
ছবি: সংগৃহীত
পৃথিবীর বৃহত্তম মেরু মরুভূমি অ্যান্টার্কটিকার গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষকেরা দীর্ঘদিন ধরে ধাঁধায় ছিলেন। এতদিন ধারণা ছিল, বরফ প্রথম গঠিত হয় অ্যান্টার্কটিকার কেন্দ্রে এবং পরে বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে নতুন এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, প্রায় ৩৪ মিলিয়ন বছর আগে অ্যান্টার্কটিকার পূর্ব অংশে প্রথম বরফ জমা শুরু হয়েছিল, যা পশ্চিম দিকে বিস্তৃত হতে আরও ৭ মিলিয়ন বছর সময় নিয়েছিল।
এই সময়কালেই পৃথিবী গ্রিনহাউজ অবস্থা থেকে ‘আইসহাউজ ক্লাইমেটে’ রূপ নেয়।
গবেষকেরা প্রথমবারের মতো পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার সমুদ্রতলদেশ থেকে সংগৃহীত পলির নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। ১০০ মিটার পানির নিচ থেকে ও আরও ১০ মিটার তলদেশ খনন করে সংগ্রহ করা এসব সূক্ষ্ম পলির মধ্যে বড় পাথর বা বালুকণার অনুপস্থিতি দেখে ধারণা করা হয়েছে, ওই অঞ্চলে তখন উল্লেখযোগ্য বরফ ছিল না।
বিশেষ স্ক্যানের মাধ্যমে দেখা গেছে, অ্যান্টার্কটিকার পশ্চিম অংশের ভূমি কাঠামো পূর্ব অংশের চেয়ে ভিন্ন। এটি এখন উষ্ণ সমুদ্রজলে ঘেরা, যা ভবিষ্যতে বরফ গলার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, বরফ গঠনে যে সময় লেগেছে, বরফ গলতে তার অনেক কম সময় লাগবে।
তাপমাত্রা ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের সামান্য পরিবর্তনেই এক ধরনের ডোমিনো প্রভাব দেখা দিতে পারে। পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার সাগরে ভাসমান বরফ গলতে শুরু করলে, তার উপরিভাগ ও নিচে জমা বরফও দ্রুত গলে যাবে। এর ফলে সিল ও পেঙ্গুইনের মতো প্রজাতির আবাসস্থল ধ্বংস হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার সমস্ত বরফ গলে যায়, তবে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩.৫ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা একটি একতলা ঘরের উচ্চতার চেয়েও বেশি। এর প্রভাব বিশ্বের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর জন্য ভয়াবহ হতে পারে।
গবেষকেরা আশাবাদী যে, এই গবেষণা মানুষের কার্বন নির্গমন কমানোর আগ্রহ বাড়াবে। কারণ এবার জলবায়ু পরিবর্তন প্রকৃতির নয়, বরং মানবসৃষ্ট। এবং এটি শুধুই পরিবেশ রক্ষার বিষয় নয়, এটি মানবজাতির টিকে থাকার প্রশ্ন।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
রাকিব