
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সামনে রেখে ঢাবি মধুর ক্যান্টিনে মঙ্গলবার ‘জুলাই ঐক্য’ নামে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ
জুলাই গণহত্যার বিচার, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ, শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ এবং তাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিকে সামনে রেখে বিভিন্ন মতাদর্শের ৩৫টি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম ‘জুলাই ঐক্যে’র আত্মপ্রকাশ হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মিলিত জোটটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বিগত সাড়ে ১৫ বছরের দমন-পীড়ন, দুর্নীতি, লুটপাট ও গণতন্ত্র হরণের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনতার অভূতপূর্ব জাগরণে সংগঠিত হয় ছাত্র জনতার ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক, চিকিৎসক ও সাধারণ জনগণ সম্মিলিতভাবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে।
বিভিন্ন উৎসে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই গণ-অভ্যুত্থানে জীবন দিতে হয় দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় ৩১,০০০ জন। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা পরিচালিত এ হামলা আন্তর্জাতিক মহলে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের আট মাস পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো- বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বেসরকারি মহলের কিছু অংশ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যা একদিকে শহীদ, আহত ও পঙ্গু জনগণের আত্মত্যাগের চূড়ান্ত অপমান এবং অন্যদিকে দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করার শামিল।
বক্তারা আরও বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের জীবন ও নিরাপত্তা নিয়েও চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা আজ বিপ্লবীদের বিতর্কিত করতে নানা প্রোপাগান্ডা ও দাবির আশ্রয় নিচ্ছে। আমরা এই পরিস্থিতিকে অত্যন্ত গুরুতর ও বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করছি। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেই, আমরা বিভিন্ন মতাদর্শের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ নিয়ে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করছি, ‘জুলাই ঐক্য’ নামে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় জোট।
আমরা বিশ্বাস করি, সকল বিভক্তি ভুলে গিয়ে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণকারী সব সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখা এখন সময়ের দাবি।
এই জোটের প্রধান লক্ষ্য ও দাবি হলো- জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের সাংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। ২০২৪ সালের গণহত্যা, শাপলা ট্র্যাজেডি, পিলখানা হত্যাযজ্ঞ, গুম, খুন, দুর্নীতি ও বিগত সাড়ে ১৫ বছরে সংঘটিত সকল রাষ্ট্রীয় অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করা।
এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে, ‘জুলাই ঐক্য’ সকল স্পিরিটধারী সংগঠন ও সচেতন নাগরিকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি: জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে মানববন্ধন।