ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

ডিআইএর মন্থর গতি

প্রকাশিত: ২০:১৬, ১০ জুলাই ২০২৫

ডিআইএর মন্থর গতি

কয়েক বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়ম তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম চিহ্নিত করে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। অথচ এ বছরে মাত্র ৬৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তদন্ত করা হয়েছে। নানাভাবে সমালোচনার মুখে পড়ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুলিশখ্যাত ডিআইএ। তবে গতিহীন হওয়ার কারণ হিসেবে দেশে অস্থিরতা এবং মাঠ পর্যায়ে স্বাভাবিক অবস্থা না থাকার কথা বলেছেন দপ্তরের যুগ্ম পরিচালক। জাল সনদের শিক্ষকদের চাকরিতে বহাল রাখার মতো নিন্দনীয় অভিযোগও উঠেছে এ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। 
দীর্ঘদিন ধরে ডিআইএর কর্মকাণ্ড অনেকাংশেই লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল। ফলস্বরূপ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতায় চরম অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভুয়া এমপিওভুক্তি, অনুপস্থিত শিক্ষক, নিম্নমানের অবকাঠামো নির্মাণ কিংবা বরাদ্দের অপব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে। অথচ এসব ক্ষেত্রে ডিআইএর নিরীক্ষা কার্যক্রম যদি আরও তৎপর ও কার্যকর হতো, তাহলে অনেক অনিয়ম আগেই ধরা পড়ত এবং প্রতিকার সম্ভব হতো। বন্ধ হতো রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়। প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পর্যাপ্ত জনবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ঘাটতি। দেশে হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু সেই তুলনায় পরিদর্শন কর্মকর্তার সংখ্যা নগণ্য। অনেক সময় দেখা যায়, একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়, ফলে তা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে বিলম্ব ঘটায়। অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে নিরীক্ষার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন, যা প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতাকে করছে প্রশ্নবিদ্ধ। জানা যায়, গণ-অভ্যুত্থানের পরে দপ্তরের পরিচালক এবং যুগ্ম পরিচালক হয়েছেন একই কলেজের দুজন ব্যক্তি।  
দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান, সুষ্ঠু পরিচালনা এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নিয়েই দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এ দপ্তরে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি রিয়েল টাইম মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। যাতে অনলাইনে নিরীক্ষা প্রতিবেদন, অডিট ট্র্যাকিং এবং স্বয়ংক্রিয় ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে পরিদর্শকদের প্রশিক্ষণ, নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করাও জরুরি। জাতীয় শিক্ষানীতির লক্ষ্য পূরণে ডিআইএর কার্যক্রম আরও গতিশীল, প্রযুক্তিনির্ভর এবং স্বচ্ছ করা একান্ত প্রয়োজন। শক্তিশালী পরিদর্শন ও নিরীক্ষা ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা, মান এবং নৈতিকতা বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়।

প্যানেল/মো.

×