
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা’ গ্যালারিতে শুক্রবার ‘পবিত্র শান্তি জাগরণ : বাংলার বুদ্ধ’ শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা
পুরো প্রদর্শনালয়জুড়ে শিল্পের আলোকরেখায় উদ্ভাসিত হয়েছেন মহামতি গৌতম বুদ্ধ। এ মহামানবকে উপজীব্য করেই সৃজিত হয়েছে শিল্পকর্মসমূহ। ঠাঁই পেয়েছে রং-তুলির আঁচড়মাখা চিত্রকর্ম থেকে ভাস্কর্য। শুধু কি তাই! শিল্পের বহুমাত্রিক তাকে আলিঙ্গনের শিল্পায়োজনটিতে নজর কাড়ছে সুই-সুতোর কাজ। শিল্পরসিককে কাছে টানছে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের ছাই দিয়ে আঁকা ছবি। ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে সিনেমার ব্যানার পেইন্টিং, রিক্সা পেইন্টিং ও ক্যালিগ্রাফি মাধ্যমের কাজগুলো। চোখে পড়ে নান্দনিক করণকৌশলে সৃষ্ট মৃৎশিল্প। আর এসব শিল্পে বিভিন্ন অভিব্যক্তি ও ভঙ্গিমায় দৃশ্যমান হয়েছেন বুদ্ধ। শিল্পিত পথরেখায় ধরা দিয়েছে তার জীবনাদর্শ ও দর্শনের নানা অধ্যায়। সেই সুবাদে সম্প্রীতি, শান্তি ও সৌন্দর্যের বারতার প্রকাশ ঘটেছে শিল্পকর্মগুলোতে। তেমনই এক ছবি এঁকেছেন আবদুস সাত্তার। এই চিত্রকরের চিত্রপটে মূর্ত হয়েছে বুদ্ধের সৌম্যকান্তি প্রতিকৃতি। শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিতে বুদ্ধর নদীপথ পরিভ্রমণের ছবি এঁকেছেন আগ্নেশ শ্রেয়া গমেজ। রঙের স্ফুরণে চিত্রপট সাজিয়েছেন অমিত নন্দী। উদ্ভাসিত হয়েছে বুদ্ধের ধর্মচক্র ও পরিনির্বাণের সুন্দরতম দৃশ্যকল্প। প্রাণীকুল ও উদ্ভিদ জগতের প্রতি বুদ্ধর ভালোবাসার মর্মবাণীকে ক্যানভাসে মেলে ধরেছেন অনুশ্রী দে। শিষ্যদের সঙ্গে বুদ্ধর ধ্যানমগ্নতার ছবি এঁকেছেন ঈশান দেবনাথ। কাদামাটির প্রলেপে বুদ্ধর ক্লান্ত ও অবসন্ন অবয়বের ভাস্কর্য গড়েছেন মালিকা ইসলাম মারিয়া। এসব শিল্পকর্মের দেখা মেলে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে। এখানে চলছে ‘পবিত্র শান্তির জাগরণ: বাংলার বুদ্ধ’ শীর্ষক প্রদর্শনী। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রাচ্য-চিত্রকলা অনুশীলন সংঘ ও লার্নিং ডিজাইন স্টুডিও যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। মিখাইল ইদ্রিসের কিউরেশনের এ শিল্পসম্ভারে দেখা মিলছে দেশের খ্যাতিমান থেকে উদীয়মান ৭৩ শিল্পীর শতাধিক শিল্পকর্ম। প্রাচ্য-শৈলীতে উপস্থাপিত হয়েছে বুদ্ধের জীবন, দর্শন এবং আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের চিরন্তন ভাবনার প্রতিচ্ছবিময় চিত্রকর্মসমূহ।
শুক্রবার বৈশাখী সন্ধ্যায় এই প্রদর্শনীর সূচনা হয়। বৈচিত্র্যময় শিল্পকর্মের সমান্তরালে প্রদর্শনীটি ঘিরে রয়েছে নানামুখী কর্মযজ্ঞ। সেই স্রোতধারায় অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার, শিল্পালোচনা, পুঁথিপাঠ, চর্যাগান, নৃত্য-গীতের আয়োজন।
প্রদর্শনীতে চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য ও সিরামিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে; যেখানে ঐতিহ্যবাহী কৌশল ও সমসাময়িক শৈল্পিক ভাষার সংমিশ্রণ ঘটেছে। শিল্পীরা ব্যবহার করেছেন তেলরং, জলরং, গোয়াশ, ওয়াশ, এগ টেম্পারা, রিভার্স পেইন্টিং, বাটিক, চারকোল, কলম, অ্যালকোহল বেসড কালির কাজ এবং অগ্নিদগ্ধ বঙ্গবাজারের ছাই-যা রূপান্তর ও পুনর্জন্মের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রদর্শনীনির্ভর অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে আজ শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে বুদ্ধের দর্শন ও চর্যাগান শীর্ষক সেমিনার। আলোচনায় অংশ নেবেন ড. সাইমন জাকারিয়া, নূরুন্নবী শান্ত ও সাধিকা সৃজনী তানিয়া। ১৩ মে সন্ধ্যায় উপস্থাপিত হবে গৌতম বুদ্ধের জীবনালেখ্য। এতে মনোরঞ্জন বালার ‘গৌতম বুদ্ধ গীতিকাব্য’ অবলম্বনে পাঠ, আবৃত্তি ও সংগীতের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে এই জীবনালেখ্য। এতে পরিবেশনা করবেন শাহ আলম দেওয়ান, মনোজ রায়, মজুমদার বিপ্লব ও অনিন্দ্য অমাত।
