামে প্রথম লিচুর দেখা মিলেছে। লিচু বছরের প্রথম ফল হিসেবে শখ করে বেশি দাম দিয়েই কিনছেন কেউ কেউ।  
রাজশাহী মহানগরীর হড়গ্রাম এলাকার বাদল ইকবাল জানান, লিচুর দাম অনেক বেশি। ১০০টি লিচু কেনার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৫০টি লিচু কিনেই বাড়ি ফিরছেন তিনি। তবে স্বাদ ও আকারে এখনো লিচু পরিপক্ব হয়নি। কেবলমাত্র বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে লিচু ভাঙছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।  
স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ীরা জানান, লিচু হলো লোভনীয় ও অতিথি ফল। কারণ এই ফল বাজারে মাত্র এক থেকে দেড় মাস থাকে। এখন বাজারে তেমন লিচু ওঠেনি। এ কারণে লিচুর দাম বেশি। দুই সপ্তাহ পর লিচুর ভরা মৌসুম শুরু হবে। তখন প্রচুর পরিমাণে লিচু বাজারে আসবে। বাজারে পর্যাপ্ত লিচু এলেই দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে। তখন সবাই লিচুর স্বাদ নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, কৃষি বিভাগের সূত্র অনুয়ায়ী এ বছর রাজশাহীতে ৫৩০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় তিন হাজার ৮০০ মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
মাগুরায় গাছ থেকে লিচু পাড়া শুরু ॥  মাগুরা থেকে সঞ্জয় রায় চৌধুরী জানান, বৈশাখ মাসের শেষ দিকে মাগুরায় গাছ থেকে পাকা লিচু পাড়া শুরু হয়েছে। বাজারে উঠেছে পাকা লিচু। তবে বর্তমানে যে লিচু উঠেছে তা প্রতিশত ৩শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে জেলাবাসী লিচুর স্বাদ গ্রহণ করতে পারছেন। মাগুরার রিচুর কদর রয়েছে দেশব্যাপী। খরার কারণে এ বছর লিচুর ফলন কিছুটা হয়েছে। জানা গেছে, মাগুরায়  চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন খরার কারণে মধ্যম মানের হয়েছে। আর কৃষকরা বলছেন বৃষ্টির অভাবে ফলন কম। গাছ থেকে দেশী লিচু পাড়া শুরু হয়েছে। বাজারে উঠেছে পাকা লিচু। বর্তমানে লিচু প্রতিশ’ ৩শ’ টাকা থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা  দরে বিক্রি হচ্ছে। জানা যায়, জেলায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে দু’হাজারেও বেশি লিচু বাগান রয়েছে। দেশী জাতের পাশাপাশি  বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচু বাগান গড়ে উঠেছে। জেলার চারটি উপজেলার মধ্যে মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় সব থেকে বেশি লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ইছাখাদা, রাউতড়া, আলাইপুর, হাজরাপুর, আলাইপুর, খালিমপুর, নোয়াপাড়া, দক্ষিণ নোয়াপাড়া, হাজীপুর, রাঘবদাইড়, নড়িহাটি, শীবরামপুর গ্রামে সব থেকে বেশি লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষে অথবা জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথমদিক থেকে বাজারে আসে পাকা লিচু। লিচু চাষ লাভজনক বলে জেলায় লিচু বাগান গড়ে উঠছে। এক বিঘা জমির লিচু বাগান করতে ৩০/৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ৩ থেকে ৫ বছর পরে গাছে লিচু ধরে। প্রথমদিকে খরচবাদে বিঘাতে ৪০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকে। গাছ যত বড় হবে লাভ তত বেশি হয়। দেশী লিচু প্রতিশ’ পাইকারি দুইশ’ টাকা এবং খুচরা তিনশ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জেলায় প্রতি বছর কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা মূল্যের লিচু উৎপন্ন হয়ে থাকে।

প্যানেল

×