ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

ম্যানোস্ফিয়ার নিয়ে আতঙ্ক, তরুণদের কি মগজধোলাই করা হচ্ছে?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৩১, ৮ মে ২০২৫

ম্যানোস্ফিয়ার নিয়ে আতঙ্ক, তরুণদের কি মগজধোলাই করা হচ্ছে?

ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন দুনিয়ায় এক নতুন শব্দ: ‘ম্যানোস্ফিয়ার’। এটি এমন একটি ভার্চুয়াল সম্প্রদায়, যেখানে তথাকথিত 'পুরুষত্বে' ফেরার আহ্বান জানানো হচ্ছে। প্রচলিত নারীবাদী বা 'ওয়োক' চিন্তাধারার বাইরে গিয়ে গড়ে উঠেছে এই ঘরানা, যার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব অ্যান্ড্রু টেট।

এই গোষ্ঠীর সদস্যরা বিশ্বাস করেন, সমাজ পুরুষদের প্রকৃত ভূমিকা ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট, ব্লগ—সব কিছুই ব্যবহার হচ্ছে নারীবাদ ও লিঙ্গ-সমতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশের মঞ্চ হিসেবে।

ম্যানোস্ফিয়ার শব্দটি প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে প্রকাশিত The Manosphere: A New Hope For Masculinity বইতে। যদিও এটি তখন একাডেমিক আলোচনা সীমিত ছিল, পরবর্তীতে এর সঙ্গে নারী-বিদ্বেষ, যৌন নিপীড়ন ও অনলাইন হয়রানির সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।

‘ম্যানোস্ফিয়ার’ মূলত “রেড পিল” দর্শনের অনুসারীদের নিয়ে গঠিত—যারা বিশ্বাস করেন, তারা সমাজের একটি গোপন ও অস্বস্তিকর সত্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। The Matrix সিনেমার লাল বড়ির রূপক থেকে উদ্ভূত এই বিশ্বাসে, তারা প্রচলিত বাস্তবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নিজেদের মতো করে নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করান।

অ্যান্ড্রু টেট এই আন্দোলনের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। সাবেক কিকবক্সার টেট বর্তমানে শিশু পাচার, অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ও অর্থপাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত, যদিও তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর ভাই ট্রিস্টান টেট-সহ এই বিতর্ক তাঁকে আন্তর্জাতিক আলোচনায় নিয়ে এসেছে।

তরুণরা কেন টেটের মতাদর্শের প্রতি আকৃষ্ট? বিশেষজ্ঞদের মতে, বিচ্ছিন্নতা, পিতার অনুপস্থিতি, সামাজিক হতাশা এবং পরিচয়ের সংকট থেকেই অনেক তরুণ এই ভাবনার প্রতি ঝুঁকছে। অনলাইন অ্যালগরিদম এই বিভাজনকে আরও জোরালো করে তোলে।

তবে সমালোচকরা বলেন, ম্যানোস্ফিয়ার হয়তো একটি অতিরঞ্জিত মিডিয়া-নির্মিত আতঙ্ক। যেমন অতীতে ভিডিও গেম, ‘জম্বি নাইফ’, এমনকি মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিয়েও সামাজিক আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

তাই প্রশ্ন থেকে যায়: ম্যানোস্ফিয়ার কি আসলেই বিপজ্জনক, না কি এটি এক অদৃশ্য ও অতিরঞ্জিত কল্পজগৎ? এতে নির্দিষ্ট কোনো সদস্যপদ নেই, কেউ নিজেকে সরাসরি নারী-বিদ্বেষী বলে না। এটি একটি বিস্তৃত, ছড়ানো এবং প্রায়শই বেনামি অনলাইন স্পেস।

শেষ পর্যন্ত, একে ঘৃণার প্ল্যাটফর্ম, অনুতপ্ত তরুণদের ঠিকানা না মিডিয়া-সৃষ্ট ছায়াপুরুষ—কোনটা বলা যাবে, সেটি এখনো গবেষণার বিষয়।

শহীদ

×