১৫ মে বিকেল পাঁচটায় ‘হীরকসূত্র, বুদ্ধের প্রতিচ্ছবি ও প্রাচ্যধারার ছাপচিত্র’ শীর্ষক শিল্পালোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক ড. রশীদ আমিন। এদিন সন্ধ্যায় থাকছে সংগীত, নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্রের সমন্বিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। পরিবেশনাসমূহ উপস্থাপন করবেন অরিত্রি নন্দী, প্রাপ্তি ঘোষ, বাপ্পী পাল, বদিউজ্জামান খান, অরুন্ধতী কর, সুবর্ণ চক্রবর্তী তন্ময় ও জাহাঙ্গীর আলম। ১৬ মে বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হবে ভাবসাধকদের চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের আসর। এই পরিবেশনা উপস্থাপন করবেন ভাবনগর ফাউন্ডেশনের সাধকশিল্পীবৃন্দ।
১৬ মে পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচির উৎসব ॥ পাঠ্যবই বা সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনার যখন আনন্দ খুঁজে পাবে না খুদে পাঠক, তখন সে যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লেখকদের রচনায় একটু চোখ বুলিয়ে আসে। কেবল কর্মজীবনের উদ্দেশে বই না পড়ে আলোকিত মানুষ হতে সৃজনশীল বই পড়তে হবে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বইপড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ উৎসবে এসব কথা বলেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। শুক্রবার সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জুবায়ের। খুদে পাঠকদের অনুপ্রেরণা দিতে হাজির হয়েছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, পাঠ্যবই পড়তে পড়তে, মুখস্থ করতে করতে এমন ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে যাই যে বই দেখলেই আর ভালো লাগে না। অথচ বইয়ের সঙ্গে পরিচয়টা হবে আনন্দের। সেজন্য আমি মনে করি পাঠ্যবইয়ের বাইরেও বই পড়তে হবে। পৃথিবীর সেরা লেখকরা যা লিখেছেন এবং আমাদের উপহার দিয়েছেন সেটা জানতে হবে। এছাড়া যে নিয়মিত বই পড়ে তার সামনে এক অন্য আলোর জগত উন্মোচিত হয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের দেশে বড় বৈষম্যটা বিদ্যমান শিক্ষা খাতে। যার ক্ষমতা আছে সে শহরের ভালো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা পাচ্ছে। যার ক্ষমতা নেই সে গ্রামের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে, যেখানে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কথা বলেন, তারা যদি এ বৈষম্য দূর করতে না পারেন তাহলে মূল হারিয়ে ফেলবেন।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচির আওতায় ৬৫টি স্কুলের ৫ হাজার ৯৪ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তারা সবাই ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। শুক্রবার ঢাকা মহানগরীর ৩১টি স্কুলের ২ হাজার ৫৬৩ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। তাদের মধ্যে স্বাগত পুরস্কার পেয়েছে ১৫৪৫ জন, শুভেচ্ছা পুরস্কার পেয়েছে ৮২৬ জন, অভিনন্দন পুরস্কার পেয়েছে ১৪৭ জন, সেরাপাঠক পুরস্কার পেয়েছে ৪৫ জন। সেরা পাঠকদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে একজন বিজয়ীকে দুই হাজার টাকা সমমূল্যের বই দেওয়া হয়।
আজ শনিবার ঢাকা মহানগরীর ৩৪টি স্কুলের ২৫৩১ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হবে। আয়োজকরা জানান, ১৬ মে বরিশালে ২ হাজার ৯৭৩ জন, ২৩-২৪ মে চট্টগ্রামে ৬ হাজার ২৮ জনকে, ১১ জুলাই খুলনায় ৩ হাজার ৯৪ জনকে পুরস্কৃত করা হবে।
প্যানেল