
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। ফলে পোশাক খাতে বড় প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের পণ্যে বিভিন্ন হারে শুল্কারোপ করে একযোগে চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ বিশ্ব বাজারে মূল প্রতিযোগী চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তানের নাম নেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের চিঠি অসম প্রতিযোগিতার ইঙ্গিত দেয়।
১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কাদেশ কার্যকর হওয়ার কথা। এটি কার্যকর হলে বাংলাদেশের পোশাকে শুল্ক দাঁড়াবে ৫১ শতাংশ। ট্রাম্প প্রশাসন গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৬০ দেশের পণ্য প্রবেশে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশসহ বিভিন্ন হারে শুল্কারোপের ঘোষণা দেয়। তখন বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের কথা বলা হয়, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। সে দিনই তিন মাসের জন্য দেশভিত্তিক বাড়তি শুল্ক স্থগিত করা হয়। সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণ বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে প্রায় ৮.৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যার ২০ শতাংশ তৈরি পোশাক। আরও রয়েছে জুতা, টেক্সটাইলসামগ্রী, ওষুধ ও বিভিন্ন কৃষিপণ্য। দেশটি থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে জাহাজের স্ক্র্যাপ, সয়াবিন বীজ, তুলা, এলপি গ্যাস, এয়্যারক্রাফটের যন্ত্রাংশ ইত্যাদি।
দেশের রপ্তানিকারকরা মনে করছেন, প্রথম দফা ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার পর গত প্রায় তিন মাসে বলার মতো অগ্রগতি সরকার দেখাতে পারেনি। শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষিতে সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না। শুল্কহার কমাতে ওয়াশিংটনকে রাজি করাতে লবিস্ট নিয়োগের অনুরোধও জানিয়েছেন তারা।
বড় ঝুঁকিতে রয়েছে ৮০১ রপ্তানি প্রতিষ্ঠান, যা শঙ্কা জাগাচ্ছে। বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে রপ্তানি করে। দ্রুত বিকল্প বাজার ধরাও সম্ভব নয়। এছাড়া বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনামের পণ্য ১৫-২৫ শতাংশ এগিয়ে থাকবে, তা মোকাবিলা করাও সম্ভব নয়। অন্যদিকে ভারত, পাকিস্তানের বেলায় কী হারে শুল্কারোপ হয়, সেটাও দেখার বিষয়। বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি মনে করছে, এখনই বাংলাদেশের ভয়ের কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনে অতিরিক্ত শুল্ক বসায় এবং ভারতকে ছাড় না দেয়। এছাড়া ব্রিকসের দেশগুলোর ওপর যদি ১০ শতাংশ অতিরিক্ত পাল্টা শুল্কারোপ করে, তাতেও বাংলাদেশের সমস্যা হবে না বরং ভালো হবে। সুতরাং বাংলাদেশের ভয় কম। এ তিন বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের রপ্তানির গতিপ্রকৃতি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এসব দেশের সমঝোতা না হলে দেশটি ভিয়েতনাম থেকে আমদানি কয়েক গুণ বাড়াবে, কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা নেই ভিয়েতনামের। ফলে চীন, ভারত ও ব্রিকসের রপ্তানি আদেশগুলো বাংলাদেশেও স্থানান্তরিত হতে পারে, যা খুবই যৌক্তিক। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপে মোটাদাগে কোনো সমস্যা হবে না, এমনটিই আমাদের বিশ্বাস। শুল্কছাড় নিয়ে ওয়াশিংটনে চলমান সমঝোতা আলোচনা থেকে ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় বাংলাদেশ।
প্যানেল/মো.