
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে গোপালগঞ্জে যে সহিংসতা ও প্রাণহানি ঘটেছে, তা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, এনসিপির সমাবেশের আগেই আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকরা রাস্তায় গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে সমাবেশস্থলে ভাঙচুর চালায়। বিকেলে সমাবেশ শেষ করে যখন এনসিপির নেতারা গাড়িতে করে পুলিশি পাহারায় মাদারীপুরের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন আবার তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় পুলিশ ও সেনাসদস্যদের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনায় যে চারজন নিহত হয়েছেন, তাদের সবার শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। যারা আহত হয়েছেন, তাদের কয়েকজনও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শুক্রবার এ সম্পাদকীয় রচনার সময় আরও একজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।
গোপালগঞ্জের ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনী বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘গোপালগঞ্জে একটি রাজনৈতিক দলের জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে আহ্বান করা জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে এলাকার একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা গত বুধবার সংঘবদ্ধভাবে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। রাজনৈতিক সংগঠনের সমাবেশ চলাকালে মঞ্চে আবার হামলা চালানো হয়। একই সঙ্গে জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায় এবং বিপুল ককটেল, ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়। পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ও পুলিশ যৌথভাবে বিশৃঙ্খলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একপর্যায়ে গোপালগঞ্জে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে খুলনায় স্থানান্তর করা হয়। সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পেশাদারত্ব ও ধৈর্যের সঙ্গে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।’ সংঘর্ষের পর গোপালগঞ্জে বুধবার সন্ধ্যা থেকে সান্ধ্য আইন চলমান। যৌথ বাহিনীর অভিযানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রেপ্তার রয়েছে। আমরা আশা করব, কোনো নিরীহ নাগরিককে যেন হয়রানি করা না হয়। গণগ্রেপ্তারের নামে গ্রেপ্তার বাণিজ্যও কাম্য নয়।
মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি। রাজনীতির সক্রিয়তার জন্য মানুষের অকল্যাণ ডেকে আনা সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের পর দেশবাসী অপেক্ষা করছে একটি অবাধ সুষ্ঠু উৎসবপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। যার মধ্য দিয়ে তারা পরবর্তী শাসক তথা জনসেবক বেছে নেবেন। এরকম একটা আশাব্যঞ্জক সময়ে কোনো ধরনের সহিংসতা, হঠকারিতা প্রত্যাশিত নয়। রাজনীতিবিদদের হতে হবে সহনশীল, প্রতিপক্ষ সব দলের ভেতর সুন্দর সম্পর্ক, সহাবস্থান ও সম্প্রীতিই কাম্য। এর অন্যথা হলেই সামাজিক অস্থিরতা বাড়ে, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তাই দেশপ্রেমিক সকল পক্ষেরই আরও সহনশীলতা ও সুবিবেচনাময় প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে। যে যে-দলই করুক না কেন, সবাই এ মাটির সন্তান। দলের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে গিয়ে একটি প্রাণেরও অবসান গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
প্যানেল/মো.